1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাগরের পানি বাড়লে বিপদ কার?

১৮ নভেম্বর ২০১৬

নাইজেরিয়ার বৃহত্তম শহর লাগোস সাগরের উপকূলে, সাগর থেকেই তার যত বিপদ৷ এর পরেও অবশ্য উঁচু পাথরের দেয়াল তুলে একটি লাক্সারি আবাসিক এলাকা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ তাতে শহরের গরিব এলাকাগুলোর সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না৷

ছবি: DW/L. M. Hami

সৈকত বরাবর এক সুবিশাল পাথরের দেয়াল, যা ইতিমধ্যেই প্রায় আট কিলোমিটার লম্বা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ লাগোসের উপকূলে যে নতুন ইকো অ্যাটলান্টিক সিটি তৈরি হচ্ছে, তাকে সুরক্ষিত করাই এ প্রাচীরের কাজ৷ ম্যানেজার ডেভিড ফ্রেম গোটা প্রকল্পটির বিকাশে সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ তিনি জানালেন, প্রাকারের কাজ অর্ধেক শেষ৷ সব মিলিয়ে লক্ষাধিক সিমেন্ট ব্লক ফেলে কৃত্রিম শহরাঞ্চলটিকে সুরক্ষিত করা হবে৷ সাউথ এনার্জিক্স নাইজেরিয়া লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ডেভিড ফ্রেম বলেন, ‘‘এক একটি সিমেন্ট ব্লকের ওজন পাঁচ টন৷ ওদের বিশেষ আকৃতির দরুণ ওরা পরস্পরের সঙ্গে ফিট করে যায়৷ ফলে ওরা আগ্রাসী ঢেউগুলোকে বাধা দিতে পারে৷''

এখন যেখানে পাথরের ব্লকগুলো স্তূপ করা হচ্ছে, একশ' বছর আগেও সেখানে ছিল বেলাভূমি৷ কিন্তু সাগরের পানির উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে৷ এখন আবার এলাকাটা বালি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে৷ এভাবে এক কোটি বর্গমিটার জমি পাওয়া যাবে, যার অধিকাংশ ইতিমধ্যেই প্লট করে বিক্রি করা হয়ে গেছে৷ এই নির্মাণকার্য থেকে কাছের ভিক্টোরিয়া আইল্যান্ড নামের শহরাঞ্চলটিও উপকৃত হচ্ছে – আগে এলাকাটি সাগরের গা ঘেঁষে ছিল৷ ডেভিড ফ্রেম বলেন, ‘‘আমরা জমি পুনরুদ্ধার করছি আর সেই সঙ্গে ভিক্টোরিয়া আইল্যান্ডকেও সুরক্ষিত করছি৷ এছাড়া আমরা শহরের প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করছি৷ এখানে শুধু বাণিজ্যিক এলাকাই নয়, আবাসিক এলাকাও সৃষ্টি হচ্ছে৷''

ইকো অ্যাটলান্টিক সিটি নামের এই লাক্সারি আবাসিক এলাকায় কালে আড়াই লাখ মানুষ বাস করবেন, আরো দেড় লাখ রোজ এখানে চাকরি করতে আসবেন৷ বিলিয়ন ডলার প্রকল্পটির অর্থায়ন করছেন বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা৷ বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহও বেসরকারি সংস্থাদের হাতে৷ তবে এখানকার বাড়ি বা ফ্ল্যাটগুলি শুধুমাত্র বিত্তশালীদের জন্য৷ তাই লাগোসকে এরই মধ্যে আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়সাধ্য শহরগুলোর মধ্যে ফেলা হয়৷ অবশ্য লাগোসের অন্যান্য এলাকার সমস্যাগুলো থেকেই যাচ্ছে: রাস্তায় মানুষের ভিড় ও যানজট; এমন সব বস্তি, যেখানে মানুষেরা জায়গার অভাবে জলের ওপর খুঁটি গেড়ে বাস করছেন৷

সোনি আলাকিয়ার পরিবারের লোকজন বহু পুরুষ ধরে এ ধরনের একটি বস্তিতে বাস করছেন – উপকূলেই, পরিকল্পিত ইকো অ্যাটলান্টিক সিটির কিছুটা পুবে৷ ইয়োরুবার বাসিন্দাসোনি আলাকিয়া বলেন, ‘‘আগে এখানে সর্বত্র বাড়ি ছিল৷ ঐ ওদিকে, যেখানে এখন সাগরের জল, ওখান দিয়ে একটা রাস্তা চলে গিয়েছিল৷ কিন্তু তারপর পানি বাড়তেই থাকে৷'' সাগরের জলে বাঁধ দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য এখানকার বাসিন্দাদের নেই৷ কাজেই ঝড়জলে সাগরের বান আরো বেশি জমি খেয়ে ফেলে, বাড়িঘর নষ্ট করে৷ কয়েক কিলোমিটার দূরের মেগাপ্রকল্পটির কারণে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে, বলে এখানকার বাসিন্দাদের বদ্ধমূল ধারণা৷

মেরিন ইকোলজিস্ট আকো আমাদি-র মতে, এটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন উপকূলগুলির মধ্যে একটি৷ অ্যাটলান্টিক সিটির মেগাপ্রকল্পটির ফলে ভূমিক্ষয় যে আরো ত্বরাণ্বিত হয়েছে, তার প্রমাণ আছে, এমনই ধারণা তাঁর৷ আমাদি বলেন, ‘‘আমরা কিছু কিছু জিনিস দেখছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কারণ খুঁজে পাইনি৷ ভূমিক্ষয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে, কিন্তু তার কার্যকারণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করা হয়নি৷ এখানে কী ঘটছে, তা বোঝার জন্য পটভূমিটা আরো ভালোভাবে বোঝা দরকার৷ আমরা প্রতিবছরই দেখছি, এখানে যারা বাস করেন, তাদের কীভাবে আরো সরে যেতে, পিছিয়ে যেতে হচ্ছে৷ তাদের বাড়িঘর, ধনসম্পত্তি বিনষ্ট হচ্ছে – কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর কোনো সমাধান নেই৷''

ম্যানেজার ডেভিড ফ্রেমের ধারণা, ইকো অ্যাটলান্টিক সিটি যে লাগোসের অন্যান্য শহরাঞ্চলে ভূমিক্ষয় বাড়িয়েছে, তা ঠিক নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘নাইজেরিয়ার গোটা উপকূলই ব্যাপক ভূমিক্ষয়ের শিকার হচ্ছে৷ স্বভাবতই এটা একটা সমস্যা৷ আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা শহরের বাণিজ্যিক এলাকাটিকে সুরক্ষিত করছি৷ কিন্তু গোটা শহরকে সুরক্ষিত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷''

গবেষকদের ধারণা, আগামী ১০০ বছরে সাগরের পানি বাড়বে আরো এক মিটার৷ সেই সঙ্গে লাগোসও বেড়ে চলেছে৷ অথচ সময় আসছে ফুরিয়ে...৷

আদ্রিয়ান ক্রিশ/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ