একশ' বছরের বেশি আগে রেওয়ার মহারাজা একটি সাদা বাঘের বাচ্চা খুঁজে পেয়েছিলেন, নাম রেখেছিলেন মোহন৷ কিন্তু সাদা বাঘও যে বাঘ, তা বোঝা যায় এই রক্ত জল করা ভিডিওটি দেখলে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয় এই ভিডিও৷ তারপর ৩৭ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন দুই সাদা বাঘের লড়াই; ভারতের বেঙ্গালুরুর জাতীয় উদ্যানে, খাঁচার মধ্যে৷
বেশ তো ছিল দু'টিতে, হঠাৎ যে কী হলো, ব্যাঘ্রপুঙ্গবদের মধ্যে গর্জানো আর দাঁত দেখানো আর থাবা বসানো শুরু হয়ে গেল৷ গর্জন শুনলেই প্রাণ ঠান্ডা হয়ে আসে, কিন্তু যেভাবে একজন আরেকজনকে উপড়ে ফেলে চিৎ হওয়া অবস্থায় তার উপর দাঁড়িয়ে নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করছে, তা-তে এই জীবটি যে জঙ্গলের জীব এবং চিরকাল তা-ই থাকবে, এ বিষয়ে সন্দেহ থাকার কোনো উপায় নেই৷
বাঘের মারামারিতে একটু আধটু কাটবেই ও রক্ত পড়বে, সেটা বাঘেদের কাছে আঁচড় ছাড়া কিছু নয়৷ এই ভিডিওটি দেখলে মনে হবে, এই যুদ্ধ থেকে ওদের দু'জনের একজন জীবন্ত বেরিয়ে আসতে পারবে বটে, কিন্তু অন্যজনকে...
অথচ পশুজগতের অনেকটাই হলো লোক-দেখানো – এক্ষেত্রে বাঘ-দেখানো ‘শো', প্রতিপক্ষকে ‘ইম্প্রেস' করার জন্য৷ বাঘেরা তা-তে কী ভাবে জানি না, তবে বনের অন্য প্রাণীদের যে কাপড়ে-চোপড়ে হয়ে যায়, তা আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি৷ অথচ জীবটা তো বেড়ালের বোনপো ছাড়া আর কিছু নয়, না হয় কথায় বলে ‘বিগ ক্যাট'৷ আমার ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে সব মিলিয়ে সাকুল্যে ন'টা বাঘের মাসি ছিল: ভাগ্যিস তারা সুন্দরবন থেকে তাদের জনা কয়েক বোনপোকে নিমন্ত্রণ করেনি!
শেষমেষ বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল পার্কের কর্মীরা গাড়িতে করে একেবারে খাঁচার মধ্যে ঢুকে দুই মস্তানকে আলাদা করলেন৷ বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা, তার বেশ ক'টা এই দুই লড়াকুর কনুই, কাঁধ ইত্যাদিতে দেখা গেল৷ তবে কেউ কাউকে কামড়ায়নি৷ কামড়াবেই বা কী করে, বাঘের তিন ইঞ্চি দাঁতগুলো হলো বিশ্বের মার্জার শ্রেণিভুক্ত সব জীবের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ও সবচেয়ে মারাত্মক৷ ‘পাড়ার' মারামারিতে সে অস্ত্র দেখানো যায় বটে, কিন্তু ব্যবহার করা চলে না...৷
বাঘ সম্পর্কে অজানা ৮ তথ্য
বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের অন্যতম পছন্দের প্রাণী বাঘ৷ কিন্তু এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে৷ আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসে আটটি বিশেষ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এই প্রাণী সম্পর্কে৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Lomka
বিড়ালের বৃহত্তম প্রজাতি
বিড়াল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী বাঘ৷ ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন গ্রুপ বা ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর তথ্য অনুযায়ী, এদের এক একটির ওজন ৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ আর বাঁচে ২৬ বছর পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.v. Erichsen
শিকারি বাঘ
শিকারের জন্যই এদের জন্ম৷ এদের থাবায় ধারালো তীক্ষ্ণ নখ রয়েছে, আছে শক্তিশালী পা এবং বিশাল বিশাল দাঁত আর চোয়াল৷ তাই শিকার ধরতে এদের জুড়ি মেলা ভার৷ তাদের চলাফেরা, কর্মোদ্যমের জন্য বিপুল পরিমাণ মাংসের প্রয়োজন, যা তাদের ক্ষুধা মেটায় ও শক্তি যোগায়৷ এক বসায় প্রাণীটি ৪০ কেজি পর্যন্ত মাংস খেতে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa/N. Armer
তপস্বী বাঘ
বাঘ সাধারণত নিশাচর এবং তার শিকারিকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে৷ আর নিঃশব্দেই আক্রমণ করে৷ ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর তথ্য অনুযায়ী, পুরুষ বাঘ নিঃসঙ্গভাবে চলাফেরা করে, বাঘিনী এবং শাবকদের ছাড়াই৷ বিশাল জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে তারা৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/H. Schmidbauer
পানি পছন্দ
বাড়ির বিড়ালটি নিঃসন্দেহে একফোঁটা পানি দেখলে তা এড়িয়ে যেতে চায়, তবে বাঘের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারে আলাদা৷ এরা বেশ ভালো সাঁতারু এবং সাঁতরানোর সময় শিকার ধরতেও এরা বেশ পটু৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/W. Layer
কমে আসছে সংখ্যা
এক শতাব্দী আগেও তুরস্ক থেকে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত বনাঞ্চলে প্রায় এক লাখ বাঘ ঘুরে বেড়াত৷ কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা খুবই কমে গেছে৷ মোট সংখ্যা হয়ত মাত্র তিন থেকে চার হাজার৷ নয় প্রজাতির বাঘের মধ্যে তিনটিই এখন বিলুপ্তি৷ এই ছবিতে জাভা বাঘকে দেখা যাচ্ছে, যা ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷
ছবি: public domain
কেন হুমকির মুখে?
আবাসস্থল হারানো একটি প্রধান কারণ৷ নগরায়ণ এবং কৃষিজমির উপর মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়ার কারণে বাঘেরা তাদের আবাস হারিয়েছে ৯৩ ভাগ৷ আর এর ফলে খুব কম জায়গায় বাস করতে হচ্ছে প্রাণীদের, সেই সাথে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য গেছে বেড়ে৷
ভারত ও বাংলাদেশের বিশাল একটা অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অরণ্য৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ এর ফলে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অভয়ারণ্য হুমকির মুখে রয়েছে৷ ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর গবেষণায় দেখা গেছে, বাঘকে বাঁচাতে হলে তাদের আবাসনের দিকে নজর দিতে হবে এবং শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Chowdhury
বাঘ বাঁচাও
তবে সুসংবাদও আছে৷ কনজারভেশন গ্রুপ ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে৷ ২০১৬ সালে তাদের প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে বাঘের সংখ্যা ছিলো ৩২০০, আর বর্তমানে ৩৯০০৷ ভারত, রাশিয়া এবং নেপালে ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর কার্যক্রমের জন্য বাঘের সংখ্যা বেড়েছে৷ ছবিতে দুটো সাদা বেঙ্গল টাইগারকে দেখা যাচ্ছে৷