প্যারিস শহরে বিস্ময়ের অভাব নেই৷ যেমন আচমকা একটি জায়গায় সাদা পোশাক পরা হাজার হাজার মানুষ টেবিল-চেয়ার পেতে খেতে বসে গেলেন৷ ৩০ বছর আগে এই অভিনব নৈশভোজের প্রথা শুরু হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
এই নৈশভোজে পোশাক-আশাক নিখুঁত হতে হবে৷ এ বছর ‘সাদা পোশাকের নৈশভোজ'-এর ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষ প্যারিসে ভোজসভায় যোগ দিয়েছিলেন৷ বিশ্বের খাদ্যরসের ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ‘ফ্ল্যাশ মব' ছিল এই ঘটনা৷
প্রায় ১৭ হাজার মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এসেছিলেন বিদেশ থেকে৷ এমন অভিজ্ঞতার ফলে সবাই উচ্ছ্বসিত৷ একজন বলেন. ‘‘সত্যি অভিনব, যেন হঠাৎ আয়োজন করা হয়েছে৷ বন্ধুদের দল৷ সাদা কাপড় পরায় সবাই সবাইকে চেনে৷'' আরেক অংশগ্রহণকারী মনে করেন, ‘‘অসাধারণ! একই জায়গায় এক ধরনের কাপড় পরে এত মানুষের সঙ্গে মজা করার অভিজ্ঞতা চমৎকার৷ অনবদ্য পরিবেশ, অসাধারণ! সবাই একই সূত্রে বাঁধা, সেটাই বড় সুন্দর৷'' সুদূর অ্যামেরিকা থেকে আসা এক নারী বলেন, ‘‘আমি ফিলাডেলফিয়ার বাসিন্দা, সেখানে প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গায় এমন ভোজ হয়৷ এবার সময় বুঝে প্যারিসে এলাম, অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল৷''
অতিথিরা মাত্র এক ঘণ্টা আগে নৈশভোজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারেন৷ খোলা আকাশের নীচে বন্ধু এবং তাদের বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়ার মজাই আলাদা৷ এটাই ‘ল্য দিনে অঁ ব্লঁ' বা সাদা পোশাকে নৈশভোজের আইডিয়া৷ একবার এমন নৈশভোজে যোগ দিলে পরের বার এক অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো যায়৷
প্যারিসে গণ-নৈশভোজ
04:18
এই সাড়ম্বর পিকনিকের ৩০ বর্ষপূর্তি বেশ জাঁকজমকের মধ্যে পালিত হলো৷ প্যারিসের বাসিন্দা সিরিল গলোভচান দুই দশক ধরে এই নৈশভোজে অংশ নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর একই সময়ে এটা হয়৷ নৈশভোজে পৌঁছনোর সময় আপনি জানেন, যে অনেক মানুষ সাদা পোশাকে সেখানে থাকবেন৷ আচমকা প্যারিস শ্বেতসাগরে রূপান্তরিত হয়৷ সেটাই তো লক্ষ্য৷''
সেন নদীর উপর দুই ঘণ্টা আগের ঘটনা৷ সিরিল ও নৈশভোজে তাঁর সঙ্গীরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত৷ খাবার ছাড়াও নিজেদের পোশাকের দিকে শেষ নজর দিতে হবে৷ বিবর্ণ বা উজ্জ্বল যেমনই হোক না কেন, সাদা রং হলেই চলবে৷ কিন্তু আরও অনেক নীতিমালা মেনে চলতে হয়৷ সিরিল গলোভচান বলেন, ‘‘অনেক নিয়ম রয়েছে৷ সঙ্গে টেবিল আনতে হবে, দুজন মানুষ, চেয়ার, টেবিলক্লথ, সাদা প্লেট ও বাহারি কাচের জিনিসপত্র৷ তবে এমন কড়া নিয়মের কারণেই মানুষ এই ইভেন্টে বিনিয়োগ করেন৷ অন্যদিকে আমিই সবার আগে আমার বাহারি গেলাস ও প্লেটের কথা ভুলে যাই৷ শেষ পর্যন্ত খাওয়া কম হয়৷''
ফ্রঁসোয়া পাসকিয়ে ১৯৮৮ সালে ‘ল্য দিনে অঁ ব্ল' শুরু করেন৷ প্যারিসের এই বাসিন্দা নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছিলেন৷ তাই তিনি একটি পার্কে বন্ধুদের পিকনিকের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ সঙ্গে পরিচিতদেরও আনতে বলেছিলেন৷ ঠিক হয়েছিল, সাদা পোশাকের কারণে তাঁরা একে অপরকে চিনতে পারবেন৷ পরে সেটা বাৎসিক ইভেন্টে পরিণত হয়৷ ফ্রঁসোয়া বলেন, ‘'৩০ বছর আগে সেটা ছিল বন্ধুদের নৈশভোজ, যেমনটা সবাই করে থাকে৷ তারপর তার বিবর্তন শুরু হলো৷ খুব ভালো অভিজ্ঞতার কারণে পরের বছরই অতিথিদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল৷ তারপর সংখ্যা বাড়তেই থাকলো৷''
হনুলুলু, সিডনি অথবা নিউ ইয়র্ক – এখন সারা বিশ্বে এমন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়৷ মানুষ ফরাসি জীবনধারা অনুযায়ী প্রকাশ্যে উৎসব উদযাপন করে৷ ফ্রঁসোয়া পাস্কিয়ে আজও তাঁর হাতে জন্ম নেওয়া এমন ডিনার পার্টিকে ঘিরে উৎসাহ দেখে বিস্মিত হন৷ তিনি বলেন, ‘‘এ যেন অপরিকল্পিতভাবে শিশুর জন্ম দেওয়া৷ আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং আশা করতে হবে, যে শিশুটি খুশিমনে ভালোভাবে বেড়ে উঠবে৷ এ ক্ষেত্রেও ঘটনাটা অনেকটা সে রকমই৷''
হয়তো এই গোপন উপকরণের কারণেই সাদা পোশাকে নৈশভোজ এত সফল হয়ে উঠেছে৷ কয়েক মুহূর্ত উপভোগ করাই এর আসল আনন্দ৷ ফরাসি সংস্কৃতির মধ্যে বাঁচার আনন্দের বিষয়টি সারা বিশ্ব কদর করে৷ সেই অভিজ্ঞতার জন্য প্যারিসের থেকে উপযুক্ত জায়গা থাকতে পারে কি?
খাবারেরও ফ্যাশন থাকে
বাঁধাকপি তো বোঝা গেল৷ ‘ক্রোনাট’ হলো ক্রসোঁ আর ডোনাট-এর মিশ্রণ৷ ব্রেকফাস্ট আর ডিনার মেলালে যেমন হয় ‘ব্রিনার’৷
ছবি: https://avocadobanane.wordpress.com
ফুড রিপোর্ট ২০১৬
সংকলন করেছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ও ‘ট্রেন্ড’ বিশারদ হানি ব়্যুটৎসলার৷ প্রথমটির নাম রেখেছেন ‘স্পিরিচুয়াল ফুড’, মানে আধ্যাত্মিক খাবার, অর্থাৎ নিরামিষ, ভিজান বা ভেগান এবং হালাল বা কোশার গোত্রীয় খাবার – কেননা গ্রাহকরা খাবারের নৈতিকতা নিয়ে আবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন৷
ছবি: Imago
‘ফাস্ট গুড’
খেয়াল করবেন, ফাস্ট ফুড নয়! মানে সহজে ও স্বল্প পরিশ্রমে তৈরি করা যায়, এমন খাবার, ওদিকে পুষ্টিকরও বটে – অর্থাৎ শুধু বার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নয়৷ ‘ট্রেন্ড’-টা যাচ্ছে বিশেষ করে স্যালাডের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/beyond/Junos
‘ইনফিনিট ফুড’
নামটা ‘অফুরন্ত খাবার’ হলো কেন, বলা শক্ত৷ তবে ‘ফুড ট্রাক’-এর সাথে যদি বাড়ির রান্না যোগ করা যায়, তাহলে সেটা হয়ে ওঠে ‘ইনফিনিট ফুড’৷ জার্মানির বায়রয়েথ অঞ্চলের এই ফুড ট্রাকটি থেকে পাওয়া যাবে মাংসের রোস্ট আর ভাজা আলুর একটি ফুল ‘মিল’৷
ছবি: swagman
স্ট্রিট ফুড
এক কথায় – রাস্তার খাবার৷ কোলোন, প্যারিস, নিউ ইয়র্কের মতো নামজাদা শহরে আজকাল নিয়মিত স্ট্রিট ফুড ফেস্টিভাল হয়৷ বার্লিনের একটি মার্কেটে প্রতি সপ্তাহে ‘স্ট্রিট ফুড থার্সডে’ অনুষ্ঠিত হয় – সেখানে মেক্সিকোর ‘টাকোস’ থেকে শুরু করে পশ্চিম আফ্রিকার ‘ফুফু’ অবধি সব কিছু পরখ করে দেখা যায়৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
হাইব্রিড ফুড
মিশ্র খাবারের চল আজ বেশ কিছুদিন ধরে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি ‘ক্রোনাট’, অর্থাৎ ফরাসি ক্রসোঁ-র কায়দায় তৈরি করা ডোনাট, যা ২০১৩ সালে নিউ ইয়র্ক মাত করেছিল৷ এইভাবেই তৈরি হচ্ছে ‘ব্রাফিন’, যা কিনা ফরাসি ব্রিয়শ রুটির মতো তৈরি করা মাফিন৷
ছবি: EMMANUEL DUNAND/AFP/Getty Images
‘কুকিং বক্স’
কে আবার বাজার করতে যাবে, সুপারমার্কেটে গিয়ে ‘ক্যাশ’-এর লাইনে দাঁড়াবে? তার চাইতে অনলাইনে ‘কুকিং বক্স’ অর্ডার করলেই তো হলো: তাতে রান্নার রেসিপির সঙ্গে সেই রান্নার জন্য যা কিছু দরকার, সেই সব কাঁচাবাজারও রাখা থাকে৷ খুললেন, রেসিপি অনুযায়ী রান্না করলেন, খেলেন – ব্যস৷
ছবি: picture alliance/dpa/D.Naupold
‘সুপারফুড’
সুপারফুড মানে অতি পুষ্টিকর খাদ্য৷ ‘আসাই বেরি’ বা ‘আসাই কুল’ তাদের মধ্যে পড়ে, তার নাকি নানা ‘অ্যান্টিঅক্সিডান্ট’ ক্ষমতা আছে৷ শোনা যায়, আসাই কুলের নাকি ‘অ্যান্টি-এজিং’ গুণ আছে; দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই ফলটি নাকি রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম৷ খেতেও আবার সুস্বাদু৷
ছবি: DW/H. Fuchs
সুপারফুড বাঁধাকপি
বাঁধাকপি ভিটামিন ‘সি’-তে ভরা৷ জার্মানরা সাধারণত মাংসের কিমা আর আলুর সাথে পরিবেশন করেন বাঁধাকপি৷ তবে আজকাল অনেক রাঁধুনি বাঁধাকপি দিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ‘এক্সপেরিমেন্ট’-ও করেন৷ এই যেমন, কেউ হয়ত বাঁধাকপি দিয়ে পিৎসা বা কিশ বানালেন, এমনকি ‘স্মুদি’-তেও পড়তে পারে বাঁধাকপি৷
ছবি: eyetronic/Fotolia
‘ব্রিনার’
‘ব্রাঞ্চ’ মানে ব্রেকফাস্ট + লাঞ্চ৷ এবার বেরিয়েছে ‘ব্রিনার’, অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট + ডিনার; এক কথায়, প্রাতরাশের উপাদান দিয়ে রাতের খাওয়া; তবে ঠিক রুটি-ডিম নয়, আর একটু ‘ফ্যান্সি’ হওয়া চাই৷
ছবি: cc-by-Arnold Gatilao-2.0.
পপকর্ন
দুপুরে ভারী খাওয়া-দাওয়ার পর রাতে হাল্কা কিছু খেতে চাইলে পপকর্নের জুড়ি নেই৷ ‘স্ন্যাক’ বলতে তাই অনেকেই পপকর্ন বোঝেন৷ বিশেষ করে মাখন ছাড়া পপকর্নে ক্যালরিও খুব কম৷ স্যালাডে পাউরুটির ছোট ছোট ভাজা টুকরো বা ক্রুতঁ-র বদলে আজকাল পপকর্ন দিচ্ছেন বহু মানুষ৷ এমনকি পপকর্ন দিয়ে আইসক্রিমও তৈরি হচ্ছে৷
ছবি: Colourbox
ওয়েব রাঁধুনি
রান্নার অনলাইন ভিডিও হলো হালফ্যাশান, যাকে বলে কিনা ‘বুমিং ট্রেন্ড’৷ অর্থাৎ ইন্টারনেটে শুধু রান্নার রেসিপিই নয়, কিভাবে রাঁধতে হবে, সবই দেখিয়ে দেওয়া হয়৷ দেখুন আর জিভের জল ফেলুন৷ অথবা রেসিপে দেখে নিজেই রান্না করুন৷ এখানে যেমন দেখছেন হুইস্কি মিন্স পাই – অর্থাৎ হুইস্কি আর কিমার পুর দিয়ে মাফিন...৷