গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল সাগর, মেক্সিকোর উপকূল – এই সবকিছুর সৌন্দর্য্য তুলে ধরা হয়েছে মিশন ব্লু নামক একটি তথ্যচিত্রে৷ সুপরিচিত ওশেনোগ্রাফার সিলভিয়া আর্লে ছবিগুলো তুলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্স ও কিছু মার্কিন থিয়েটারে শুক্রবার থেকে তথ্যচিত্রটি দেখানো হচ্ছে৷ এতে বিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখকদের চোখ দিয়ে সাগরের উপর দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অতিরিক্ত মৎস শিকার বিষয়গুলো দেখানো হয়েছে৷
তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন রবার্ট নিক্সন৷ সহ-পরিচালক ছিলেন ফিশার স্টিভেনস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই সিলভিয়ার এই চেষ্টার ফলে মানুষ যাতে সচেতন হয়৷ কেননা জীবনের বেশিরভাগ সময়টা তিনি কাটিয়েছেন সমুদ্রে৷''
সমুদ্রে তিমি শিকার
অ্যান্টার্কটিকে বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকার নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণার’ নামে তিমি শিকার অব্যাহত রেখেছে জাপান৷ তিমির বিলুপ্তি ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়া তাই বিষয়টি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে উত্থাপন করেছে৷
ছবি: cc-by-nc-sa3.0/guano
এখনও শিকার চলছে
যদিও ১৯৮৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রজাতির তিমি নিধন নিষিদ্ধ, তারপরও নরওয়ে, আইসল্যান্ড এবং জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো তিমি শিকার অব্যাহত রেখেছে৷ বিশেষ করে জাপানের দাবি, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তারা তিমি শিকার করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপন্ন প্রজাতি
২৭ বছর আগে তিমি নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই প্রাণীর সংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে৷ তবে নীল তিমি, ‘ফিন’ তিমির মতো কিছু প্রজাতির সংখ্যা এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় পৌঁছেছে৷ সামুদ্রিক তিমি ৩৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ১৯০ টন অবধি ওজনের হতে পারে৷
ছবি: DW
বিচারের মুখোমুখি তিমি শিকার
গত ২০ বছর ধরে কূটনৈতিক পন্থায় জাপানকে তিমি শিকার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে অস্ট্রেলিয়া৷ এখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে)৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জাপানি ঐতিহ্য
জাপানে দীর্ঘদিন ধরেই খাবার টেবিলে তিমির মাংসের উপস্থিতি ছিল৷ বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বীপবাসী তিমির মাংসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল৷ বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং ক্যান্টিনে তিমির মাংসের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল কেননা তা গরুর মাংসের চেয়ে সস্তা ছিল৷ তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে৷ জাপানে যে পরিমাণ মাংসের প্রয়োজন হয়, তার মাত্র এক শতাংশ এখন তিমির মাংস৷
ছবি: gemeinfrei
কুকুরের খাবার
জাপানের গুদামে সাত হাজার টনের বেশি তিমির মাংস রয়েছে৷ ক্রেতা কমে যাওয়ায় এক জাপানি প্রতিষ্ঠান তিমির মাংস দিয়ে কুকুরের খাবার প্রস্তুত করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে প্রতিষ্ঠানটি তিমির মাংস দিয়ে কুকুরের খাবার তৈরির বিষয়টি বাদ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপানের অবাধ্যতা
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও অনেক জাপানি এখনও তিমি শিকারকে সমর্থন করছে এবং উল্টো গ্রিনপিসের মতো সংগঠনগুলোর বিরোধিতা করছে৷ জাপান সরকার আন্তর্জাতিক চাপ অগ্রাহ্য করে তিমি শিকার কর্মসূচিতে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করছে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়
নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আইসল্যান্ড এবং নরওয়েও তিমি শিকার কর্মসূচি পরিচালনা করছে৷ দেশ দুটি তিমি শিকার বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা মানার চেষ্টা করছে না৷ চলতি মাসের শুরুতে আইসল্যান্ডের মাছ ধরার জাহাজ ‘ফিন’ তিমি শিকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে৷ এসব তিমির মাংস জাপানে বিক্রি করা হবে৷
ছবি: picture-alliance / dpa
বৈধভাবে তিমি শিকার
রাশিয়ার চুকচি এবং ক্যানাডার ইনুইটদের মতো আদিবাসী গোষ্ঠীর এখনো তিমি শিকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি রয়েছে৷ তবে তারা তা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে করতে পারবে না৷ এসব মানুষের কাছে তিমি শিকার ঐতিহ্যের বিষয় যা গত কয়েকশ বছর ধরে চালু রয়েছে৷ তিমি তাদের মাংস, তেল এবং হারের জোগান দেয় এবং এসবই আদিবাসীরা ব্যবহার করে৷
ছবি: picture-alliance/empics
পরিবেশবাদীদের উদ্যোগ
তিমি শিকার নিষিদ্ধে পরিবেশবাদীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন৷ তারা এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কয়েক দশক ধরে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন৷ ‘সি সেপার্ড’ নামক সংগঠনটি তিমি রক্ষায় তাদের বিতর্কিত এবং আগ্রাসী কর্মসূচির জন্য পরিচিতি পেয়েছে৷
ছবি: cc-by-nc-sa3.0/guano
তিমি দেখা
অনেক দেশ এখন তিমি শিকার থেকে সরে এসে তিমি দেখা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ জাপান এবং নরওয়ের অনেক সাবেক তিমি শিকারি এখন তাদের অভিজ্ঞতা পর্যটকদের জানিয়ে অর্থ আয় করছেন৷ খাবারের টেবিলের বদলে সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো তিমি দেখার প্রতি জাপানিদের আগ্রহও বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/Robert Harding
10 ছবি1 | 10
স্টিভেনস একজন অভিনেতা এবং প্রযোজক, যিনি ২০১০ সালে তাঁর তথ্যচিত্র দ্য কোভ-এর জন্য অস্কার জিতেছিলেন৷ ঐ তথ্যচিত্রের বিষয় ছিল ডলফিন শিকার৷ ৪ বছর আগে গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক এবং নীতি নির্ধারকদের নিয়ে গিয়ে শ্যুটিং করেছিলেন তিনি৷
মিশন ব্লু'তে নিউজার্সি ও ফ্লোরিডার উপকূলেরও কিছু চিত্র রয়েছে৷ সিলভিয়াকে নিয়ে এসব উপকূলে ঘুরে বেড়িয়েছেন স্টিভেনস৷ গল্পের আকারে তার ছোটবেলা থেকে মেরিন বায়োলজিস্ট হিসেবে গড়ে ওঠার কাহিনি উঠে এসেছে তথ্যচিত্রে৷ ৭৮ বছর বয়সি সিলভিয়া এ পর্যন্ত ১০০টি সমুদ্র বিষয়ক গবেষণা করেছেন৷ আর সমুদ্র তলদেশে যে কয় হাজার ঘণ্টা কাটিয়েছেন তার হিসেব নেই৷
৯০ মিনিটের এই তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য স্টিভেনস ৭০০ ঘণ্টা ফুটেজ তুলেছেন৷ তাঁর আশা মিশন ব্লু দেখে মানুষ সমুদ্রের প্রতি তার আচরণের পরিবর্তন করবেন এবং সমুদ্র রক্ষায় পদক্ষেপ নেবেন৷ তিনি জানান এই ডকুমেন্টারির মাধ্যমে মানুষ একইসাথে আনন্দ ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন৷