বিষধর সাপের কামড়ে পৃথিবীতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)৷ এর বাইরে চার লাখ লোক প্রতিবন্ধিত্ব বরণ করেন সাপের কামড়ে৷
বিজ্ঞাপন
ডাব্লিউএইচও বলছে, প্রতিবছর ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজারের মতো মানুষ সাপের কামড় খেয়ে থাকেন৷ এর মধ্যে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার জনের মৃত্যুর হিসাব বিভিন্ন পরিসংখ্যানে পাওয়া যায়৷
তবে সঠিক হিসাবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলেই মনে করছে ডাব্লিউএইচও৷ আর চিকিৎসা ও অ্যান্টি-ভেনমের অভাবে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বেশি৷
সাপের কামড়ে মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিত্ব কমিয়ে আনতে ২০৩০ পর্যন্ত মেয়াদে একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ডাব্লিউএইচও৷ ‘‘পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, অ্যান্টি-ভেনম ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসায় মানুষের জন্য নিরাপদ, কার্যকর ও সহজলভ্য অভিগম্যতা নিশ্চিত করা৷ এতে অ্যান্টি-ভেনম উৎপাদন ও সরবরাহকে প্রাধান্য দেওয়া হবে,’’ বলা হয়েছে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে৷
সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যার হিসাব না রাখায় এ ধরনের মৃত্যুর সঠিক হিসাব জানা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ কারণ, হাসপাতালের বাইরে যাঁরা মারা যান, তাঁদের হিসাব পাওয়া দুরুহ৷
অজগর সাপ দিয়ে গা মালিশ
গা ম্যাজম্যাজ করছে? মাসাজ, অর্থাৎ মালিশ করাতে চান? একটা অজগর সাপ যদি আপনার গায়ের ব্যথা দূর করে দেয়, কেমন হয়? ভয় পেলেন? ইন্দোনেশিয়ার একটি স্পা-এ কিন্তু অজগরের ‘সেবা’ নেন অনেকেই৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
শরীর মালিশে অজগর কেন?
অজগর কীভাবে বড় বড় প্রাণী শিকার করে, জানেন? কাছাকাছি পেলে প্রথমে শিকারকে সারা শরীর দিয়ে জড়িয়ে ধরে অজগর৷ তারপর যত জোরে সম্ভব চেপে ধরে৷ বড় ভয়ানক সেই চাপ৷ ফলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে মারা যায় সেই প্রাণী৷ তারপর ধীরে ধীরে প্রাণীটিকে গিলে ফেলে অজগর৷ তো এমন ভয়ংকর এক সাপকে দিয়ে কেন মানুষের শরীর মালিশ করানো হয় বালি দ্বীপের ওই স্পা-এ? এর উত্তর এখনো অনেকেরই অজানা৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
তবে ভয়ের কিছু নেই
বলা হচ্ছে, অজগর দিয়ে যেভাবে মাসাজ করানো হয়, তাতে নাকি ভয়ের কিছু নেই৷ কারণ প্রথমত, মাসাজ শুরুর আগে অজগরকে পেট পুরে খাওয়ানো হয়৷ পেটে ক্ষিদে না থাকলে অজগর মানুষকে গিলতে যাবে কেন? দ্বিতীয়ত, মাসাজের আগে অজগরের মুখও বন্ধ করে দেয়া হয়, সুতরাং চাইলেও সে কাউকে কামড়াতে বা গিলতে পারে না৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
অজগরের মাসাজ উপকারী?
যত অভয়ই দেয়া হোক না কেন, গায়ের ওপরে যখন প্রায় তিন মিটার লম্বা আর আট কেজির মতো ওজনের একটা সাপ ছেড়ে দেয়া হয়, ভয় তো লাগেই৷ সাপের পিচ্ছিল শরীর পিঠে যত নড়াচড়া করে, ততই ভয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ সেই ভয়ের কারণে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়৷ তাতে নাকি শরীরের অনেক উপকার!
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
মনেরও উপকার
অজগরকে কে না ভয় পায়! মাসাজ শেষ হলে সেই ভয়ের জায়গায় মনে ঠাঁই নেয় এক ধরনের মুক্তির আনন্দ৷ কেউ কেউ জানিয়েছেন, মাসাজ নেয়ার আগে তারা সাপের নাম শুনলেই ভয় পেতেন৷ কিন্তু মাসাজ নেয়ার পরে নাকি সেই ভয় কেটে গেছে৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন
বিশ্বে এমন মানুষের অভাব নেই, যাঁরা বিপদ ভালোওবাসেন৷ অন্যরকম কিছু করে বাড়তি আনন্দ পান তারা৷ এমন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের জন্য নাকি অজগরের মাসাজ আরো বেশি উপকারী৷ অজগর পিঠে চড়লে নাকি তাদের হরমোনের নিউট্রোট্রান্সমিটার ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
আছেন রক্ষাকর্তা
মাসাজের সময় কোনো মানুষকে কখনোই জলজ্যান্ত অজগরের কাছে একা ছেড়ে দেয়া হয় না৷ সবসময়ই একজন সুপারভাইজার কাছে থাকেন৷ তার কাজই হলো, অজগর কখনো থেমে যাচ্ছে কিনা, কোনো বিপদ ঘটাতে চাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
ব্রিটেন আর ফিলিপিন্সেও...
শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, ব্রিটেন আর ফিলিপিন্সেও সাপ দিয়ে মাসাজ করানো হয়৷ যাবেন নাকি?
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
7 ছবি1 | 7
সাপের ছোবলের কারণে মৃত্যুর সংখ্যার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায় ভারতের একটি গবেষণা থেকে৷ ওই গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ২০০৫ সালে ভারতে সাপের কামড়ে ৪৫,৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ আর এই সংখ্যাটি ছিল সরকারি হিসাবের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি৷
মৃত্যুর সংখ্যা বেশি উন্নয়নশীল দেশে
সাপের কামড়ে এভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে একবার জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান বলেছিলেন, ‘‘এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকট, যা আপনি কখনো শুনবেন না৷’’
উন্নত দেশে সাপের দংশনে মৃতের সংখ্যা দেখলে তাঁর এই বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়৷ কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর মাত্র ৫ জন লোক মারা যান সাপের কামড়ে৷ আর পশ্চিমা অনেক দেশে সাপের কামড়ে মৃত্যুর বিষয়টি কল্পকাহিনীর মতোই৷
ডাব্লিউএইচও বলছে, সাপের কামড়ে বেশির ভাগ লোক মারা যায় সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়৷ কারণ, সেখানে চিকিৎসা-সেবা অতটা পর্যাপ্ত নয়৷ আর ৮০ শতাংশের মতো লোক নিজেরাই সাপের কামড় খেয়ে স্থানীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্বারস্থ হন৷
এদিকে, বিষধর সাপের এলাকায় অ্যান্টি-ভেনম উৎপাদনের ব্যবস্থা না থাকায় তাদেরকে সেটার জন্য পশ্চিমা দেশের মুখাপেক্ষী হতে হয়৷ আর দাম বেশি হওয়ায় ওষুধ থাকে মানুষের আওতার বাইরে৷ এটাকে সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়ার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে ‘ডক্টর উইদাউট বর্ডার্স’৷
আবার দুর্গম ও দুরবর্তী এলাকার মানুষ খুব দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারেন না, যা সাপেড় কামড়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন৷ এ কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷
ক্লেয়ার রথ/এমবি
সাপ, কেঁচো খেয়ে বেঁচে থাকা
থাইল্যান্ডের চান্থাবুড়িতে শুরু হয়েছে থাই-মার্কিন বার্ষিক ‘কোবরা গোল্ড’ প্রশিক্ষণ৷ মূলত জঙ্গলে কীভাবে সেনাদের বেঁচে থাকতে হয়, তারই প্রশিক্ষণ হচ্ছে৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কীটপতঙ্গের সঙ্গে যুদ্ধ
জঙ্গলের ভিতর সৈন্যদের কীভাবে সাপ, মাকড়সাসহ অন্যান্য কীটের সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়, তার প্রশিক্ষণ হয় থাইল্যান্ডে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
সাপের কামড়
এক থাই সেনাকে কামড়ে ধরেছে একটি সাপ৷ যদিও সাপের বিষ দাঁত ভাঙা৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
২৯ দেশের অংশগ্রহণ
পর্যবেক্ষক ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ২৯টি দেশের সেনারা৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মাকড়সা যখন খাবার
এক সেনা মাকড়সা ধরে খাওয়ার চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কেউটের রক্ত
এই থাই সেনা জঙ্গলে বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ হিসেবে কেউটে সাপের রক্ত পান করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
প্রশিক্ষণ পর্ব
কীভাবে জঙ্গলে কেউটে সাপ ধরতে হয় তারও প্রশিক্ষণ চলছে এবং তারপর বিষ বের করে সেই সাপ খেতে হয় তা দেখাচ্ছেন একজন কমান্ডার৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মাকড়সার ডিম
মাকড়সার ডিম দেখে কীভাবে চিনবেন, তা-ই দেখাচ্ছেন একজন সেনা৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
সাপ ধরার প্রশিক্ষণ
সাপ কীভাবে ধরতে হয় তা দেখিয়ে দিচ্ছেন একজন প্রশিক্ষক৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
প্রাকৃতিক পানি
বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে পানি জমা থাকে৷ এমন উদ্ভিদগুলো চিনিয়ে দেয়া হয় প্রশিক্ষণে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কন্ডমে ভাত রান্না
কন্ডমের ভেতরে ভাত রান্নার পদ্ধতি দেখাচ্ছেন এক কমান্ডার৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কেঁচো
এক সৈন্য কেঁচো খাচ্ছেন৷ জঙ্গলের ভেতর যুদ্ধ চলাকালে কী খাবার পাওয়া যাবে, তাতো আর জানা সম্ভব নয়৷ তাই সবধরণের খাবার খাওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের৷