1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাধারণ নাগরিক ও অর্থনীতিবিদদের বাজেট ভাবনা

২ জুন ২০২১

করোনার দ্বিতীয় বছরে বাজেটের আকার আরো বাড়ছে৷ ঘাটতিও বাড়ছে রেকর্ড পরিমাণ৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এতে সাধারণ মানুষের কষ্টের অবসান কতটা হবে?

Bildergalerie Menschenmassen Bangladesh Einkaufszentren öffnen wieder
ফাইল ফটোছবি: Mortuza Rashed/DW

সাব্বির রহমানের বাড়ি যশোরে৷ তিনি বাসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন৷ দূরপাল্লার বাস চালু হওয়ার পর গত মঙ্গলবার প্রথম ট্রিপ পেয়েছেন৷ করোনায় বাস বন্ধ থাকায় তার কোনো আয় ছিলনা৷ চরম কষ্টে দিন কেটেছে৷ তার কাছে বাজেট মানে তার কষ্টের অবসান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই এই বাজেটে যেন আমাদের কষ্টের অবসান হয়৷ আমরা যদি কিছু প্রণোদনা পাই তাহলে অনেক খুশি হবো৷ অনেক শিল্প মালিক, বড় ব্যবসায়ী প্রণোদনা পেয়েছেন৷ আমরা তো কিছু পাই নাই৷ সামনে আমাদের কী হবে?'' তার কথা বাজেটে গরিব মানুষের জন্য যে সুবিধা দেয়া হয় তা যেন তারা পান৷ তার অভিযোগ, তারা সবসময় তা পান না৷

এই করোনায় অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন৷ অনেকে কাজ পাচ্ছেন না৷ দুই কোটিরও বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন৷ বিশাল জনগোষ্ঠীর অনেকে বিপদে আছেন৷ তা ফুটে উঠেছে পিরোজপুরের দেবদাস মজুমদারের কথায়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষ বাজেটে বড় বড় উন্নয়নের কথা বুঝিনা৷ আমরা বুঝি দুই বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারব কিনা৷ আমাদের এলাকায় অনেক মানুষের হাতে কোনো কাজ নেই৷ অনেকে চাকরি হারিয়ে গ্রামে এসেছেন৷ সরকারি সহায়তা যা দেয়া হয় তা সবাই পান না৷ তারা কীভাবে চলবেন? এবার কৃষিরও ক্ষতি হয়েছে৷ এরমধ্যে আবার জিনিসপত্রের দাম বাড়তি৷''

ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

করোনার মধ্যে এটা দ্বিতীয় বাজেট৷ যা জানা যাচ্ছে তাতে এবার বাজেটের আকার হবে ৬ লাখ তিন হাজার ৬৮১ হাজার কোটি টাকার৷ গতবারের চেয়ে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি৷ আর এই বাজেটে ঘাটতি হবে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, যা একটি রেকর্ড৷ এবার বিদেশি ঋণ বাড়ছে৷ সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকছে অবকাঠামো খাতে৷

করোনার কারণে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ছে৷ বাড়ছে সামাজিক বেষ্টনী৷ আসছে নানা খাতে কর অবকাশ৷ কালো টাকা সাদা করার অবারিত সুযোগ থাকছে৷ টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্নই করা হবেনা৷ বৈধ-অবৈধ সবই অপ্রদর্শিত আয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে৷ মাত্র শতকরা ১০ ভাগ আয়কর দিলেই ‘হালাল' হয়ে যাবে৷

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ বা সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, এবার তারা সিপিডির পক্ষ থেকে বাজেটে চারটি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন৷ স্বাস্থ্য খাত, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং কৃষি৷ তিনি বলেন, ‘‘যা খবর আছে তাতে স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো এই খাতের সক্ষমতা নিয়ে৷ সাফল্য নির্ভর করছে ভ্যাকসিনের ওপর৷ সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে কিনা তার ওপর৷''

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রচুর কর ছাড় আসছে৷ এর মাধ্যমে যদি ব্যক্তিখাত উৎসাহিত হয় তাহলে কর্মসংস্থান হবে৷ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে সেটা যেন শুধু আগে যারা পেয়েছেন তারাই না পান৷ নতুন সুবিধাবঞ্চিতরা যেন যুক্ত হন৷''

তবে এই বরাদ্দ কাজে লাগাতে হবে৷ বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে৷ কারণ প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতার কারণে বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ৷

এবার বাজেটের আগে কালোটাকা সাদা করার হিড়িক পড়ে যায়৷ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যত দিন কালো টাকা থাকবে তত দিন এই সুবিধা থাকবে৷ কিন্তু বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ এর বিরোধিতা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত আয় বোঝা কঠিন৷ কারণ এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হবেনা৷ ফলে কালো টাকা সাদা করার উৎসাহ বেশি৷ কিন্তু এটা যদি বেশি দিন চলতে থাকে তাহলে অবৈধ আয় উৎসাহিত হবে৷ বৈধ আয়ে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর দিতে হয়৷ আর অবৈধ আয়ে মাত্র ১০ ভাগ৷ তাহলে যারা বৈধ আয় করেন তারাও কর না দিয়ে পরে ১০ ভাগ করের সুবিধা নেবেন৷''

নাজনীন আহমেদ বলেন, এবার সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিয়ে বাজেটে জোর দিতে হবে৷ কারণ করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷ সামনে কী হবে তাও জানিনা৷ তার মতে, ‘‘কিন্তু এই যে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে তার সুফল মানুষ পাবে কী না৷ গতবারও বরাদ্দ বাড়ানো হয়৷ কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর দেখ গেল আইসিইউ নেই৷ থানা পর্যায়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়নি৷ তাই বাজেটের সঙ্গে সুশাসন ও দুর্নীতি দূর করা জরুরি৷''

করোনার টিকার জন্য এবার বাজেটে দুই ধরনের বরাদ্দ থাকছে৷ টিকা কেনার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের পাশাপাশি আরো অতিরিক্ত তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ থাকছে৷ কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে আরো বেশি ব্যবস্থা দেখতে চান অর্থনীতিবিদরা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ