পানি দূষণের অন্যতম কারণ নদীনালা, সমুদ্রে টন টন আবর্জনা নিক্ষেপ৷ সমুদ্রের প্লাস্টিক আবর্জনা দূর করার উপায় বের করেছেন ১৯ বছর বয়সি ডাচ বালক বোয়ান স্লাট৷ এর ফলে কেবল পরিবেশ রক্ষাই হবে না৷ কাজে লাগানো যাবে ঐ প্লাস্টিককে৷
বিজ্ঞাপন
সাগরে প্লাস্টিক আবর্জনার কারণে সামুদ্রিক জীবদের প্রাণহানি হচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে খাদ্য শৃঙ্খল, আবর্জনায় আটকে মানুষের হাতে ধরা পড়ছে শুশুক ও তিমি৷ পর্যটন ও মৎস খাতে ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা৷
স্লাটের পরিকল্পনা হলো ভাসমান দুটি বাহু তৈরি করা হবে, যাদের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার এবং সমুদ্রের মেঝেতে এটিকে ‘ভি’ আকৃতিতে প্রতিস্থাপন করা হবে৷ এই বাহুতে আটকে যাবে শক্ত প্লাস্টিক৷ স্রোতের কারণে ভি আকৃতিতে খুই সহজেই আটকে যাবে এগুলো৷ এর ফলে ভি প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৩ হাজার ঘনমিটার প্লাস্টিক জমা হবে৷ আর এগুলোকে একটি জাহাজের সাহায্যে প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা করা হবে৷
গ্রিসে স্কুবা ডাইভিং করার সময় এই পরিকল্পনা মাথায় আসে স্লাটের৷ সে জানায়, ‘‘সাগরের নীচে মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণই বেশি ছিল৷’’ ২০১২ সালের শেষে জনসমক্ষে তার এই পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম হাজির হয় স্লাট৷ এখন বিশ্বের নানা প্রান্তের একশ জন মানুষ নিয়ে গবেষণার কাজটি পরিচালনা করছে সে৷ তবে এই গবেষণায় অনেক বিজ্ঞানীর রোষের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে৷
বুড়িগঙ্গায় দূষণ: শত্রু কারা কারা?
২২শে মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস৷ সবার কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই দিনটি উদযাপিত হয়৷ অথচ বিশ্বে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে পানির সরবরাহ৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণ৷ ঠিক যেমনটা ঘটছে বুড়িগঙ্গা নদীতে...
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী
একসময় মহানগরীর প্রাণ হিসেবে গণ্য হতো বুড়িগঙ্গা নদী৷ কিন্তু এই শহরের শিল্প আর মানব বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে নির্গমনের ফলে নদীটি পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে৷ এই ছবিটি শহরের বাবুবাজার সেতু থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নোংরা গন্ধযুক্ত পানি
ব্যবহারের অনুপোযোগী হলেও মানুষের হাত-পা বাঁধা৷ তাই বুড়িগঙ্গা নদীর নোংরা, গন্ধযুক্ত পানির ওপর দিয়েই খেয়াপার হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব মানুষের বাস
ঢাকার এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় নদীর ওপারের কেরানীগঞ্জ এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি৷ ছবিটি সদরঘাট এলাকা থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ
বুড়িগঙ্গা আজ যেন সত্যিই বুড়ি হয়ে গেছে৷ নদীতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে বুড়িগঙ্গার পানির রং এখন কুচকুচে কালো, আর দুর্গন্ধযুক্ত৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের কারণে বেড়েছে ঘনত্ব
বুড়িগঙ্গার দূষিত পানির উপর দিয়ে জাহাজ চলার পরের দৃশ্য এটি৷ কি ভয়াবহ! আসলে দূষণের কারণে পানির ঘনত্ব বেড়ে গেছে বুড়িগঙ্গার৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদীতে লঞ্চ চলাচল
দূষণের এই ভয়াবহ মাত্রার পরও বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে চলছে লঞ্চ৷ জিনিস-পত্র পারাপার তো বটেই, নদী পথে যে এখনও পার হচ্ছে মানুষ৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার
বুড়িগঙ্গার পানিতে রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা৷ তাঁদের কি আর কোনো উপায় নেই? তাঁরা কি আদৌ জানেন এর পরিবেশগত প্রভাব? সরকারই বা নিরব কেন?
ছবি: DW/M. Mamun
ধোপাদেরও প্রয়োজন নদী
বুড়িগঙ্গার দূষিত জলেই কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত ধোপারা৷ এ সব কাপড়ের বেশিরভাগই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত বিছানার চাদর, ডাক্তারদের অ্যাপ্রন, অপারেশন থিয়েটার বা ওটি-তে পড়ার ড্রেস ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ধোয়া কাপড়
বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত জলে ধোয়া কাপড় এবার মেলে দেওয়া হয়েছে৷ নদীর পাড়েই শুকানো হচ্ছে এগুলি৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্জ্য মিশছে সরাসরি
ঢাকা শহরের সুয়ারেজের লাইন থেকে সরাসরি বর্জ্য মিশছে বুড়িগঙ্গা নদীর জলে৷ এমন দশা চলতে থাকলে অচিরেই যে অন্ধকার নেমে আসবে – তা বলাই বাহুল্য৷ শহরের বাবুবাজার সেতুর নীচ থেকে তোলা এ ছবিটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি
বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি শিল্পর বর্জ্য৷ ঢাকার হাজারীবাগে বেশ কিছু ট্যানারি শিল্প থাকলেও কারুরই নেই বর্জ্য শোধনাগার৷ তাই এ সব ট্যানারির রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি গিয়ে মিলে বুড়িগঙ্গায়৷ গত এক যুগ ধরে ঢাকার বাইরে ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা জায়গা দেওয়া হলেও, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যানারি মালিরা কারখানাগুলো স্থানান্তর করছেন না৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুধু দূষণই নয়...
শুধু দূষণেই থেমে নেই বুড়িগঙ্গা৷ আছে দখলও৷ দূষণ আর দখলে থেমে যেতে বসেছে বুড়িগঙ্গার গতিপথ৷ কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা যেন এখন মরা খাল!
ছবি: DW/M. Mamun
আর এক শত্রু প্লাস্টিক
শিল্প আর মানব বর্জ্য ছাড়াও বুড়িগঙ্গা দূষণের আরেক অংশীদার প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য৷ প্রতিদিন প্রচুর প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য মিশছে বুড়িঙ্গার জলে৷ এ ছবিটি বাদামতলী থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
অনেকেই বলেছেন তার এই পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়৷ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে পরিকল্পনাটি কাজের লাগানোর আগে তিন চার বছর ধরে একটি পাইলট প্রকল্প করে দেখতে চায় স্লাট৷ এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ২০ লাখ ডলার৷ আর এজন্য ওয়েবসাইটে একটি তহবিল খুলেছে সে৷ একশ দিনের মধ্যে এই তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে৷ মাত্র ৩২ দিনেই তহবিলে জমা হয়েছে ১০ লাখ মার্কিন ডলার৷
১০ বছরের মধ্যে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা প্লাস্টিকের প্রায় অর্ধেক সে তুলে আনতে পারবে বলে আশা করছে৷ সমুদ্র থেকে সাধারণ প্রক্রিয়ায় আবর্জনা অপসারণের চেয়ে তার পদ্ধতি হাজার গুন দ্রুত কাজ করবে বলে জানায় স্লাট৷ তার মতে এই পন্থা কেবল দ্রুতই নয়, সস্তাও বটে৷
স্লাট এটাও স্বীকার করে তার বয়স মাত্র ১৯ বছর৷ কিন্তু ওর সাথে যারা কাজ করছেন তারা বয়সে বড় এবং অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন৷ তাদের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগছে৷
তবে মানুষ যদি সাগরে প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ না করে তবে এই প্রক্রিয়া সবসময়ই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানায় স্লাট৷