করোনা সংকটে জার্মানির পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল থাকায় জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি কিছু বিধিনিয়ম শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিলো৷ তবে ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার পর্যন্ত সাবধানতা বজায় রাখা হবে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল করোনা সংকটের ক্ষেত্রে পরবর্তী পরবর্তী পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরলেন৷ ম্যার্কেল বলেন, এখনো পর্যন্ত কোনো ওষুধ ও টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় মৌলিক সাবধানতার বিধিনিয়ম জার্মানিতে আপাতত চালু থাকছে৷ অর্থাৎ মানুষের মধ্যে দেড় মিটার ব্যবধান, দোকানবাজারসহ কিছু জায়গায় মাস্ক পরার নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি সার্বিকভাবে বজায় থাকবে৷ কারণ এই সব পদক্ষেপের ফলে জার্মানিতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ ফলে সেই সাফল্য ত্যাগ করার কোনো কারণ দেখছেন না ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতারা৷ জনসাধারণের উদ্দেশ্যেও সাবধানতা বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে৷
সার্বিক বিধিনিয়ম চালু রেখেও কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শিথিল করার কথা ঘোষণা করলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ যেমন পরিস্থিতির অবনতি না ঘটলে গ্রীষ্মের ছুটিরপর সব রাজ্যে স্কুল খোলা হবে৷ তবে পুরোদমে স্কুল চালু হতে আরও কিছু সময় লাগবে৷ শিক্ষার বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারে থাকায় বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের এক বৈঠকে সে বিষয়ে স্পষ্ট দিশা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
খেলাধুলা, সংগীত বা অন্য সব ক্ষেত্রে বড় আকারের অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমপক্ষে অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে৷ এভাবে মানুষের ভিড় যতটা সম্ভব কম রাখতে চায় ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি৷ এমন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সংক্রমণ ঘটলে সব দর্শকদের চিহ্নিত করে যোগাযোগ করা কার্যত অসম্ভব৷ তাই এ ক্ষেত্রে এখনো কোনো ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে না৷ তবে কোনো রাজ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেখানে এমন কড়াকড়ি তুলে নেওয়া হতে পারে৷
মঙ্গলবার জার্মানিতে করোনা-অ্যাপ চালু হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ম্যার্কেল৷ তাঁর মতে, সূচনা ভালোই হয়েছে, এবার সেই হাতিয়ারকে কার্যকর করো তোলার পালা৷ সংক্রমণ চিহ্নিত করার কাজে সাহায্য করতে যে সব নাগরিক স্বেচ্ছায় এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ম্যার্কেল৷ উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরের মধ্যেই ৭০ লাখ বার এই অ্যাপ ডাউনলোড করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে৷
জার্মানির ফেডারেল কাঠামোর আওতায় রাজ্য সরকারগুলির নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও করোনা সংকটের শুরু থেকে ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রে সফল সমন্বয়ের প্রশংসা করেন বাভেরিয়ার মূখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার৷ তাঁর মতে, সাবধানতা বজায় রেখে যেভাবে বিধিনিয়ম ধাপে ধাপে শিথিল করা হচ্ছে, সেটাই সঠিক পথ৷
করোনা সংকটের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে পদক্ষেপ সম্পর্কেও বুধবারের বৈঠকে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ঐকমত্য দেখা গেছে৷ ১৩,০০০ কোটি ইউরো অঙ্কের অর্থনৈতিক প্রণোদনার ফলে আগামী মাসগুলিতে অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে শীর্ষ নেতারা আশা প্রকাশ করেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
১৪ জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানিতে করোনার গুচ্ছ প্রাদুর্ভাব
জার্মানিতে সাধারণভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে৷ কিন্তু প্রায়ই বিভিন্ন কমিউনিটিতে হুট করে প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
সার্বিকভাবে কমেছে করোনা
গেল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের হিসেবে এ পর্যন্ত জার্মানিতে এক লাখ ৮৫ হাজারের কিছু বেশি কেস ধরা পড়েছে৷ এদের আট হাজার ৭৫৫ জন মারা গেছেন৷ প্রায় ছয় হাজার এখনো অসুস্থ৷ ১২২টি জেলায় আর কোন আক্রান্ত নেই
ছবি: imago images/Arnulf Hettrich
সংক্রমণ থেমে নেই
করোনার সংক্রমণের হার কমলেও থেমে যায়নি৷ গেল সপ্তাহে দেশটিতে গড়ে লাখে প্রায় তিনজন (২.৯ জন) আক্রান্ত হচ্ছেন৷ লাখে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাভেরিয়া (৩৬৪), বাডেন-ভ্যুটেমব্যের্গ (৩১৬), জারলান্ড (২৭৯) ও হামবুর্গ (২৭৮)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
গুচ্ছভাবে ছড়াচ্ছে
নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সম্প্রতি বেড়েছে এমন রাজ্যগুলোতে দেখা গেছে, তা কোনো ছোট কমিউনিটিকে কেন্দ্র করে বাড়তে শুরু করেছে৷ কোথাও শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ক্যাম্প ও আবাস এলাকায়, কোথাও মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা কিংবা লজিস্টিক্স কোম্পানিতে, কোথাও মৌসুমী ফসল তোলার সময় কর্মীদের মাঝে এবং কোথাও ধর্মীয় উৎসব কিংবা পারিবারিক মিলনমেলায় ঘটনাগুলো ঘটছে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
গ্যোটিঙ্গেন নিয়ে আলোচনা
লোয়ার সাক্সনি রাজ্যোর শহর গ্যোটিঙ্গেনে সর্বশেষ গুচ্ছ ঘটনাটি ঘটেছে৷ নগরকর্তৃপক্ষ বলছে, ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সের এক ঈদ পুনর্মিলনী জমায়েত থেকেই নতুন করে শুরু হয় সংক্রমণ৷ এতে স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়৷ বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ তা না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pförtner
ব্রেমারহাফেনের চার্চ থেকেও
রাজ্যের ব্রেমারহাফেন শহরের একটি চার্চের সভা থেকেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে৷ এছাড়া সেখানে একটি বড় পারিবারিক অনুষ্ঠানও হয়৷ এ থেকে শুধু ব্রেমারহাফেনই নয়, পার্শবর্তী কুক্সাভেন শহরেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে৷ আরো কয়েকটি রাজ্যে নানা ধর্মের মানুষের সমাবেশ থেকে করোনা ছড়িয়েছে৷
ছবি: Gemeinde der Christuskirche Bremerhaven
আইশাখ-ফ্রিডব্যের্গে কী ঘটল?
বাভেরিয়া রাজ্যের আইশাখ-ফ্রিডব্যের্গ এলাকায় ফসল তোলার সময় কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে করোনা৷ বিষয়টি ধরা পড়লে ফসল তোলা বন্ধ করে দেয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে৷ ট্রেসিং ও টেস্টিং শুরু হয়৷ কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
জনারব্যের্গের নার্সিং হোম
থুরিঙ্গিয়া রাজ্যের জনারব্যের্গ শহরে বয়স্কদের জন্য একটি নার্সিং হোমেও সম্প্রতি সার্স-কোভ-২ ছড়িয়ে পড়ে৷ নার্সিং হোমের বাসিন্দা ও কর্মচারীদের অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন৷ পার্শ্ববর্তী শহর কোবুর্গেও এমন ঘটনার কথা শোনা যায়৷ ডায়লাইসিস চিকিৎসার সঙ্গে এই ছড়িয়ে পড়ার সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়৷
ছবি: Imago Images/photothek/I. Kjer
কারখানায়, কোম্পানিতে
কয়েকটি রাজ্যে মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা থেকে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে৷ পরে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷ এছাড়া নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া ও লোয়ার সাক্সনি রাজ্যের কয়েকটি বড় লজিস্টিক্স কোম্পানির কর্মীদের মাঝে নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেখা গেছে৷