সাফাইকর্মীদের পা ধুয়ে দিয়ে চমক দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বিজেপির দাবি, মহাত্মা গান্ধীর পর আর কোনো নেতা এভাবে নিজেকে সমর্পণ করেননি৷ তবে বিরোধীদের বক্তব্য, ভোটের মুখে এটা দলিতদের মন জয়ের চেষ্টা৷
বিজ্ঞাপন
ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই৷ শাসক ও বিরোধী পক্ষ ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই নেমে পড়েছে প্রচারে৷ এরই মধ্যেই বেশ চমক সৃষ্টি করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ রবিবার তিনি উত্তরপ্রদেশে কুম্ভের সঙ্গমে স্নান সেরে গেরুয়া বসন পরে পুজো করেন৷ তারপর পাঁচ সাফাইকর্মীর পা ধুয়ে দেন৷ এই কর্মীরা কুম্ভমেলা সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত৷ দূরদর্শনে সরাসরি এই ছবি দেখা গেছে৷ মোদী জল দিয়ে নরেশ কুমার, ছবি, পেয়ারে লাল, জ্যোতি ও হোরি লাল নামে দলিত সাফাইকর্মীদের পা ধুয়ে দিয়েছেন৷
ভোটের আগে এই পর্ব যথারীতি নয়া আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, গান্ধীজির পর এই প্রথম কোনো নেতা দেশের পশ্চাদপদ শ্রেণির মানুষের সেবায় এভাবে নিজেকে সমর্পণ করলেন৷
‘জনতার আবেগে সুড়সুড়ি দেয়ার চেষ্টা'
তবে বিরোধীরা তীব্র কটাক্ষ করছেন মোদীর এই কাজের৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এটাকে নির্বাচনের কর্মসূচি বলেই মনে করছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটা একেবারেই ভোটকেন্দ্রিক প্রয়াস৷ ভোটের বাইরে কাজ নেই প্রধানমন্ত্রীর, তাই এসব করছেন৷ দলিতদের মন জয় করতে চাইছেন৷ তবে তাতে লাভ হবে না৷''
প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘গতবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তার একটাও পূরণ করতে পারেননি মোদী৷ এটা মানুষ ধরে ফেলেছে৷ সে কথা বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী নানা নতুন কৌশল নিচ্ছেন৷ এটা দেশের জনতার আবেগে সুড়সুড়ি দেয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়৷''
দেশ জুড়ে বিজেপির প্রধান বিরোধী কংগ্রেস৷ তাদের কেন্দ্রীয় নেতা পবন খেরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর যে দায়িত্ব পালন করা উচিত, তা কেন মোদী করেন না? দাদরিতে গোমাংস রাখার দায়ে সংখ্যালঘু হত্যা, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা, কাশ্মীরি ছাত্রদের উপর আক্রমণের পর কেন নীরব থাকেন মোদী?
জাতীয় স্তরে কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও পশ্চিমবঙ্গে সেই জায়গায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেও এটাকে ভোটের চমক বলে ব্যাখ্যা করেছেন৷ এই প্রবীণ তৃণমূল নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রচার ভালোবাসেন৷ স্নান করে তাই সাফাইকর্মীদের পা ধুয়ে দিয়েছেন৷ মোদীর শাসনে গত চার-পাঁচ বছরে দলিতরা খুব সংকটে রয়েছে৷ সেটা তারা ভুলে যাবে না৷ পা ধুয়ে দিলেও এই সমাজের সমর্থন বিজেপি পাবে না৷''
সাধন পাণ্ডে
উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, দলিত নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে সহমত পোষণ করে সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘বিজেপি উচ্চবর্ণের দল বলে পরিচিত৷ ওরা দলিতদের হিতাকাক্ষ্মী নয়৷ চমক দিয়ে এই ভাবমূর্তি বদল করা যাবে না৷''
‘ভোটের পর উনি মাথায় পা রেখে চলবেন'
বামপন্থিদের শক্তি গত কয়েক বছরে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে রাজ্য ও দেশে৷ তবু রাজনৈতিক অবস্থানের নিরিখে তারা বরাবরই বিজেপির কঠোর সমালোচক৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী মোদীর কাজকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের আগে পা ধুয়ে দেয়া মানে ভোটের পর উনি সাফাইকর্মীদের মাথায় পা রেখে চলবেন৷ এখন দেখাতে চাইবেন তিনি দলিতের বন্ধু, কিন্তু নির্বাচনের পর শিল্পপতি আদানি, আম্বানিরা হবেন ওঁর সঙ্গী৷''
বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছেন, প্রধানমন্ত্রী সাফাইকর্মীদের পা ধুয়ে এক মহান বার্তা দিতে চেয়েছেন দেশবাসীকে৷ সমাজে এখনও যে অস্পৃশ্যতা, ভেদাভেদের বিষ আছে, তা দূর করবে দেশের শীর্ষ নেতার এই চেষ্টা৷
এই দাবি খারিজ করে দিয়ে সুজন বলেন, ‘‘দলিতদের প্রয়োজন না মিটিয়ে এই বার্তা দেয়া মূল্যহীন৷ পিছিয়ে থাকা এসব মানুষের দাবি, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, ১৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মাসিক বেতন, উন্নততর জীবনযাত্রা৷ এই দাবি পূরণের জন্য ওঁর সরকার কী করেছে?''
সুজন চক্রবর্তী
দলিতদের প্রতিক্রিয়া
এ ব্যাপারে কী বলছেন দলিতরা? পশ্চিমবঙ্গের দলিত ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রাজু ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোটের আগে এটা একটা মার্কেটিং কনসেপ্ট৷ আমরা এটা মানি না৷ এখন দলিতদের পা ধুয়ে মোদী বোঝাতে চাইছেন, সংখ্যালঘু, দলিতরা সবাই সমান৷ কিন্তু এখন তো অত্যাচার আগের থেকে বেশি হচ্ছে৷ কৃষকরা অত্যাচারিত হচ্ছেন৷ বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন দলিতরা৷ দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসন উচ্চবর্ণের কাছে মোটা টাকায় বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে৷''
রাজুর দাবি, দেশের স্বার্থে শহিদ হওয়া দলিত জওয়ানকে যে দেশে উচ্চবর্ণের লোকেরা শেষকৃত্যের জন্য জায়গা দেয়নি, সেখানে প্রধানমন্ত্রী পা ধুইয়ে কী প্রমাণ করতে চান? তাঁর মতে, শুধু বিজেপি নয়, কোনো দলই দলিতদের স্বার্থ দেখেনি৷
নরেন্দ্র মোদীরডাকে স্বচ্ছ ভারত অভিযান চলছে সারা দেশে৷ তাই সাফাইকর্মীদের গুরুত্ব বাড়ারই কথা৷ দমদম এলাকার সাফাইকর্মী দীনেশ মাহারা, রামু প্রামানিকের জীবনে অবশ্য বড় কোনো বদল আসেনি৷ তাঁরা বলেন, ‘‘কোনো দলই দলিতদের জন্য কাজ করে না৷ ভোটের আগে অনেক কথা শোনা যায়৷ দলিত বাড়িতে এসে খাওয়ার হিড়িক শুরু হয়৷ ভোট মিটে গেলে আবার একইরকম৷ মোদীর ব্যাপারটাও ভোটে লাভ তোলার চেষ্টা৷''
বিজেপিকে চিনে নিন
ভারতে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি৷ বর্তমানে জাতীয় ও রাজ্যস্তরে সর্বাধিক প্রতিনিধিত্ব রাখা দলটি সদস্য সংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম৷ ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী অবস্থানের বিজেপির গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. K. Singh
আদর্শগত উৎস
বিজেপিকে চিনতে হলে ‘সংঘ পরিবার’-এর অন্তর্গত হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির উৎস আরএসএস অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে জানা দরকার৷ বিশ্বের বৃহত্তম এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মারাঠি চিকিৎসক কেশব হেডগেওয়ার৷ ১৯২৫ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ ভি ডি সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণই আরএসএস-এর প্রধান উদ্দেশ্য৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরত্ব
কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে ছিল আরএসএস৷ ১৯৪০-এর দশকে সংগঠনের নেতা হিসেবে এম এস গোলওয়ালকর হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে ব্রিটিশ বিরোধিতার বদলে ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার ডাক দেন৷ উল্লেখ্য, পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অটলবিহারী বাজপেয়ী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় সত্যাগ্রহীদের সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ লিখিত মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাড়া পান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Desfor
দেশভাগ ও আরএসএস
দেশভাগের সময় আরএসএস পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের সাহায্য করে৷ আরএসএস ও বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কর্মীরা মনে করেন, দেশভাগ মুসলিমদের প্রতি নরম আচরণের ফল৷ এজন্য গান্ধী ও নেহরুকে বিশেষভাবে দায়ী মনে করেন তাঁরা৷ স্বাধীনতার পর কংগ্রেসকে ঠেকাতে ১৯৫১ সালে জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ সেই জনসংঘই আসলে বিজেপির উৎস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জরুরি অবস্থা ও জনতা পার্টির জন্ম
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে জনসংঘের অসংখ্য সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা শেষে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন৷ কংগ্রেসকে হারাতে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে যায় জনসংঘ, জন্ম নেয় জনতা পার্টি৷ নির্বাচনে জিতেও যায় জনতা পার্টি৷ প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই৷ স্বাধীন ভারতে সূচিত হয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ জয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজেপির জন্ম
১৯৮০’র পর দল ও আরএসএসের দ্বৈত সদস্য হবার বিধান না থাকায় জন্ম নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি৷ নতুন দলে নতুন সদস্য যোগ দিলেও, গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল পুরোনোদের দাপট৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন বাজপেয়ী৷ মূলত, ইন্দিরা হত্যার পর ভোটে খারাপ করার কারণেই নেতৃত্বে এই পরিবর্তন৷ তবে বিজেপির উত্থান শুরু ১৯৮৪ সালে৷ সে বছর দলের সভাপতি হন লালকৃষ্ণ আডবানি৷ রাম জন্মভূমির দাবিকে ঘিরে তাঁর নেতৃত্বেই শক্তিশালী হতে থাকে বিজেপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও বাবরি মসজিদ
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বিজেপি সরাসরি ধর্মের রাজনীতিতে নামে৷ বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির গঠনের দাবিতে সারা দেশ থেকে অযোধ্যার পথে রওয়ানা দেয় হাজার হাজার ‘করসেবক’৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে উত্তেজিত জনতা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হন দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
সরকার গঠন ও জোটের রাজনীতি
সাম্প্রদায়িক আবেগকে হাতিয়ার করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি ১৬১টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়৷ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ী৷ কিন্তু ১৩ দিন পর, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি৷ ১৯৯৬ সালে আঞ্চলিক দলগুলির একটি জোট সরকার গঠন করে৷ কিন্তু সেই সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়নি৷ ১৯৯৮ সালে আবার নির্বাচন হয়৷
ছবি: UNI
প্রথম এনডিএ সরকার
নির্বাচনে জিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার গড়ে৷ জোটে অংশগ্রহণ করে সমতা পার্টি, অকালী দল, শিব সেনা, নিখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (এআইএআইডিএমকে), বিজু জনতা দল ও শিব সেনা৷ ১৯৯৯ সালে তাঁরা সংসদে ৩০৩টি আসন জিতলে বাজপেয়ী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন৷ পাঁচ বছরের পূর্ণমেয়াদী এই জোট সরকার প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসের মোকাবিলার পাশাপাশি নব্য-উদার অর্থনীতির ওপর জোর দেয়৷
ছবি: Imago/photothek/T. Koehler
দুর্নীতি ও দাঙ্গায় কোণঠাসা বিজেপি
বিজেপির জয়রথে প্রথম ‘বাধা’ গোধরা দাঙ্গা৷ তীর্থযাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগাকে ঘিরে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যান৷ তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতার নাম এই দাঙ্গার সাথে জড়ায়৷ বিজেপি-প্রধান বঙ্গারু লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ৷ সব মিলিয়ে বিপন্ন বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট ২০০৪ সালে নতুন সরকার গড়ে৷ প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং৷
ছবি: AP
নেতৃত্বে কে? মোদী, না আডবাণী?
২০১৪’র লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে বিজেপি৷ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দলের নেতৃত্বের দায়ভার বর্ষীয়ান নেতা এল কে আডবানির ওপর বর্তানোর কথা উঠলেও, বাস্তবে তা হয়নি৷
ছবি: AP
মোদীর উত্থান
বিজেপির ইতিহাসে ব্যক্তিকেন্দ্রীক নির্বাচনী প্রচার মোদীর ক্ষেত্রেই প্রথম৷ পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে মোদীর ‘গুজরাট মডেল’-কে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয় প্রচারে৷ সুবক্তা মোদী শীঘ্রই হয়ে ওঠেন তরুণ প্রজন্ম থেকে সংবাদমাধ্যম, সকলের প্রিয়পাত্র৷ নির্বাচনের আগে বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে গেলেও, মোদীর প্রাক-নির্বাচন বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল ‘হিন্দুত্ব’৷
ছবি: picture alliance/AA/M. Aktas
মোদী থেকে ‘মোদীজি’
২০১৪ সালে বিজেপি ২৮২টি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে৷ ভোটারদের কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থার পাশাপাশি বিজেপির সাফল্যের আরেকটি কারণ ছিল আরএসএসের নিঃশর্ত সমর্থন৷ নরেন্দ্র মোদীই হন প্রধানমন্ত্রী৷ পিউ গবেষণা কেন্দ্রের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রথম বছরের তুলনায় বর্তমানে মোদীর জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে, যা ২০১৯-র নির্বাচনে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির জন্যও নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়৷
ছবি: Reuters
12 ছবি1 | 12
এই সুরেই মহিলা সাফাইকর্মী ললিতা দেবী বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি অত্যাচার হয় দলিতদের উপর৷ সব আমলেই তাই৷ তবে প্রধানমন্ত্রী আমাদের মতো কারোর পা ধুয়ে দিচ্ছেন, এটা টিভিতে দেখে ভালোই লেগেছে৷''
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি প্রাথমিকভাবে উচ্চবর্ণের দল বলে চিহ্নিত হওয়ায় সমাজের সব স্তরের মধ্যে তাদের জনভিত্তি কম৷ ফের একবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি পাওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের মরসুমে নরেন্দ্র মোদী নিজেকে দলিত-দরদী বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷