মেক্সিকোর সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারীদের অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না৷ এক মার্কিন শিক্ষিত মেক্সিকান তরুণ সেই ফাঁকটাই পূরণ করার চেষ্টা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
সমাজকর্মী মোয়াস খেরেম-এর মেক্সিকোয় যে বস্তুটি ভালো লাগে, সেটি হলো, রাস্তার মোড়ে মোড়ে খাবার দোকান – যেমন কানকুনে৷ এই সব দোকানিরা ছোট ব্যবসায়ী৷ মহিলারা নিজের হাতে খাবার তৈরি করে থাকেন৷ তাদের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বা কম্পিউটার আছে কিনা – জিজ্ঞাসা করলেন মোয়াস৷ মহিলা জানালেন, ‘‘সখ তো ছিল, কিন্তু সামর্থ্য কই?’’
বিশেষ করে দরিদ্র এলাকাগুলিতে আধুনিক প্রযুক্তির দেখা পাওয়া ভার৷ যেখানে প্রযুক্তি নেই, সেখানে তথ্যপ্রযুক্তিও নেই৷ মোয়াস খেরেম সেটা বদলানোর চেষ্টা করছেন৷ তাঁর কোম্পানি গোটা মেক্সিকোয় মোট ৭০টি স্কুল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে৷ মোয়াস জানালেন, ‘‘ইন্টারনেট আছে – শুনতে ভালো লাগে৷ কিন্তু অনেকেই নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত নন৷ এই মহিলা আমাদের কোনো শিক্ষাকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ পেতে পারতেন৷ উনি আসলে গৃহিণী; আমি ওনাকে বুঝিয়েছি, মা ও বাচ্চাদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে৷ মায়েরা যান একটি কোর্সে, বাচ্চারা যায় আরেকটি কোর্সে৷ সকলেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শেখে৷''
মোয়াস সহজেই মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন, সে যেখানেই হোক৷ পড়াশুনো করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, খরচ দিয়েছেন বাবা-মা৷ মেক্সিকোর সব মানুষ অত ভাগ্যবান নন৷ প্রতি একশ স্কুলের ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাত্র ২৫ জন ফাইনাল পরীক্ষা অবধি টিকে থাকে৷ কলেজে পড়া মাত্র ১৩ শতাংশের৷ অথচ ভালো চাকরি পেতে গেলে পড়াশুনা করা দরকার৷
কম্পিউটার ব্যবহারের সময় যা খেয়াল রাখবেন
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সব জায়গাতেই কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে৷ তবে কম্পিউটারের পর্দা থেকে কতটা দূরে বসা উচিত বা কতটা আলো দরকার আর সঠিকভাবে তা না হলে কী সমস্যা হতে পারে – এ সব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: imago/McPHOTO
কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য
আজকের যুগে অফিস-আদালতের কাজ কম্পিউটার ছাড়া যেন ভাবাই যায় না৷ আর বাড়িতেও কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত মানুষ৷ মনিটর থেকে ঠিক দূরত্বে না বসা কিংবা অতিরিক্ত বা কম আলো থেকে হতে পারে চোখের নানা সমস্যা, এমনকি ঘাড় ব্যথাও৷ ‘‘কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এ সব সমস্যার কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়’’, বলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Colourbox
কতটা দূরত্বে বসবেন?
কম্পিউটারের বেশি কাছে বসে কাজ করলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, বিশেষকরে চোখের৷ বেশিরভাগ মানুষই কম্পিউটারের পর্দা থেকে ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বসে কাজ করেন৷ এই দূরত্ব ৭৫ সেমি. হলে সবচেয়ে ভালো হয়৷ পরামর্শ দিয়েছে জার্মানির পেশাদারী নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের৷বিগ হাই রেজোলিউশন কম্পিউটারের ক্ষেত্রে অবশ্য এই দূরত্ব ১০০ সেন্টিমিটার হতে পারে৷
ছবি: DW
প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন
সব কিছুই নির্ভর করে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ওপর৷ কারণ প্রতিটি মানুষের বসা, স্ক্রিনের দিকে তাকানোর অভ্যাস, স্বভাব ইত্যাদি সবকিছুই আলাদা৷ তাই আলাদাভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কে, কীভাবে পর্দার সামনে বসে কাজ করতে আরাম বোধ করেন৷ সঙ্গে যাতে হাত নাড়াচাড়া করার ভালো সুবিধা, যথেষ্ট জায়গা থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ তাছাড়া টেবিল এবং চেয়ারের উচ্চতাও লক্ষ্য রাখা জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Syda Productions
আলো বা লাইট নির্বাচন
অনেকেই কম্পিউটারের কাজ করার সময় অভ্যাসবশত ঘরের লাইটটি জ্বালিয়ে রাখেন৷ বাইরে যথেষ্ট আলো থাকলে তো আর ঘরের আলোর প্রয়োজন হয় না৷ তাই নিজেকেই দেখে নিতে হবে কতটা আলো রয়েছে৷ অনেক অফিসেই মাথার ওপরে বিশাল টিউব লাইট থাকে, যাতে অনেকেরই অসুবিধা হয়৷ এক্ষেত্রে টেবিল লাইট ব্যবহার করুন৷ পরামর্শ কোলনন শহরের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রাল্ফ ক্রট-এর৷
ছবি: DW/O. Klimtschuk
মনিটরের ব্যাকগ্রাউন্ড লাইট
মনিটরের পর্দাটি সবসময় পরিষ্কার রাখুন৷ মনিটরের ব্যাকগ্রাউন্ড আলোটি হালকা নীল হলে ভালো৷ তাছাড়া কম্পিউটারে লম্বা টেক্স পড়া বা কম্পোজ করতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয় যদি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর কালো রং দিয়ে লেখা হয়৷ এতে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে৷ প্রয়োজনে অক্ষরের সাইজ বড় করে নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: Munir Hasan
বিশ্রাম
অনেকেই কাজ করার সময় এত ব্যস্ত থাকেন যে চোখ বা ঘাড়ের বিশ্রামের কথা ভুলে যান৷ এর ফল অবশ্য পাওয়া যায় কিছুক্ষণ পরেই৷ তাই একবারে লম্বা বিশ্রাম না নিয়ে ঘণ্টাখানেক পর পর কয়েক মিনিট করে বিশ্রাম নেওয়া ভালো৷ অর্থাৎ দু-চার মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকা এবং জানালা দিয়ে অনেক দূরে তাকিয়ে থাকা আর ঘাড়টাকে একটি এদিক-সেদিক ঘোরালে আরাম পাওয়া যায়৷ এছাড়া সম্ভব হলে দাড়িয়ে একটু হাঁটাচলাও করা যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Dan Race
6 ছবি1 | 6
‘এনোভা'
মোয়াস খেরেম আমাদের একটি ইন্টারনেট কাফেতে নিয়ে গেলেন৷ এখানে কচিকাঁচা, কিশোর-কিশোরীরাও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়৷ খেলা দিয়ে শুরু৷ ছোটরা আসলে মজা পেতে চায়৷ মোয়াস খেরেম সেই মজার সঙ্গে শিক্ষা এবং তথ্য যোগ করতে চান৷ কাজেই তিনি ও তাঁর বন্ধুরা মিলে ‘এনোভা' কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ মোয়াস বললেন, ‘‘কোনো বাচ্চার যদি স্কুলে অঙ্কের বিষয়টিতে অসুবিধা থাকে, তাহলে সে আধুনিক প্রযুক্তি ও আমাদের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে আরো সহজে অঙ্ক শিখতে পারবে৷ অন্য সব পাঠ্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও যা প্রযোজ্য৷ প্রাপ্তবয়স্করা ইন্টারনেট থেকে শেখেন কাজের ধরন বা কী করে উৎপাদন বাড়ানো যায়৷ ফলে চাকরি পেতে সুবিধা হয়৷''
মেক্সিকো আজ শিক্ষাখাতে বেশি বিনিয়োগ করে থাকে, তা সত্ত্বেও ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বিপুল ফারাক থেকে যায়৷ মোয়াস খেরেম-এর মতে, শিক্ষা বাবা-মা'র আয়ের উপর নির্ভর হওয়া উচিত নয়৷ মোয়াস যে শিক্ষা দেন, তা সকলেই পেতে পারে৷ স্পন্সররা সাহায্য করেন, ‘এনোভা'-র বাজেট বছরে দেড় কোটি মার্কিন ডলার – খুব কম নয়৷ মোয়াস-এর শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে লক্ষাধিক মেক্সিকান প্রশিক্ষণ পেয়েছেন৷
ওরা ইন্টারনেটে যা দেখে
জার্মানির মাইনৎস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোদৈহিক বিভাগের একটি জরিপের ফলাফলে জানা গেছে, আজকের কিশোর-কিশোরীরা অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে৷ কী দেখে তারা? ছবিঘরে পাবেন...
ছবি: Pub Crawl Cologne
অতিরিক্ত ইন্টারনেট টিন-এজারদের নিঃসঙ্গ করে তোলে
সম্প্রতি ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ২,৪০০ কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে একটি জরিপ করা হয়েছিলো৷ যারা দিনের ৬ ঘণ্টাই কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল বা ট্যাবলেটের সামনে বসে সময় কাটায়, তাদের সমবয়সি বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেশার তেমন কোনো আগ্রহ নেই৷ কারণ সামনে থাকা যন্ত্রটিই তাদের বড় বন্ধু ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
কম্পিউটার গেম
যখন মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার সবচেয়ে ভালো সময় ঠিক সেসময়ই যদি তারা দিনের এতটা সময় কম্পিউটার গেম বা যৌন বিষয়ক ওয়েবসাইট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় তাহলে কারো সাথে বন্ধুত্ব হওয়া খুব কঠিন৷ এ কথা বলেন গবেষক টিমের প্রধান ডা.মানফ্রেড বয়টেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেশা
যাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়, তাদের মধ্যে শতকরা ৩.৪ শতাংশই ইন্টারনেটে নেশাগ্রস্ত৷ অর্থাৎ তারা দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে থাকে, অন্য কিছুর প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই৷ ১৩.৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরীদের নেশা না হলেও তারাও ইন্টারনেটের প্রতি খুবই আগ্রহী৷ সময়ের দিক থেকে ছেলেমেয়ে সমানভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ছেলে-মেয়ের পার্থক্য
সময়ের দিক থেকে পার্থক্য না থাকলেও ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে৷ যেমন মেয়েরা বেশি সময় কাটায় সামাজিক যোগাযোগ এবং অনলাইন শপিং-এ, আরা ছেলেরা বেশি সময় খরচ করে কম্পিউটার গেম এ, এবং যৌনআনন্দে৷
ছবি: Fotolia/apops
বন্ধু চাই
যেসব টিন-এজ বা কিশোর-কিশোরীরা সমাজে ভালোভাবে মেলামেশা করতে পারেনা, তারা এমন অনলাইন কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকে যেগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ কম হয়৷ এ তথ্য জানান ড.বয়টেল তাঁদের ক্লিনিকের আউটডোর পেশেন্ট হিসেবে আসা কম্পিউটারে ‘নেশা’ টিন-এজারদের সম্পর্কে৷
ছবি: Fotolia/Doreen Salcher
সামাজিকভাবে মেলামেশার পরামর্শ
এরকম ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা এবং শিক্ষকদের প্রতি ডা.মানফ্রেড বয়টেলের পরামর্শ, টিন-এজারদের প্রযুক্তির উন্নয়ন ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিকভাবে মেলামেশার বিষয়টির দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া এবং লক্ষ্য রাখা উচিত৷