1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্যোগবাংলাদেশ

সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকায় তিন লাখ প্রাণহানির শঙ্কা

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

রিখটার স্কেলে যদি সাত মাত্রার ভূমিকম্প হয়, সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে না ঢাকা৷ ধ্বসে পড়বে কয়েক হাজার ভবন, মৃত্যু হবে অন্তত দুই থেকে তিন লাখ মানুষের৷ এমনটাই মনে করছেন ভূমিকম্প বিশ্লেষকরা৷

অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ভূমিকম্প হলে ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে
অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ভূমিকম্প হলে ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছেছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP

২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ৷ সেবার আতঙ্কেই মারা যান ৬ জন৷ গত ১৫ বছরে ছোট-বড় ভূমিকম্পে ১৪১ বার কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্পের আলামত৷ আবার বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়৷ সে দিক থেকেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রকট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গত দু-তিন বছরে দেশে ভূমিকম্প অনেক বেড়েছে৷ আবার ১০০ বছরের মধ্যে আমাদের এখানে তেমন বড় ভূমিকম্প হয়নি৷ এটা আতঙ্কের বিষয়৷ তার মানে, ছোট এসব কম্পন শক্তি সঞ্চয় করছে৷ ফলে সামনে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা আছে৷ তুরস্কে যে ভূমিকম্প হয়েছে, এর চেয়ে ছোট, অর্থাৎ, রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও শুধু ভবন ধস নয়, ঢাকার অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও গ্যাসলাইন এ নগরকে একটি অগ্নিকূপে পরিণত করতে পারে৷ কয়েক হাজার ভবন ধ্বসে পড়বে৷ মৃত্যু হতে পারে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের৷ কারণ, আমাদের ভবনগুলো এখনও নিরাপদভাবে তৈরি হচ্ছে না৷” 

‘দেশের ২০ লাখ বহুতল ভবনের সবকটিকে ভূমিকম্প-সহনশীল করতে হবে’

This browser does not support the audio element.

বুয়েটের বিভিন্ন সময়ে করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ ও সিলেটে ১ লাখ বহুতল ভবন রয়েছে৷ এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে ছয়তলা বা তার চেয়েও উঁচু৷ ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে৷

অধ্যাপক আনসারী বলেন, ‘‘দ্রুত দেশের ২০ লাখ বহুতল ভবনের সবক'টিকে ভূমিকম্প-সহনশীল করতে হবে৷ সেটা করার মতো কারিগরি দক্ষতা এবং সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে৷ তবে এ জন্য সরকারের জরুরি উদ্যোগ দরকার৷ সারা দেশে বড় বড় শহরে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সেখানকার বাসাবাড়ি ভূমিকম্পন-সহনীয় কিনা, সেটা যাচাই করতে হবে৷ কোনো বাসা খারাপ থাকলে মজবুত করার ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ, ভূমিকম্পে ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যায় ভবন ধসে৷ তুরস্কেও আমরা দেখলাম ভবন ধ্বসেই বেশি মৃত্যু হয়েছে৷”

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ঢাকায় যদি সাত মাত্রার ভূমিকম্পও আঘাত হানে, আমরাদের যে প্রস্তুতি, ভবনের স্ট্রাকচার, ঘনবসতি তাতে অনেক বড় বিপর্যয় হতে পারে৷ আমাদের এত বছরে যত উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তা আবার ফিরিয়ে আনা অনেক সময়-সাপেক্ষ ব্যাপার হবে৷” শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের আশঙ্কার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক আখতার বলেন, "ভূতাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশে তিনটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত৷ উত্তরে তিব্বত প্লেট, পূর্বে বার্মা সাব-প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়া প্লেট৷ এগুলোর বিস্তৃতি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার৷ এই জোনে বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে৷ আবার শতবর্ষে বড় ভূমিকম্প ফিরে আসে৷” 

বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১০ ছরে বাংলাদেশে ৮৭ বার ভূকম্পন হয়৷ এ সময় মারা যান ১৫ জন৷ এর মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু আতঙ্কিত হয়ে৷ প্রাণহানিসহ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ শহরাঞ্চলেই বেশি৷ ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৪৯৬ কিলোমিটার দূরের সিকিম-নেপাল সীমান্তে৷ ১৮৫৭ সালের পর ঢাকার এত কাছে আর কোনো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল না৷

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫৭টি ভূমিকম্পের প্রভাবে কেঁপেছে বাংলাদেশ৷ সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ভূমিকম্পে কাঁপে দেশ৷ রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ২ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল বঙ্গোপসাগর৷ ২০২১ সালের ২৯ মে এক দিনেই টানা ছয় দফা মৃদু ভূমিকম্পের কারণে সিলেট শহরসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ এসব কম্পন বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সমন্বিত উদ্ধার তৎপরতা: আলী আহমেদ খান

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে যদি বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য উদ্ধার তৎপরতার প্রস্তুতি কেমন? ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের খুব বেশি প্রস্তুতি নেই৷ সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সমন্বিত উদ্ধার তৎপরতা, যেটার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনওইসি) থাকতে হয়৷ সেটা এখন সময়ের দাবি৷ তবে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে৷ যেমন ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরে আর বহুতল ভবন হবে না৷ পাশাপাশি যে ভবনগুলো আগে হয়েছে, সেগুলোর ভূমিকম্প-সহনশীলতাও পরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে হবে৷”

তুরস্কের ভূমিকম্পের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, প্রতিটি দুর্যোগ থেকেই আমরা শিক্ষা নিচ্ছি৷ সে অনুযায়ী নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি৷ তবে রাতারাতি সব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়৷ বাংলাদেশকে ভূমিকম্প-সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জাপানের সঙ্গে চার দফা বৈঠক হয়েছে৷ একটি সমঝোতা স্মারক তৈরি হয়েছে৷ সেই অনুযায়ী তিন ধাপে বাংলাদেশকে ভূমিকম্প-সহনীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে৷ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গা নেই ঢাকা শহরে৷ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীর বেশির ভাগ ভবন মালিকই তা মানছেন না৷ এ বিষয়ে আইন হওয়ার প্রায় ১৫ বছর পরও এটি ঠিকমতো বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজধানীতে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং ভূমিকম্পে ক্ষতির আশঙ্কা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ