ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর তার নতুন রাজনৈতিক দলের নাম দিয়েছেন ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ'। নুর দলটির সদস্য সচিব হয়ে আহ্বায়ক করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবিরয়াকে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সকালে দলটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয় পল্টনের প্রিতম জামান টাওয়ারে নিজস্ব কার্যালয়ে। তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঘোষণা অনুষ্ঠান করতে চাইলেও অনুমতি পাননি। দলটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর তারা একটি শোভাযাত্রাও করে। দলটির স্লোগান হলো," জনতার অধিকার আমাদের অঙ্গীকার”।
দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। এর আগে তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম করতেন। গণফোরাম ছেড়ে নতুন এই দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন," গণফোরামের সাথে আমার তেমন কোনো মিল ছিল না। আমি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বকে সম্মান করতাম । কিন্তু যারা গণফোরামে ছিলেন, গণমুখী আন্দোলনের পক্ষে তাদের কাজ করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। একটা লিভিং রুম, অফিসের মধ্যে যে আন্দোলন তারা সেরকম ছিল। নুরের সাথে মিল হলো তারা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমিও তাই চাই। সে কারণেই তার দলে যুক্ত হয়েছি। আমাদের দলের লক্ষ্য হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।”
'আমাদের দলের লক্ষ্য হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা'
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"আওয়ামী লীগের এই সাজানো নির্বাচনে আমরা যাব না। অন্য দলের সঙ্গে মিলে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। একই সঙ্গে আমরা দলের সাংগঠনিক কাঠামো আরো শক্ত করার কাজে হাত দেব।”
নুরুল হক নুর জানান, আরো অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবেই যোগ দেবেন। এজন্য তারা একটি যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
তিনি বলেন,"আমাদের দলের মূল নীতি হলো গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার এবং জাতীয় স্বার্থ। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। যেসব রাজনৈতিক দল দেশের সংবিধান, আইন মেনে রাজনীতি করবে তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। জনগণের স্বার্থে যখন যে দলকে প্রয়োজন হবে তখন সেই দলের সঙ্গে আমরা ঐক্য বা জোট করব।”
'আমাদের দলের মূল নীতি হলো গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার এবং জাতীয় স্বার্থ'
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন,"এখন দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন গণআন্দোলন। দরকার অরাজনৈতিক নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। এটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। সরকার যদি রাজি হয় তাহলে তো ভালো। রাজি না হলে আমরা আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করব। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।”
রেজা কিবরিয়াকে দলের আহ্বায়ক করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"আমরা তাকে তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে পছন্দ করেছি। তিনি সুশিক্ষিত। আইএমএফ-এর মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে থাকায় দেশে এবং দেশের বাইরে আমাদের প্রহণযোগ্যতা বাড়বে।”
নির্বাচনি প্রচারণার কয়েকটি নীতিমালা
নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে ‘সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ প্রণয়ন করে৷ ছবিঘরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: Reuters
চাঁদা দেয়া যাবে না
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে উক্ত প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা উক্ত এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো চাঁদা বা অনুদান দেয়া বা দেয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন চলবে না
নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
পোস্টারের আকার
সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৬০X৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৩X১ মিটার হতে হবে এবং পোস্টারে বা ব্যানারে প্রার্থী তাঁর প্রতীক ও নিজের ছবি ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি বা প্রতীক ছাপাতে পারবেন না৷ তবে প্রার্থী কোনো নিবন্ধিত দলের মনোনীত হলে সেক্ষেত্রে তিনি কেবল তাঁর বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ছাপাতে পারবেন৷
ছবি: Reuters
যেখানে পোস্টার লাগানো যাবে না
কোনো প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি, সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনাসমূহ এবং বাস, ট্রাক, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ, রিক্সা কিংবা অন্য কোনো প্রকার যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাতে পারবেন না৷ তবে দেশের যে কোনো স্থানে এসব ঝুলানো বা টাঙানো যাবে৷
ছবি: Reuters
অন্যের পোস্টারে নয়
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদির উপর অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি লাগানো যাবে না এবং উক্ত পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন তথা বিকৃতি বা বিনষ্ট করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলিকপ্টার নয়
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ট্রাক, বাস, মোটর সাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে মিছিল বের করতে পারবেন না কিংবা কোনো শোডাউন করতে পারবেন না৷ প্রচারণাকাজে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না৷ তবে দলীয় প্রধানরা যাতায়াতের জন্য তা ব্যবহার করতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
ভয় দেখানো চলবে না
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে৷ তবে প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান পন্ড বা তাতে বাধা প্রদান বা ভীতিসঞ্চারমূলক কিছু করতে পারবে না৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
দেয়াললিখন নয়
দেয়ালে লিখে প্রচারণা চালানো যাবে না৷ কালি বা রং দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে দেয়াল ছাড়াও কোনো দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়কদ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অংকন করা যাবে না৷ প্রতীক হিসাবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
খাবার দেয়া যাবে না
নির্বাচনি ক্যাম্পে ভোটারদের কোনোরকম কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনো উপঢৌকন দেয়া যাবে না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
মসজিদ, মন্দিরে নয়
মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো নির্বাচনি প্রচারণা চালানো যাবে না৷ প্রচারণার সময় ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেয়া বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গবৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য দেয়া যাবে না৷
ছবি: Reuters/M.P. Hossain
মাইক ব্যবহারের নিয়ম
নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী কোনো যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নিয়ম না মানলে
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷ দলের ক্ষেত্রেও এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
12 ছবি1 | 12
৮৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণার সময় রেজা কিবরিয়া ছাড়াও নুরের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, আবু হানিফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নুরের নতুন দলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,"এখানে তরুণেরা আছেন। এটাকে আমার গুড অ্যাপ্রোচ বলে মনে হয়েছে। তারা যদি আধুনিক চিন্তাধারা নিয়ে এগোতে পারে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে তাহলে ভাল হবে। এখানে রেজা কিবরিয়া আছেন তিনি যেন কথায় কথায় দেশ ছেড়ে চলে না যান। তিনি খুবই শিক্ষিত লোক। এটা গুড চয়েস। এখন তাদের মাঠে নামতে হবে।”
'তারা যদি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে তাহলে ভালো হবে'
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনো মাধ্যমে নুরুল হক নুর দেশের মানুষের নজরে আসেন। এরপর ২০১৯ সালে তিনি ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইস্যুতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক দল গঠনের আগে তিনি ছাত্রদের জন্য ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠন করেন। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করতে গিয়ে নুর ১৭টি মামলার আসামি হয়েছেন। কমপক্ষে ১৯ বার হামলার শিকার হয়েছেন। ডাকসু ভিপি থাকাকলে তিনি ডাকসু ভবনেও হামলার শিকার হন।