বিজ্ঞান প্রযুক্তি
২২ জুন ২০১২সাতচল্লিশ মিলিয়ন বছর আগের কথা৷ জার্মানির ডার্মস্টাট শহর তো তখন শহর ছিল না৷ ছিল একখানা মস্ত বড় লেক৷ সেই লেক-এর মধ্যেই আগ্নেয়গিরি৷ সেই আদিম পৃথিবীতে একজোড়া কচ্ছপ জল থেকে ডাঙ্গায় সদ্য উঠেছিল৷ সে সময়টা বছরের সেই বিশেষ সময়, যখন কচ্ছপদের মিলনের ঋতু৷ সুতরাং জোড়া কচ্ছপ মিলনে ব্যস্ত৷ তখনই হঠাৎ লেকের আগ্নেয়গিরি থেকে তীব্র গ্যাস আর আগুন বেরিয়ে এল৷ জোড়া কচ্ছপ মারা পড়ল সেই আগুনে৷ তারপর তারা সেই সঙ্গমনিরত অবস্থাতেই চলে গেল মাটির তলায়৷ সেখানে তারা থেকে গেল সেভাবেই৷ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে অবশেষে ওরা ফসিল হয়ে গেল৷ আর সম্প্রতি ডার্মস্টাট শহরের কাছের বিখ্যাত মেসেল পিটে পাওয়া গেল তাদের সেই ফসিল হয়ে যাওয়া দেহ দুটি৷
গবেষকরা বলছেন, সেদিনের সেই আদিম পৃথিবীও যে আজকের মতই ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ কারণ? তাঁদের ব্যাখ্যা, আজও পূর্ব আফ্রিকায় এমন আগ্নেয়গিরি সহ লেকের দর্শন মেলে৷ আজও সেখানে এমন ঘটনা আকছার ঘটে যায়৷ সুতরাং, ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়৷ টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের প্রধান ড. ওয়ালটার জয়েস এই ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন, কয়েকশো বছর পরপর আগ্নেয়গিরি সম্বলিত লেক-এ এমন ঘটনা ঘটে থাকে৷ হঠাৎ করেই একদিন দেখা যায় লেকের গভীর থেকে ফোয়ারার মত উঠে আসছে তীব্রবেগে কার্বন ডাই অক্সাইডের বাষ্প৷ লেকের উপরিভাগটা তখন দেখায় সদ্য খোলা শ্যাম্পেনের বোতলের মত৷ আর সে সময়ে আশেপাশে যত প্রাণী থাকে তারা সকলে সেই গ্যাসের বিষ আর উত্তাপে পুড়ে মারা যায়৷ তেমনটাই ঘটেছিল এই দুই মিলনরত কচ্ছপ যুগলের ভাগ্যে৷
তো, ৪৭ মিলিয়ন বছর আগের এই বেচারা কচ্ছপ যুগলের নাম কী? বিজ্ঞানের পরিভাষার জবাব, আলিওচেলিস ক্রাসেসকুলপটা৷ এই প্রজাতির কচ্ছপদের আকার হত লম্বায় বিশ সেন্টিমিটারের মত৷ শুয়োরের মত নাকওলা এই প্রজাতির পুরুষ কচ্ছপদের চেয়ে মেয়ে কচ্ছপরা আকারে একটু বড়সড় হত৷ বহুকাল আগেই এরা এই গ্রহ থেকে বিলীন হয়ে গেছে৷ তবে তাদের নিকটতম আত্মীয়রা আজও রয়েছে৷ বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাদের নাম ক্যারেটোকেলিস ক্রাসেসকুলটা৷ আর এদের দেখতে পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়া আর পাপুয়া নিউগিনিতে৷
তা যাক৷ সেই আদিম পৃথিবীর কচ্ছপযুগলের ফসিল প্রমাণ করে দিল, প্রেম সেদিনও ছিল, আর আজও আছে৷
এসইউবি / জেএইচ (ডিপিএ, এপি)