সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্তিতে ফেসবুকে অনেকের জিজ্ঞাসা, ‘‘কবে পাব বিচার?’’ এ সংক্রান্ত একটি ব্যানার কভার ফটো হিসেবে ব্যবহার করছেন বহু মানুষ৷ অন্যদিকে বিচারের দাবিতে রাজপথে আবারো সমবেত জনতা৷
বিজ্ঞাপন
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিজেদের ভাড়া বাসার বেডরুমে খুন হন সাংবাদিক সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ধরা পড়েনি সাংবাদিক দম্পতির খুনিরা৷ এমনকি পুলিশ এবং ব়্যাব এখনও জানাতে পারেনি খুনের কারণ৷ তাদের তদন্তে গাফেলতির অভিযোগ এনেছে সাংবাদিক দম্পতির পরিবারের সদস্যরা৷
সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সরব অনেকেই৷ জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে এই বিষয়ে সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানার নিবন্ধের শিরোনাম, ‘‘সাগর-রুনি হত্যার ৭৩২তম দিন আজ৷ প্রশাসনিক অক্ষমতায় উদ্বিগ্ন আমরা!''
একসময় সামহয়্যার ইন ব্লগে নিয়মিত লিখতেন সাগর সরওয়ার৷ সস্ত্রীক হত্যাকাণ্ডের শিকার এই তরুণ সাংবাদিকের স্মরণে আজও বিশেষ ব্যানার রয়েছে ব্লগ সাইটটির প্রথম পাতায়৷ সেখানে দিনগোনা হচ্ছে৷ জানা লিখেছেন, ‘‘এখনও অন্ধকারেই আমরা!!!! আমরা উদ্বিগ্ন, আমরা লজ্জিত৷ তবুও লক্ষ লক্ষ চোখ খোলা রেখেছি এই আমরাই৷ সত্য উদ্ঘাটন এবং ন্যায় বিচার হতেই হবে.... হবেই হবে...৷''
কেন খুন হয়েছেন সাগর, রুনি?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে৷ কিন্তু আজও নিহতের পরিবার, শুভানুধ্যায়ী আর সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারলো না, কেন এই হত্যাকাণ্ড? এই বিষয়ে ছবিঘর দেখুন এখানে:
ছবি: DW
সেই কালোরাত
২০১২ সালের এগারোই ফেব্রুয়ারি৷ সেদিন খুব ভোরবেলা জানা গিয়েছিল, ঢাকায় নিজের ভাড়া বাসায় খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ একই ফ্ল্যাটে থাকলেও প্রাণে বেঁচে যান তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘ৷
ছবি: dapd
সাগর সরওয়ার
দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করার পর ২০১১ সালে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাগর সরওয়ার (ডানে)৷ সর্বশেষ সেই টেলিভিশন চ্যানেলেই কাজ করেছেন তিনি৷ ২০১২ সালের দশই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কাজ থেকে বাসায় ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুন হন সাগর৷
ছবি: DW
মেহেরুন রুনি
একাধিক দৈনিকে কাজ করার পর কয়েক বছর আগে টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় কাজ শুরু করেন মেহেরুন রুনি (বামে)৷ মাঝে স্বামীর সঙ্গে বছর দেড়েক জার্মানিতে কাটিয়েছেন তিনি৷ এরপর ২০১১ সালে আবারো ফিরে যান নিজের কর্মস্থলে৷
ছবি: DW
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার!
১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন৷ বলাবাহুল্য, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি৷
ছবি: DW
সাংবাদিকদের আন্দোলন
বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও সাগর-রুনি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ঘোষণা প্রদান করে সব সংগঠন৷ খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ
সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গর্জে ওঠে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিরা৷ জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW
ব্লগারদের প্রতিরোধ
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের পাশাপাশি ব্লগাররা এই দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজপথে নামে৷ গত বছর এই ইস্যুতে ব্লগ ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে এখনো রয়েছে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্যানার৷
ছবি: DW
রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজপথে ব্লগারদের সক্রিয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকাসহ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ইত্যাদি ইস্যুতে ব্লগ লিখে ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স অ্যাওয়ার্ড জয় করে আবু সুফিয়ানের বাংলা ব্লগ৷ ছবিতে আন্দোলনরত আবু সুফিয়ান৷
ছবি: DW
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাটকীয় ঘোষণা
গত অক্টোবর মাসে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান৷ বাকি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় গত সপ্তাহে৷ ব়্যাব গ্রেপ্তারকৃতদের বলছে ‘সন্দেহভাজন’৷ আর পরিবার মনে করছে, এদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কার্যত ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক তদন্ত চান পরিবার
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এক বছর হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ ধরা পড়েনি মূল অপরাধীরা৷ তাই তাদের পরিবার এখন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছেন৷ রুনির ভাই নওশের রোমান জানিয়েছেন, তারা (ব়্যাব) তদন্তের চেয়ে হয়রানি করতে বেশি উৎসাহী৷ সাগর রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
জজ মিয়া নাটক চান না সাগরের মা
সাগরের মা সালেহা মনির এখনও কাঁদেন৷ তাঁর দাবি হচ্ছে, প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে হবে৷ এক বছর পর দারোয়ান এনামুলকে গ্রেফতার তাঁর কাছে জজ মিয়া নাটক ছাড়া কিছুই নয়৷ তাঁর মতে, এক বছরে নানা টালবাহানা করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
11 ছবি1 | 11
সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের উদ্দেশ্যে সামহয়্যার ইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লিখেছেন, ‘‘ সমস্ত বাংলা ব্লগারের পক্ষ থেকে ‘মেঘ'-র জন্য ভালোবাসা৷''
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্তিতে ঢাকার কারওয়ান বাজারে মানববন্ধনের আহ্বান জানানো হয় একটি ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে৷ ‘‘দীর্ঘতম ৪৮ ঘণ্টা!'' শিরোনামের এই ইভেন্টের পাতায় লেখা হয়েছে, ‘‘দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে হেলাফেলায়৷ এতকিছু আমরা পারি, আর একটা বিচারের দাবিতে নিজেরা একাট্টা হয়ে থাকতে পারিনি, লেগে থাকতে পারিনি৷ এ লজ্জা আর কারোর না৷ কান্নাকাটির সময় দুই বছরে শেষ হয়েছে নিশ্চয়৷ আসুন এবার শক্ত চোয়ালে বিচারের দাবি নিয়ে দাঁড়াই৷''
ব্লগার আরিফ জেবতিক এই ইভেন্টের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মঙ্গলবার সকালে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সাগর-রুনি আমাদের মতোই দু'জন মানুষ ছিল৷ একরাতে তাঁরা দু'জন খুন হয়ে গেলে মেঘ নামের ছোট্টশিশুটি এখনও কী সীমাহীন নিঃসঙ্গতায় বেড়ে উঠছে৷ সাগর-রুনিকে ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু মেঘ নামের শিশুটি যাতে তাঁর পিতা-মাতা হত্যার বিচার পায়, এ জন্য কিছু সতীর্থ আজ বিকেলে কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে দাঁড়াবেন৷''
ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স' অ্যাওয়ার্ডজয়ী এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘কাল রাতে যদি আমি কিংবা আপনি খুন হয়ে যাই, তাহলে আমাদের সন্তানরা যাতে অন্তত ন্যায়বিচার পায়, এ জন্য আজকে বিকেলে যারা দাঁড়াবেন তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা আমার আপনার দায়...৷''
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে ইভেন্টটি সম্পন্ন হয়েছে৷ সাগর-রুনির কাছের মানুষ, বন্ধুরা ছাড়াও আরো অনেকে এতে অংশ নেন৷