1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাতদিন ধরে সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ আগস্ট ২০২৪

তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন খুলে দিয়েছে প্যান্ডোরার বাক্স। অভিযোগ উঠছে সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন সন্দীপ ঘোষ।
আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সাতদিন ধরে জেরা করছে সিবিআই। ছবি: Satyajit Shaw/DW

আরজি করের চিকিৎসক খুনের তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। তারা গত ছয় দিনে ৭৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সন্দীপকে। বৃহস্পতিবার ফের তলব পেয়ে হাজিরা দিয়েছেন তিনি। ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সন্দেহভাজন সাবেক অধ্যক্ষ অন্যান্য অভিযোগেও বিদ্ধ হচ্ছেন।

হাইকোর্টে মামলা

সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত দাবি করে বুধবার মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাকারী হাসপাতালের সাবেক ডেপুটি সুপার আখতার আলি। 

আখতার আদালতকে জানিয়েছেন, প্রায় দুই বছর আগে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি দমন শাখার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তার দাবি, "সন্দীপ দায়িত্বে আসার পর থেকে দুর্নীতি শুরু হয়। টাকা নিয়ে পড়ুয়াদের পাশ করানো হত। টাকা না দিলে চাপ তৈরি করা হত। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনও হয়েছে। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য পাচার করা হয়েছে।" 

বিদ্রোহ করায় আখতারকে স্বাস্থ্য ভবন বসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বদলি করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে। সন্দীপের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে ইতিমধ্যে সিট গঠন করেছে রাজ্য সরকার।  রাজ্য গঠিত সিট নিয়ে অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আখতারের আর্জি, আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করতে পারে ইডি। তার কাছে অনিয়ম সংক্রান্ত বহু নথি রয়েছে। এসব তিনি ইডিকে দিতে চান। 

আদালতের কাছে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছেন আখতার।

অনিয়মের অভিযোগ

কলেজের একটি পরীক্ষণাগার তৈরিতে প্রায় তিন কোটি টাকার বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ সন্দীপের বিরুদ্ধে। এই ধরনের পরীক্ষণাগার তৈরিতে এত টাকা প্রয়োজন কিনা, তা নিয়ে হাসপাতালের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। একই ধরনের পরীক্ষণাগার অন্যত্র তৈরিতে অনেক কম টাকা খরচ হলেও, আরজি করে এত বেশি কেন?

নিয়মের তোয়াক্কা না করে হাসপাতাল চত্বরে খাবারের স্টল, ক্যাফে তৈরির অনুমতি দেয়া হয় বলে অভিযোগ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে একটি ক্যাফে তৈরির দরপত্র ডাকায় স্বচ্ছতা ছিল না। একই সংস্থা তিনটি দরপত্র দিয়ে বরাত পেয়ে যায় বলে অভিযোগ।

কোভিড অতিমারীর সময় চড়া দামে ন্যাজাল অক্সিজিনেশন যন্ত্র কিনেছিল আরজি কর হাসপাতাল। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের থেকেও বেশি দামে এই সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। 

এর ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, অনিয়মের অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন তা খতিয়ে দেখা হয়নি?

সন্দীপ ঘোষের কার্যকালে নিয়োগ ও কাউন্সেলিং নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। স্নাতক ও স্নাতক স্তরে অনিয়ম হয়েছে বলে অনেকের দাবি। হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রভাবশালী সন্দীপ?

সন্দীপ ঘোষ যে প্রভাবশালী, তা অনেকেই বলছেন। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিও তার পর্যবেক্ষণে একথা বলেছেন।

সাবেক ডেপুটি সুপার আখতার আলির দাবি, "উনি প্রভাবশালী। বদলির নির্দেশ এলেও তা বদলে যেত। আরজি কর নিয়ে তোলপাড় ওঠার পর তাকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে পাঠানো হয়।” 

তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক অধ্যক্ষ। চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন তিনি। যদিও তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে প্রাইজ পোস্টিং দেয়া হয়। এর ফলে প্রভাবশালী তত্ত্ব আরও জোরালো হয়েছে। এখন তাকে স্বাস্থ্য দপ্তরে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক ডা. অংশুমান মিত্র ডি ডাবলিউকে বলেন, "সন্দীপ ঘোষের উপর উচ্চ মহলের আশীর্বাদ রয়েছে। রাজ্য পুলিশ তাকে এবং তার সিন্ডিকেটকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। সিবিআই কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে চলে। এদের মধ্যে কী সমীকরণ আছে, জানি না। তবে সন্দীপ তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বারে বারে। তাই তাকে আটক করার দাবি জানিয়েছি আমরা।"

আরজি করের ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করায় চিকিৎসক কুণাল সরকারকে তলব করেছিল কলকাতা পুলিশ। তিনি বলেন, "যেখানে আমরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে পারি, সেখানে আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারি, চালিত করতে পারি। এটা ভারতবর্ষের একটা বিরাট দুর্বলতা। সন্দীপ ঘোষ এটারই সুবিধা পাচ্ছেন।" 

‘সিবিআই সেরকম একটা শক্ত জমির উপর দাঁড়িয়ে নেই’

This browser does not support the audio element.

গ্রেপ্তারির দাবি

প্রতিদিন জনতার মিছিলে দাবি উঠছে, সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাকে দিনের পর দিন জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সিবিআই এখনো গ্রেপ্তার করেনি। কেন?

সিবিআইয়ের সাবেক যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাস সমাজ মাধ্যমে লিখেছেন, "যতদূর মনে হয়, এই কেসের অনেক ডালপালা আছে। তা না হলে প্রাক্তন অধ্যক্ষকে এতবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হত না।"

সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও, তার সঙ্গে চিকিৎসক খুনের কোনো যোগ আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আত্মহত্যার সংবাদ দেয়া, দেহ দেখার পর তাকে সংজ্ঞাহীন বলে পুলিশকে জানানো ইত্যাদি একাধিক প্রশ্নে সন্দেহের বৃত্তে রয়েছে সাবেক অধ্যক্ষের ভূমিকা।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই জানিয়েছে,ঘটনার পাঁচ দিন পর তারা তদন্তভার হাতে নেয়। এর মধ্যে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। তাই কি জোরালো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না সিবিআই?

ডা. সরকার বলেন, "আমার মনে হচ্ছে, সিবিআই সেরকম একটা শক্ত জমির উপর দাঁড়িয়ে নেই। সন্দীপ ঘোষ এই হত্যার সঙ্গে জড়িত, তা প্রমাণ করতে গেলে যে সাক্ষ্যপ্রমাণ দরকার, তা তদন্তকারীদের হাতে নেই।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ