পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে গ্রিন পাসপোর্ট দিল শাহবাজ শরীফের সরকার।
বিজ্ঞাপন
নওয়াজের নাম এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট (ইসিএল) থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে ডিপ্লোমেটিক লাল পাসপোর্ট নয়, তাকে নতুন গ্রিন পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ বছর এই পাসপোর্ট বৈধ থাকবে। এই পাসপোর্ট পাওয়ার পর তার পাকিস্তানে ফেরার আর কোনো বাধা থাকল না। জিও টিভি জানিয়েছে, গত ২৩ এপ্রিল এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ডিপ্লোমেটিক লাল পাসপোর্ট দেয়া নিয়ে গত এক বছর ধরে পাকিস্তানে বিতর্ক চলছে। পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র সংবাদপত্র দ্য ডনকে জানিয়েছে, নওয়াজ নিজেই সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন জানিয়েছিলেন। সেটাই তাকে দেয়া হলো।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সেই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, নওয়াজের ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির পর বাতিল হয়ে যাবে।
মন্ত্রী এই বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেননি, কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রবীণ অফিসার বলেছেন, নওয়াজকে লাল পাসপোর্ট দেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। তিনি যখন যুক্তরাজ্য যান, তখন ওই পাসপোর্ট নিয়েই গেছিলেন। নিয়মমতো তার ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা। তারপর ইমরান খান সরকার তাকে আর ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট দেয়নি।
পাকিস্তানের কোন প্রধানমন্ত্রী কতদিন ক্ষমতায় ছিলেন
পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী তাদের ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি৷ নির্ধারিত মেয়াদের আগেই নানা কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছে তাদের৷ ইমরান খান ছিলেন ২২তম প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: STF/AFP/GettyImages
লিয়াকত আলী খান: ৪ বছর, ২ মাস
লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী৷ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নির্বাচিত হন৷ ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডিতে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন৷ মৃত্যুর আগে ৪ বছর ২ মাস প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Wikipedia/US Department of State
খাজা নাজিমুদ্দিন: ১ বছর ৬ মাস
লিয়াকত আলী খান নিহত হওয়ার একদিন পর ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণ করেন খাজা নাজিমুদ্দিন৷ ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল নাজিমুদ্দিনকে গভর্নর জেনারেল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন৷
ছবি: Douglas Miller/Keystone/Hulton Archive/Getty Images
মোহাম্মদ আলী বগুড়া: ২ বছর ৩ মাস
১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী বগুড়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন৷ কিন্তু, ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি৷
ছবি: gemeinfrei/wikipedia
চৌধুরী মোহাম্মদ আলী: ১ বছর ১ মাস
১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট পাকিস্তানের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন তিনি৷ ১৯৫৬ সালের সংবিধানে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য পাকিস্তানে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর নাম এখনো উচ্চারিত হয়৷ কিন্তু, ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দলের সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন৷
ছবি: akg images/picture alliance
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী: ১ বছর, ১ মাস
১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন তিনি৷ কিন্তু, ইস্কান্দার মির্জার সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর পদত্যাগ করেন৷
ছবি: gemeinfrei/Wikipedia
ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার: ২ মাসের কম
ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন৷ ১৬ই ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি৷
ছবি: gemeinfrei/wikimedia
মালিক ফিরোজ খান নুন: ১০ মাসের কম
১৯৫৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফিরোজ খান নুনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে উন্নীত করেন ইস্কান্দার মির্জা৷ কিন্তু, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির সময় নুনকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন৷
ছবি: Fox Photos/Hulton Archive/Getty Images
নুরুল আমিন: ১৩ দিন
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দীর্ঘ ১৩ বছর সামরিক আইন জারির পর স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের প্রশাসনের অধীনে নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয়ের পর ২০ ডিসেম্বর আমিনকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: gemeinfrei/wikipedia
জুলফিকার আলী ভুট্টো, ৩ বছর ১১ মাস
১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হন তিনি৷ তিনি ১৯৭৭ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন৷ কিন্তু, সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি কারাবন্দি হন এবং ১৯৭৯ সালে ৫ জুলাই ফাঁসি হয় তার৷
ছবি: imago/ZUMA/Keystone
মুহাম্মদ খান জুনেজো: ৩ বছর, ২ মাস
মুহাম্মদ খান জুনেজো ১৯৮৫ সালের ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ তবে, ১৯৮৮ সালের ২৯ মে জুনেজোর সরকার বরখাস্ত করা হয়৷
ছবি: Sven Simon/IMAGO
বেনজির ভুট্টো: ১ বছর ৮ মাস
জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো ১৯৮৮ সালের ২ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৯ সালে তার দল অভিশংসন থেকে বেঁচে যায়৷ কিন্তু, ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি গুলাম ইসহাক খান তাকে সরিয়ে দেন৷
ছবি: ZUMA Wire/IMAGO
নওয়াজ শরীফ: ২ বছর, ৭ মাস
১৯৯০ সালের ৬ নভেম্বর দায়িত্ব নেন তিনি৷ কিন্তু, ১৯৯৩ সালে আবারও রাষ্ট্রপতি গুলাম ইসহাক খান একটি নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করেন৷ পরে সুপ্রিম কোর্ট শরীফের সরকারকে পুনর্বহাল করেন৷ কিন্তু, ১৯৯৩ সালের ১৮ জুলাই নওয়াজ শরীফ এবং গুলাম ইসহাক খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. M. Chaudary
নওয়াজ শরীফ: ২ বছর, ৮ মাস
১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন৷ তবে, ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন৷
ছবি: K.M. Chaudary/AP/dpa/picture alliance
মীর জাফরুল্লাহ খান জামালি: ১ বছর, ৭ মাস
২০০২ সালের নভেম্বরে জাফরুল্লাহ খান জামালি স্বৈরশাসক পারভেজ মোশারফের অধীনে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন৷ কিন্তু, ২০০৪ সালের ২৬ জুন মোশাররফ তাকে বরখাস্ত করেন৷
ছবি: Aamir Qureschi/AFP
চৌধুরী সুজাত: ২ মাস
চৌধুরী সুজাত ২০০৪ সালের ৩০ জুন পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন৷ শওকত আজিজ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন সুজাত৷
ছবি: Bilawal Arbab/dpa/picture alliance
শওকত আজিজ, ৩ বছর ২ মাস
শওকত আজিজ ২০০৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন৷ পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব ত্যাগ করেন৷
ছবি: Yu Jie/HPIC/picture alliance
ইউসুফ রাজা গিলানি: ৪ বছর, এক মাস
২০০৮ সালের ২৫ মার্চ সাধারণ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হন৷ তার দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন অর্জন করে৷ কিন্তু, ২০১২ সালে শীর্ষ আদালত অবমাননার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: AP
রাজা পারভেজ আশরাফ: ৯ মাস
পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদ শেষ করতে গিলানির কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাজা পারভেজ আশরাফ৷ ২০১২ সালের ২২ জুন থেকে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷
ছবি: dapd
নওয়াজ শরীফ: ৪ বছর, ২ মাস
২০১৩ সালের ৫ জুন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি৷ পাকিস্তানের পূর্ববর্তী সব প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় এখন পর্যন্ত তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অভিশংসিত হওয়ার আগে তিনি ৪ বছর ৫৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন৷
ছবি: Reuters/F. Mahmood
শাহীদ খাকান আব্বাসি: ১ বছরের কম
নওয়াজ শরীফকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে শাহীদ খাকান আব্বাসিকে ২১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ কিন্তু, ২০১৮ সালের ৩১ মে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়৷ কারণ নতুন নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/J. Moon
ইমরান খান: ৩ বছর ৭ মাস
২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান খান৷ ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান ইমরান খান৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/dpa/picture alliance
21 ছবি1 | 21
দ্য ডন জানাচ্ছে, মন্ত্রিসভা গঠন করার আগে নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ তার ভাইয়ের জন্য ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেন। তার দেশে ফেরার পথ সুগম করতেই এই নির্দেশ দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর রানা সালাউল্লাহ গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, নওয়াজ শরীফকে ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্টই দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, এটা খুবই দুঃখের কথা যে, যিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাকে নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে চিকিৎসার জন্য পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ আট সপ্তাহের জামিন পান। তাকে চিকিৎসার জন্য চার সপ্তাহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি এখনো লন্ডনে আছেন।
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বহুবার অভিযোগ করেছেন, তার স্বাস্ত্য সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে নওয়াজ শরীফ লন্ডনে বসে আছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ইমরান বলেছিলেন, নওয়াজকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিয়ে সরকার ভুল করেছে।
গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নওয়াজকে ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট না দেয়ার জন্য একটি আবেদন খারিজ করে দেয়।