1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড : র‍্যাবের ‘সক্ষমতা’ যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ

এম আবুল কালাম আজাদ
এম আবুল কালাম আজাদ
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

অনেকের সন্দেহ এই হত্যা মামলার কোনো তদন্তই হচ্ছে না৷ তাদের ধারণা তদন্ত হলে কোনো না কোনো অগ্রগতি অন্তত হতো ১১ বছরে৷

সাগর-রুনি হত্যার মামলার তদন্তে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ব়্যাব৷ছবি: DW

অনেকের সন্দেহ এই হত্যা মামলার কোনো তদন্তই হচ্ছে না৷ তাদের ধারণা তদন্ত হলে কোনো না কোনো অগ্রগতি অন্তত হতো ১১ বছরে৷

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ‘ইন্টেল’ সংগ্রহের সক্ষমতা আমাদের প্রায়ই স্তম্ভিত করে৷ বিশেষ করে জঙ্গি বিষয়ে অসাধারণ সব সাফল্য দেখিয়েছে র‍্যাব৷ জঙ্গিদের গোপন পরিকল্পনা আগেভাগেই জেনে তাদের আস্তানায় হানা দিয়ে অনেক নাশকতা রুখে দেয়ার দাবি এই বাহিনীর কাছে নতুন কিছু না৷ সাম্প্রতিক সময়েও এর উদাহরণ দেখা গেছে৷ সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের দেয়া চমকপ্রদ তথ্য আমাদের বার বারই তা মনে করিয়ে দেয়৷

অথচ এই একই বাহিনী সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার মামলার তদন্তে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে৷ ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে গুরুতর অনেক অপরাধের তদন্ত ও অপরাধীদের আটকে সাফল্য দেখাতে পারলেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তে দেখা যায় ভিন্ন এক চিত্র৷ আধুনিক প্রযুক্তি আর অপরাধ উদঘাটন প্রশিক্ষণ এ ক্ষেত্রে যেন কোনো কাজেই আসছে না৷ এক যুগেও তাই তারা এই হত্যার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি, যা র‍্যাবের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে৷

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে তাদের ভাড়া বাসায় খুন হওয়ার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ সে সময়ের অনেক মন্ত্রীও খুনিদের যত দ্রুত সম্ভব আটকের আশ্বাস দেন৷

৪৮ ঘণ্টার কাউন্টডাউন যেন এখনও চলছে!

শুরুতে ডিবি'র ব্যর্থতা

সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে দেয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বা ডিবিকে৷ কিন্তু দুই সপ্তাহেও ডিবি এই হত্যার ব্যাপারে কিছুই জানাতে না পারলে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়৷ এমতাবস্থায় এক রিটের পর তদন্তের অগ্রগতি জানাতে আদালত পুলিশকে আদেশ দিলে সে বছরের মার্চের ২১ ও ২২ তারিখে দুটি প্রতিবেদন জমা দেয় ডিবি৷

রিপোর্ট দেখে দুজন বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করেন৷ কারণ, তদন্তে ছিল না কোনো অগ্রগতি৷ ফলে ১৮ এপ্রিল তৎকালীন ডিবি মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম ও তদন্তকারী কর্মকর্তা রবিউল আলমকে আদালত তলব করে৷

তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় আদালত তাদের দীর্ঘ সময় জেরা করে৷ বিচারকদের ক্ষোভ মুখে মনিরুল তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করেন৷ অন্য সব মামলায় তদন্তে অগ্রগতি হলেও সাগর-রুনি হত্যা মামলায় কেন তা হয় না তার সদুত্তর সেদিন মনিরুল ইসলাম (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশের আইজি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান) আদালতকে জানাতে ব্যর্থ হোন৷

র‍্যাবের ব্যর্থতা হতাশার

ডিবির ব্যর্থতার কারণে আদালত তদন্তের ভার র‍্যাব-কে দেয়ার আদেশ করে৷ সবার প্রত্যাশা ছিল সন্ত্রাস দমনে গঠিত চৌকস বাহিনী র‍্যাব দ্রুতই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটন করবে৷ অন্যরা ব্যর্থ হলেও র‍্যাব পারবে বলে মানুষের বিশ্বাস ছিল৷

এক মাস, দুই মাস করে প্রায় ১১ বছর হতে চলেছে৷ অথচ র‍্যাবের কর্মকর্তারা নিজেরাই জানে না কবে তাদের তদন্ত্য শেষ হবে৷

এদিকে, তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা দেয়ার আদালতের নির্দেশ এই বাহিনী কতবার ব্যর্থ হয়েছে তা তারা নিজেরাও বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে৷ তবে তদন্ত শেষ হোক আর না হোক, র‍্যাব গত ১১ বছরে তদন্ত শেষ করার জন্য যতবার সময়ের আবেদন করেছে, আদালত ততোবারই তাদের সময় দিয়েছে৷

এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলেছবি: Private

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাস্যকর আশ্বাস

সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উৎঘাটন ও বিচারের দাবি করে আসছে সাংবাদিকরা৷ গত বছর তারা প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল৷ এবার তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নিকট জমা দেয়া স্মারকলিপিতে জানায়, ‘‘আমরা দেখেছি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বড় বড় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে৷ অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে৷ সাগর-রুনি হত্যার কোনো কূলকিনারা তারা করতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না৷’’

‘‘আমরা চেষ্টা করছি, এই খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনের৷ অনেক বছর তো হয়ে গেছে৷ আমরাও চাই এ রহস্য উন্মোচিত হোক৷ সাংবাদিক নেতাদেরও বলেছি, আপনাদের কাছেও যদি কোনো তথ্য থাকে, সেগুলো আমাদের জানালে আমরা সেটিও দেখবো,’’ সাংবাদিকদের কাছে দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য অনেকটা হাস্যকর হয়ে পড়েছে৷ বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন৷

তদন্ত নিয়ে সন্দেহ

এত দিনেও তদন্ত শেষ না করতে পারার কারণে মানুষ, বিশেষ করে সাংবাদিকের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে আর সেটা হলো সাগর-রুনির হত্যা মামলায় সত্যিকার অর্থে কোনো তদন্ত চলছে কিনা৷ অনেকে মনে করেন, তদন্ত হলে তো কোনো না কোনো অগ্রগতি হবে৷ ১১ বছরেও এই হত্যা সম্পর্কে কিছু জানা সম্ভব হবে তা তারা মানতে চান না৷ ফলে তাদের সন্দেহ দিনে দিনে ঘনিভূত হচ্ছে৷

মানুষের বিশ্বাস সরকার বা পুলিশ বাহিনী চাইলে যে কোনো অপরাধের রহস্য বের করতে সক্ষম৷ প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা তারা চাইছে কিনা৷ তাদের ধারণা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে এমন সব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত যাদের উম্মোচন করলে অনেকের বিপদ হবে৷ ফলে সেটা ধামাচাপা রাখাই ভালো৷ আর সে কারনেই হয়ত এই হত্যা রহস্য কোনো দিন জানা সম্ভব হবে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ