ইঞ্জিন খারাপ হয়ে সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো নৌকা থেকে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করল ভারত। তাদের এখন বাংলাদেশে পাঠাতে চায় দিল্লি।
বিজ্ঞাপন
অবশেষে উদ্ধার পেলেন সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো রোহিঙ্গারা। ভারতীয় কোস্ট গার্ডের দুইটি জাহাজ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেছে। তবে নৌকার আট যাত্রী মারা গেছেন। একজন নিখোঁজ।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ''আমাদের কাছে খবর আসে গত ১১ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা-ভর্তি একটি নৌকো ছাড়ে। পরে তার ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায়। সেই খবর পেয়ে কোস্ট গার্ডের দুইটি জাহাজ পাঠানো হয়। নৌকায় ৬৪ জন নারী ছিলেন, তার মধ্যে আটজনের বয়স কম। ২৬ জন পুরুষ। যাত্রীদের মধ্যে আটজন মারা গেছেন। একজন নিখোঁজ।''
অনুরাগ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভারত ওই রোহিঙ্গাদের দেশে রাখতে চায় না। বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়। তিনি জানিয়েছেন, ''নৌকার ৪৭ জন যাত্রীর কাছে ইউনাইটেড নেশন, হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস(ইউএনএইচসিআর)-এর পরিচয়পত্র ছিল। তাতে লেখা, তাঁরা মিয়ানমার থেকে ছিন্নমূল হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা চলছে।''
নাগরিকত্ব এবং রাষ্ট্রহীন মানুষের ঠিকানা
বিশ্বে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ দেশহীন৷ বঞ্চিত মৌলিক অধিকার থেকে৷ টিকে আছে কোনোরকম৷ চলুন দেখি, কোথায় আছে ঠিকানহীন মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
বাংলাদেশ/মিয়ানমার
১৯৮২ সালে বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাশ হয়৷ আর তাতেই নাগরিকত্ব হারায় মুসলিম প্রধান রোহিঙ্গারা৷ জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন৷ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় মানবিক বাংলাদেশ৷ জনসংখ্যার চাপে থাকা ছোট্ট দেশটিতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
আইভরি কোস্ট
ছয় লাখ ৯২ হাজার ঠিকানা বিহীন মানুষকে ঠাঁই দিয়েছে আইভরি কোস্ট৷ বুরকিনা ফাসো, মালি, ঘানা থেকে এই লোকগুলো এসছে আইভরি কোস্টে৷ দেশটির কফি এবং তুলা চাষের সঙ্গে জড়িয়ে কোনোরকম দিন যাপন করছে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষ৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিদেশি নাগরিক৷ যারা এখন বাস্তুচ্যুত৷
ছবি: Benoit Matsha-Carpentier/AFP/Getty Image
থাইল্যান্ড
চার লাখ ৭৯ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষের বসতি থাইল্যান্ডে৷ পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী ইয়াও, হ্যামং এবং কারেন সম্প্রদায়ের মানুষ এরা৷ মিয়ানমার এবং লাওস সীমান্তবর্তী পর্বত এলাকায় তাদের অস্থায়ী আবাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
ইস্তোনিয়া/লাটভিয়া
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বাল্টিক রাষ্ট্র গঠন হলে, কপাল পোড়ে অন্তত দুই লাখেরও বেশি মানুষের৷ কারণ তাদের আর কোনো ঠিকানা নেই, কোনো বসতি নেই৷ তাদের দুই লাখ ২৫ হাজার আছেন লাটভিয়াতে আর ৭৮ হাজার আছেন ইস্তোনিয়ায়৷
ছবি: Reuters/I. Kalnins
সিরিয়া
১৯৬২ সালের কথা৷ আরবকরণের প্রক্রিয়ায় বলি হয়ে, নাগরিকত্ব হারান কুর্দরা৷ গৃহযুদ্ধের আগে অন্তত তিন লাখ কুর্দ হয়ে পড়ে দেশহীন৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, এখনও সিরিয়ায় নাগরিকসুবিধা বঞ্চিত হয়ে বাস করছে ১ লাখ ৬০ হাজার কুর্দ৷ অনেকে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/M. Abu Ghosh
কুয়েত
১৯৬১ সালে স্বাধীনতা এলেও নাগরিক স্বীকৃতি জোটেনি যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত বেদুঈনদের৷ জাতিসংঘের তথ্য মতে, ৯২ হাজার বেদুঈন আছে কুয়েতে৷ যারা বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চাকরির মতো নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত৷
ছবি: AP
ডমিনিকান রিপাবলিক
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে, ২০১৩ সালে জাতীয়তা বিষয়ক আইনে পরিবর্তন আনার পর, আদালত থেকে রুল জারি করা হয়৷ আর তাতেই অনেকেই হয়ে যান দেশহীন৷ এমনকি, হাইতি থেকে আসা অনেক মানুষ ডমিনিকে জন্ম নিলেও মেলেনি নাগরিকত্ব৷ জাতিসংঘের ২০১৫ সালের হিসেব বলছে, এখানে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইরাক
নাগরিক সুযোগ বঞ্চিত সাড়ে ৪৭ হাজার মানুষের আবাস ইরাক৷ এদের মধ্যে আছেন, ঐতিহাসিকভাবে ইরাক-ইরান সীমান্তে বসবাসকারী কুর্দ, ফিলিস্তিনের শরণার্থী আর বেদুঈনরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইউরোপ
ভারতীয় বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রোমা৷ এই সম্প্রদায়ের হাজার দশেক মানুষের বাস, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে৷ তারাও আছেন নাগরিকত্ব সংকটে৷ চেকোশ্লাভাকিয়া ও যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে গেলে, তাদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় নতুন রাষ্ট্র৷ কসভো আর বসনিয়ায় ঠাঁই নেয়া রোমারাও যুদ্ধের কারণে পরিচয় সংকটে পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কলম্বিয়া
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে অনেক মানুষ পাড়ি জমান কলম্বিয়ায়৷ যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে অন্তত ২৫ হাজার শিশু৷ তারাও আছে পরিচয় সংকটে৷ কারণ, কলম্বিয়া নাগরিকত্ব পেতে বাবা-মায়ের মধ্যে একজনের সে দেশের নাগরিকত্ব থাকতে হয়৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
10 ছবি1 | 10
বাংলাদেশ গত সোমবার জানায়, কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোনো নৌকা ছেড়েছে, এমন খবর সরকারের কাছে নেই। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি ওই রোহিঙ্গাদের নেবে? বাংলাদেশ না নিলে তাঁরা কোথায় আশ্রয় পাবেন? ভারত কি তাঁদের আশ্রয় দেবে? এই সব বিষয়ে অনুরাগ কিছু জানাননি। এই রোহিঙ্গারা নৌকা করে কোথায় যাচ্ছিলেন, তাও জানা যায়নি।
কয়েকদিন আগেই ইউএনএইচসিআরের তরফে জানানো হয়েছিল, আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গা-ভর্তি নৌকা ইঞ্জিন খারাপ হয়ে বিপাকে পড়েছে। নৌকাটি সাগরে ইতস্তত ঘুরছে। যাত্রীদের পানীয় জল ও খাবারও শেষ। তাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে তারা আবেদন জানিয়েছিল, তারা যেন ওই রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে। তারপরই ভারত তাঁদের উদ্ধার করেছে।