1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার প্রশ্নের মুখে আদিবাসীদের ভবিষ্যৎ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে জমি দখলের জন্য এক আদিবাসীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ওই এলাকার আদিবাসীরা এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন৷

২০১৭ সালে রাঙামাটিতে আদিবাসীদের গ্রামে হামলার ছবি
আদিবাসীদের ভূমির দখল নিতে প্রায়ই তাদের ঘরবাড়িতে হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়৷ উপরে ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে হামলার ছবি দেখা যাচ্ছে৷ছবি: Anvil Chakma

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘‘শুধু সাতক্ষীরায় সম্প্রতি গাইবান্ধাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় আদিবাসীদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ এর প্রধান উদ্দেশ্য আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা৷ এটা ভূমিদস্যুরা যেমন করছেন, তেমনি সরকারি পর্যায়েও করা হচ্ছে৷ গত কয়েক বছরে এই প্রবণতা বেড়েছে৷’’

যেভাবে প্রাণ গেল নরেন্দ্র মুন্ডার

গত ১৯ আগস্ট সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ধুমঘাট আদিবাসী মুন্ডা পল্লীতে হামলা চালায় স্থানীয় ভূমিদস্যুরা৷ হামলায় নরেন্দ্র নাথ মুন্ডা নিহত হন৷ এই ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হলেও পুলিশ মূল হোতাদের এখনো গ্রেপ্তার করেনি৷ তাদের অভিযোগ-  মুন্ডাদের আট বিঘা জমি দখলের জন্য ওই হামলা চালানো হয়৷ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও প্রভাবশালীরা এর পেছনে আছে বলে জানান তারা৷

নিহত নরেন্দ্র নাথ মুন্ডার ছেলে সনাতন মুন্ডা বলেন, ‘‘১৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় রাশিদুল ও এবাদুলের নেতৃত্বে দুইশ'রও বেশি সন্ত্রাসী আমাদের পাড়ার ১০-১২টি বাড়ি ঘিরে ফেলে আক্রমণ চালায়৷ তারা আমাদের মারপিট ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে৷ এসময় বাইরের মাঠে আমার বাবাসহ চারজন ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করছিলেন৷ তাদের ওপরও হামলা চালায়৷ আমাদের ঘিরে হামলা চালানোর কারণে আমরা তাদের রক্ষায় এগিয়ে যেতে পারিনি৷সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালানোর পর তারা চলে গেলে আমরা মাঠে গিয়ে আমার বাবাসহ চারজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই৷ পরদিন ১৭ আগস্ট আমার বাবা মারা যান৷’’

সব জেনেও পুলিশ আসেনি

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘হামলা শুরুর পরই আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শুক্কুর আলিকে ফোন করি৷ কিন্তু তিনি আমাদের রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেননি৷ থানায় কয়েকবার ফোন করলেও পুলিশ আসেনি৷ পরে আমরা ৯৯৯-এ ফোন করলে যখন পুলিশ আসে ততক্ষণে হামলাকারীরা চলে গেছে৷ তারা ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা নিয়ে এই হামলা চালায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কয়েকটি পরিবারের আট বিঘা জমি দখলের জন্যই ওই হামলা চালানো হয়৷ এর আগেও তারা কয়েকবার জমি দখলের চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু পারেনি৷ এবার তারা তাই আরো বড় আকারের হামলা চালায়৷ তাদের সাথে আরো প্রভাবশালীরা আছে৷ তা না হলে পুলিশ বা চেয়ারম্যানকে হামলার খবর দেয়ার পরও তারা আসবে না কেন?’’

জমি দখল মূল উদ্দেশ্য

ওই এলাকায় দুটি পাড়া মিলে মুন্ডাদের ৩২টি পরিবার আছে৷ তাদের মধ্যে এক পাড়ার ১২টি পরিবার হামলার শিকার হয়েছে৷ ৩২টি পরিবারের প্রায় ৪০০ বিঘার মতো জমি আছে৷ ওই জমি দখলে ভূমিদস্যুরা সব সময়ই তৎপর৷ এরই মধ্যে ভূমিদস্যুরা ৫০ বিঘা জমির জাল দলিল তৈরি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ২০১৫ সাল থেকে তারা অপতৎপরতা শুরু করে৷ আর আগস্ট মাসে নরেন্দ্র নাথ মুন্ডাকে হত্যার আগে আরো তিনবার হামলা চালায়৷

মুন্ডাদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব গোপাল চন্দ্র মুন্ডা বলেন, ‘‘হামলার পর বাইরে পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হলেও আসলে আমরা আতঙ্কে আছি৷ কারণ, মূল হামলাকারীদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ আর তারা দীর্ঘদিনই আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এর আগে তারা ৫০ বিঘা জমির জাল দলিল করে দখল করে চাষ করেছিল৷ কিন্তু পরে আমরা সেটাকে জাল প্রমাণ করার পর তারা চাষ বন্ধ করে আমাদের চাষের ফসল কেটে নিয়ে যেতো৷ এখন তারা আমাদের ফসল কেটে নিয়ে যায় কিনা সেই আতঙ্কে আছি৷’’ তার কথা, ‘‘স্থানীয় প্রশাসন আমাদের পক্ষে নেই৷ তাই আমরা এখন সরকারের কাছে আমাদের রক্ষার আবেদন জানাচ্ছি৷’’

তবে শ্যামনগর থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ দাবি করেন যে, পুলিশ মুন্ডাদের নিরপত্তা দিতে কোনো কৃপণতা করছে না৷ খবর দেয়ার পরও পুলিশ না যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত সেখানে গেলেও হামলাকারীরা তার আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যায়৷ মামলা হওয়ার পর আমরা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি৷ তবে এর আগে বড় কোনো হামলা হয়নি৷ এটাই প্রথম৷ আর জমিজমা নিয়ে কোনো বিরোধ আছে কিনা আমার জানা নেই৷’’

চলছে আদিবাসী উচ্ছেদ

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘‘শুধু সমতলে নয়, পাহাড়েও আদিবাসীরা হামলা উচ্ছেদের মুখে আছে৷ আর এর পেছনে দুই ধরনের শক্তি কাজ বরছে৷ ভূমিদস্যুরা আদিবাসীদের ভূমি ব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে জাল দলিল করে হামলা, নির্যাতন ও হত্যা করে তাদের উচ্ছেদ করছে৷ আর সরকার উন্নয়নের নামে পার্ক, সাফারি পার্ক, ইকো পার্ক, পর্যটন স্পট, হোটেল-মোটেল করে আদিবাসীদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে৷’’

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংছবি: Sanjeeb Drong

তিনি বলেন, ‘‘সাতক্ষীরায় নরেন্দ্র মুন্ডাকে হত্যার আগে গাইবন্ধায় হত্যা করা হয়েছে৷ আরো আগে মধুপুরে, নওগাঁয় হত্যা করা হয়েছে৷ এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি৷ ফলে যে মেসেজ গেছে, তা হলো আদিবাসীদের হত্যা করলে কোনো বিচার হয় না৷ এখন এটা আরো বেড়ে গেছে৷’’

সর্বশেষ জনশুমারিতে দেশে আদিবাসীদের সংখ্যা বলা হচ্ছে মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ বা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ জন৷ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত তার ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি অফ আনপিপলিং অফ ইন্ডিজিনাস পিপলস: দ্য কেস অফ বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণা গ্রন্থে বলছেন, ‘‘২৭ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী মানুষের অনুপাত ছিল ৭৫ শতাংশ, এখন তা ৪৭ শতাংশ৷ গত তিন দশক ধরে ওই অঞ্চলে আদিবাসী কমছে আর বাঙালির সংখ্যা বাড়ছে৷ পাহাড়িরা হারিয়েছে ভূমি-বনাঞ্চল আর আমদানি করা সেটেলার বাঙালিরা দুর্বৃত্ত আমলা প্রশাসনের যোগসাজশে তা দখল করেছে৷’’

তিনি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, গত ৬৪ বছরে সমতলের ১০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই লাখ দুই হাজার ১৬৪ একর জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে, যার দাম প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷
সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘‘এই গবেষণা বেশ কয়েক বছর আগের৷ পরিস্থিতি এখন আরো খারাপ হয়েছে৷’’

আর মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘‘আদিবাসীদের উচ্ছেদের পিছনে রাজনৈতিক শক্তিও আছে৷ সাতক্ষীরার ঘটনায় আমরা রাজনৈতিক শক্তি পেছনে থাকার প্রমাণ পেয়েছি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ