মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স দক্ষিণ কোরিয়া সফরের পর জাপানে এসেছেন৷ এই দুই দেশের নিরাপত্তার প্রতি ওয়াশিংটনের দায়বদ্ধতার কথা বলেছেন তিনি৷ উত্তর কোরিয়ার উপর চাপ বাড়াতে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ পেন্স বলেছেন, প্রয়োজনে কোনো পদক্ষেপ থেকেই অ্যামেরিকা বিরত থাকবে না৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার প্রতি ‘কৌশলগত ধৈর্য' শেষ হয়ে গেছে৷ তবে তাঁর প্রশাসন চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে বর্তমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে৷
এই অবস্থায় তর্জন-গর্জন আরও বাড়াচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ যে কোনো সময়ে সে দেশ ষষ্ঠ পরমাণু পরীক্ষা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিয়োল আরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার হুমকি দিয়ে বলেছেন, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক পরীক্ষা চালানো হতে পারে৷ তিনি আরও বলেন, তাঁর দেশ আক্রান্ত হলে পুরোপুরি যুদ্ধ শুরু করে দেবে৷ জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত সপ্তাহান্তে বলেছেন, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র বা পরমাণু হামলা চালানো হলে তাঁর দেশ পালটা জবাব দিতে প্রস্তুত৷
ঠিক এমন পরিস্থিতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় ভুগছে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান৷ যুদ্ধ হলে সবার আগে তারাই আক্রান্ত হবে বলে তাদের আশঙ্কা৷ নির্বাচনি প্রচারের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, জাপানকে তার নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যয় বহন করতে হবে৷ টোকিও সফরে এসে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স অবশ্য দুই দেশের নিরাপত্তা চুক্তির প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন৷ তাতে আশ্বস্ত হলেও ওয়াশিংটন যেভাবে উত্তর কোরিয়ার উপর সামরিক স্তরে চাপ বাড়াচ্ছে, সেটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ অ্যামেরিকা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিলে আঞ্চলিক সংঘাত অনিবার্য বলে জাপান মনে করে৷ তার চেয়ে চীনের উপর চাপ বাড়িয়ে উত্তর কোরিয়াকে শান্ত করার প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হবে৷
বিশেষজ্ঞদের অনেক পূর্বাভাষ ভুল প্রমাণ করে এখনো টিকে আছে কিম জং উন-এর স্বৈরাচারী শাসনযন্ত্র৷ শুধু তাই নয়, একের পর এক সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলকে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ এই সাফল্যের রহস্য কী?
ছবি: Reuters/KCNAকোনো ব্যক্তিকে সামান্যতম হুমকি মনে করলেই পথের কাঁটা হিসেবে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে পিছপা হন না কিম জং উন৷ সম্প্রতি তাঁর সৎ-ভাইকে যেভাবে মালয়েশিয়ায় খুন করা হয়েছে, তার পেছনে এই মনোভাব কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এর আগেও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashiনিজের পারিবারিক শাসনতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখতে ঘরে-বাইরে আস্ফালন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর কিম জং উন৷ ঘরের শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বাইরের জগতকে ক্ষেপণাস্ত্র ও আণবিক অস্ত্র দেখিয়ে ঠেকিয়ে রাখার নীতি অনুসরণ করে চলেছেন ‘মহান নেতা’৷ সেই কৌশল কাজ করছে বলেও অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: Reuters/KCNAউত্তর কোরিয়ার অনেক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বিফল হয়েছে৷ কিন্তু একের পর এক প্রচেষ্টা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার উপর সামরিক হামলার কথাও এতকাল ভাবতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Yeon-Jeপ্রশ্ন ওঠে, কার্যত একঘরে হয়ে থাকা একটি দেশ কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আয়ত্ত করছে? সেই ১৯৫০-এর দশকের মার্কিন, রুশ বা চিনা প্রযুক্তির ভিত্তিতেই উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ তাই সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে সাইবার হামলা চালানোরও কোনো উপায় নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kcnaআন্তর্জাতিক স্তরে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশ উত্তর কোরিয়া সাধারণ সীমান্তসহ একাধিক কারণে চীনের উপর নির্ভরশীল৷ তবে পিয়ংইয়ং ও বেইজিং-এর মধ্যে খোলাখুলি মতবিরোধ এখন আর বিরল ঘটনা নয়৷ এমন অবস্থা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতার স্বার্থে চীন সে দেশের প্রতি সংযম দেখিয়ে চলেছে এবং অন্যান্য দেশকেও সেই পরামর্শ দিচ্ছে৷
ছবি: MARK RALSTON/AFP/Getty Imagesউত্তর কোরিয়ার উপর প্রভাব কমে যাওয়ায় অন্যান্য দেশগুলিও আর চিনের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই চীনের দোরগড়ায় অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ফলে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে চিনের নিজস্ব স্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Department of Defense/Missile Defense Agency এসবি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স,)