সাফজয়ী মেয়েদের ‘ছাদখোলা বাস' নেই, মিয়ানমার যাওয়ার টাকাও নেই
৩১ মার্চ ২০২৩অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে এমন কারণ উল্লেখ করেই মেয়েদের ফুটবল দলকে মিয়ানমারে পাঠাচ্ছে না বাফুফে৷
হঠাৎ কেন এত অর্থ সংকট? বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের জবাব, ‘‘অলিম্পিক বাছাইয়ের এই খেলাটি হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু চার সপ্তাহ আগে এটি মিয়ানমারে করার সিদ্ধান্ত নেয় এএফসি। আর সে কারণেই সমস্যায় পড়েছে বাফুফে।'' সোহাগ আরো বলেন, ‘‘দেশের মাটিতে হলে বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া, কিংবা স্থানীয় যাতায়াত- এসব খরচ লাগতো না বাফুফের। কিন্তু এই টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, বাছাই পর্বে অংশ নেয়া কোনো দলেরই কোনো খরচ বহন করবে না স্বাগতিক দেশ। ফলে, এই টুর্নামেন্ট শেষ করে আসতে প্রায় এক কোটি টাকার মতো খরচ হবে বাংলাদেশের। সেই টাকা এই মুহুর্তে বাফুফের হাতে নেই।'''
অর্থাৎ, এক কোটি টাকার জন্য মেয়েদের দল মিয়ানমারে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ফুটবল ফেডারেশনকে নিতে হয়েছে বলে জানান আবু নাঈম সোহাগ।
কিন্তু জাতীয় দলের জন্য ফিফা টাকা দেয়, বাফুফের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তিও রয়েছে- তারপরও এক কোটি টাকাই জোগাড় হয় না?এ প্রশ্নের জবাবে সোহাগ বলেন, ‘‘ফিফা জাতীয় দলের জন্য বছরে চার ভাগে টাকা দেয়। এবার প্রথমভাগে যে রবাদ্দ পেয়েছিলাম, বয়সভিত্তিক দু-তিনটি টুর্নামেন্ট করে তা শেষ হয়ে গেছে। আবার পৃষ্ঠপোষক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকেও আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া পাইনি।''
তবে বাফুফের এই বক্তব্য মানতে পারছেন না ফুটবল কোচ এবং বাফুফের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য হাসানুজ্জামান খান বাবলু। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান কমিটি ফুটবলকে এগিয়ে নিতে যে পুরোপুরি ব্যর্থ, মেয়েদের মিয়ানমারে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত তারই প্রমান।'' বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের সমালোচনা করে বাবলু বলেন, ‘‘চেয়ারে বসার জন্য যারা ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ করতে পারে, তারা টাকার অভাব দেখিয়ে মেয়েদের খেলার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারছে না। এটা চূড়ান্ত লজ্জার এবং দুঃখজনক।''
মেয়েদের দলকে মিয়ানমারে পাঠানোর বিষয়ে বাফুফের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাসানুজ্জামান আরো বলেন, ‘‘বাফুফের বর্তমান কমিটির বেশিরভাগই এখন পদ ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছেন।'' বাফুফের gএক কর্মকর্তার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও যিনি রিকশায় চলাফেরা করতেন, তিনি এখন কয়েক কোটি টাকা দামের গাড়ীতে চড়েন। আমি যদি চেয়ারম্যান হতাম, তবে নিজের গাড়ি বিক্রি করে হলেও, মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠাতাম।''
তবে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও অভিজ্ঞ সংগঠক ফজলুর রহমান বাবুল মনে করেন সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বাফুফে মেয়েদের দল মিয়ানমারে না পাঠানোর কথা বলছে৷
তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন থেকেই সরকারের কাছ থেকে বড় অংকের তহবিল চাচ্ছে বাফুফে। সেটি না পেয়ে, নিজেদের একমাত্র ভালো দিককে ব্যবহার করে এখন এই কৌশল নিয়েছে তারা।''
তবে ফজলুর রহমান বাবুর এই বক্তব্যের জবাবে বাফুফে সাধারন সম্পাদক বলেন, ‘‘সরকারি সহযোগিতা ছাড়া মেয়েদের ফুটবলকে আমরা এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারতাম না। আরো সহযোগিতা চাই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, এমন কৌশলে আমরা টাকা আদায় করবো। অনেকটা নিরুপায় হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
টাকার অভাবে শুধু যে নারী দলকে বিদেশে পাঠানো যাচ্ছে না, ব্যাপারটাকে সেভাবে দেখতে নারাজ আবু নাঈম সোহাগ। বাফুফের এলিট অ্যাকাডেমিও যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, দেশের ফুটবল দিন দিন আরো বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে বলে মনে করছেন হাসানুজ্জামান এবং ফজলুর রহমানের মতো সংগঠকরা।