জেব্রা ক্রসিং সব গাড়িচালকই চেনেন, কিন্তু লায়ন ক্রসিং? ভারতের গুজরাট রাজ্যের আমরেলি জেলার পিপাভাও-রাজুলা হাইওয়েতে সেই লায়ন ক্রসিংয়ের জন্য যানজট হয়ে সে এক কেলেংকারি৷
বিজ্ঞাপন
১৪ই এপ্রিলের ঘটনা, ভিডিওটা ইউটিউবে ওঠার পর তা ভাইরাল হয়ে যেতে স্বভাবতই বেশি সময় লাগেনি৷ অন্তত বারোটি এশিয়াটিক লায়নের একটি দল সন্ধ্যার অন্ধকারে রাস্তা পার হচ্ছে৷ দু'পাশে গাড়ির হেডলাইটের আলোয় তাদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷
এএনআই নিউজে প্রকাশিত ভিডিওটি দৃশ্যত একটি গাড়ির ভিতর থেকে তোলা; ভেতরে গান বাজছে; এক মহিলা ও এক পুরুষের কথাবার্তাও শোনা যাচ্ছে৷ পুরুষটি এক-দুই-তিন করে সিংহ গোনার চেষ্টা করলেন৷
ততক্ষণে গাড়ির বাঁ দিকে এক মোটরসাইকেল চালক তার পেছনে বসা বন্ধু বা সহযোগীকে নিয়ে অকুস্থলে পৌঁছে গেছেন৷ হাফ শার্ট পরে, মোটরসাইকেল থেকে পা নামিয়ে বসে এই দুই অকুতোভয় সিংহদের রাস্তা পার হওয়া দেখছেন যেন ভেড়া কি ছাগলের পাল রাস্তা পার হচ্ছে৷
ভিডিওর শেষে বাকি সব সিংহ হাইওয়ের কংক্রিটের বাঁক পার হয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে, শুধু এক বেচারা বোধহয় একটু দেরি করে ফেলেছিল – তার আর হাইওয়ে পার হওয়ার সাহস হয়নি; মাঝপথে উল্টোমুখে বেঁকে সে আবার ফেরৎ গেছে৷ ট্রাফিক আটকে রয়েছে তখন প্রায় পনেরো মিনিট৷
তিনটি প্রশ্ন থেকে যায়: সিংহরা কি এই হাইওয়ে নিয়মিত পার হয়? দ্বিতীয়ত, তারা কি ঠিক এ জায়গা দিয়েই পার হয়? তৃতীয়ত, ইউটিউব স্টার হওয়ার পরেও কি তারা ভরসন্ধ্যেয় ওভাবে রাস্তা পার হবে?
এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, গুজরাটের ওই এলাকায় বহু সিংহ গাড়ি আর ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে৷
এসি/এসিবি
সিংহ আর ভাল্লুকটি প্রাণে বাঁচল যেভাবে
সিম্বা হলো এক পুরুষ সিংহ আর লুলা এক মাদি ভাল্লুক৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের নোংরা, পরিত্যক্ত অবস্থায় মোসুলের চিড়িয়াখানায় খুঁজে পাওয়া যায়৷ এপ্রিলের গোড়ায় তাদের বিমানে করে জর্ডানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
আইএস-এর মোসুল দখলের দাম যারা দিল
মাদি ভাল্লুক লুলা আর মদ্দা সিংহ সিম্বা ছিল মোসুলের চিড়িয়াখানায় শেষ দু’টি জীবিত প্রাণী৷ আইএস যোদ্ধারা মোসুল দখল করার পর যে যুদ্ধ শুরু হয়, বেসরকারি মালিকানার মোসুল জু-র প্রাণীদেরও তার দাম দিতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/G. Romero
আইএস-এর হাত থেকে মুক্তি
চিড়িয়াখানাটি মোসুলের পূর্বাংশে৷ চার মাস ধরে অভিযান চালানোর পর ইরাকি সৈন্যরা এলাকাটি পুরোপুরি মুক্ত করেছে, যদিও নদীর ওপারে এখনও যুদ্ধ চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/G. Romero
‘কেউ কি আমার কথা ভাবে?
‘ফোর প’জ ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রাণী কল্যাণ সংস্থা সিম্বা আর লুলাকে মোসুল থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
যে অবস্থায় তারা ছিল...
ক্ষুধিত, নোংরা, নিঃসঙ্গ – পশুরাজ আর মাদি ভাল্লুক তখন শুধু মৃত্যুর অপেক্ষায়, চিড়িয়াখানার অন্যান্য বহু প্রাণীর ভাগ্যে যা ইতিমধ্যেই জুটেছে৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
জীবন-মরণের সংগ্রাম
মোসুল ছিল ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর৷ ২০১৪ সালের জুন মাসে আইএস মোসুল দখল করে৷ তারপর একটানা লড়াই আর বোমাবর্ষণের মাঝে চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দি জীবজন্তুদের কথা কে ভাববে?
ছবি: Reuters/M. Hamed
কী করে বাঁচল সিম্বা আর লুলা?
প্রথমে আশেপাশের লোকজন দয়া করে যে খাবার দিত, তাই খেয়ে৷ পরে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে তাও বন্ধ হয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
খাবারের বদলে বোমা
এলাকার মানুষজন শোনান, কীভাবে চিড়িয়াখানার উপর একবার একটি বোমা এসে পড়ার পর ক্ষুধার্ত বানরেরা ছাড়া পেয়ে সেখান থেকে পালায় – অন্যদিকে বহু জীবজন্তু না খেতে পেয়ে মরে৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
মুক্তি না হলেও, ত্রাণ
‘ফোর প’জ ইন্টারন্যাশনাল’-এর পশুচিকিৎসকরা সিম্বা আর লুলাকে মোসুল থেকে বার করে নিয়ে যেতে সমর্থ হন৷ লালফিতের দরুণ বহু বিলম্বের পর ইরাকের কুর্দি রাজধানী আরবিল থেকে তাদের বিমানযোগে জর্ডানে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
শেষ মুহূর্তে
ডাক্তাররা যখন সিম্বা আর লুলার কাছে পৌঁছান, তখন তাদের মরণাপন্ন অবস্থা৷ তবে জর্ডানে তাদের চিকিৎসা ও দেখাশোনা চলেছে, ফলে তারা ভালো হওয়ার পথে৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
জীবে প্রেম করে যেই জন
মোসুলে ‘ফোর প’জ ইন্টারন্যাশনাল’ সংস্থার প্রেরিত গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন মিশরীয়-অস্ট্রিয়ান পশুচিকিৎসক, ৫২ বছর বয়সি আমীর খলিল৷ সংস্থাটি গাজা স্ট্রিপ, আরব বসন্তের সময় মিশর এবং লিবিয়াতেও এ ধরনের কাজ করেছে৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
নতুন জীবন
খলিল নিজেকে বলেন ‘‘যুদ্ধপীড়িত এলাকার ভ্রাম্যমান পশুচিকিৎসক’’৷ তাঁর চোখে লুলা আর সিম্বাও ‘‘উদ্বাস্তু’’৷ বিমান আকাশে ওড়ার আগে খলিল মন্তব্য করলেন, ‘‘এই দু’টি প্রাণীর নতুন জীবন শুরু হচ্ছে; এখন থেকে ওরা আর এই যুদ্ধের অংশ থাকবে না৷’’