অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক করলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ। সাবমেরিন বিতর্কের পর এই প্রথম এমন বৈঠক হলো।
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু-চালিত সাবমেরিন বিক্রি করা নিয়ে ফ্রান্স ও অ্যামেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন খুবই খারাপ। সেই সম্পর্ককে মেরামত করার চেষ্টা হলো। মঙ্গলবার ব্লিংকেন বৈঠক করলেন মাক্রোঁর সঙ্গে।
অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু-চালিত সাবমেরিন বিক্রি করার কথা ছিল ফ্রান্সের। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সকে অন্ধকারে রেখে অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্য পরমাণু-চালিত সাবমেরিন নিয়ে একটি চুক্তি করে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। এতেই ব্যাপক চটে যায় ফ্রান্স। অ্যামেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়। পরে বাইডেন ফোনে কথা বলেন মাক্রোঁর সঙ্গে। তাতে বরফ একটু গলে।
কী আলোচনা হলো
ব্লিংকেন দুইদিনের সফরে ফ্রান্স গেছেন। কিন্তু তার সঙ্গে মাক্রোঁর বৈঠক হবে তা আগে ঠিক ছিল না। ফলে এই বৈঠক অনেককেই অবাক করেছে।
দুই নেতা ৪০ মিনিট ধরে কথা বলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দেশের সহযোগিতা কী করে বাড়ানো যায়, তা নিয়েই কথা হয়েছে। ব্লিংকেন মাক্রোঁকে জানিয়েছেন, ন্যাটোর গুরুত্ব না কমিয়ে নিজেদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপ যে উদ্যোগ নেবে, অ্যামেরিকা তাকে সমর্থন জানাবে।
মাক্রোঁর অফিসও জানিয়েছে, এই বৈঠক হয়েছে। তারা বলেছে, ব্লিংকেনের সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যে আবার আস্থা ফিরবে।
মাক্রোঁ ও বাইডেনও চলতি মাসে বৈঠকে বসতে পারেন। তানিয়েও দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে। ব্লিংকেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
বাইডেন-মাক্রোঁ ফোনে কথা, বরফ গলার ইঙ্গিত
কথা বলতে চেয়েছিলেন বাইডেনই। বুধবার মাক্রোঁর সঙ্গে তার কথা হলো। অ্যামেরিকায় আবার রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠাবে ফ্রান্স।
ছবি: Brendan Smialowski/AP/picture alliance
ফোনে কথা
বুধবার বাইডেনের সঙ্গে মাক্রোঁর ফোনে আধঘণ্টা ধরে কথা হয়। অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু-চালিত সাবমেরিন দিচ্ছে অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্য। এই সাবমেরিন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল ফ্রান্সের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার। ফলে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার উপর ব্যাপক চটে যায় ফ্রান্স। তারপরই বাইডেন কথা বলতে চান ম্যাক্রোঁর সঙ্গে।
ছবি: Phil Noble/AFP/Getty Images
বাইডেনের স্বীকারোক্তি
মাক্রোঁকে বাইডেন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি করার আগে তাদের ফ্রান্সের সঙ্গে কথা বলে নেয়া উচিত ছিল। পরামর্শ করা উচিত ছিল। ভবিষ্যতে তা অবশ্যই করা হবে। অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু-চালিত সাবমেরিন দেয়া নিয়েই নিরাপত্তা চুক্তি হয়েছে। বাইডেনের এই` স্বীকারোক্তির ফলে বরফ কিছুটা গলে। উপরের ছবিটি পরমাণু-চালিত সাবমেরিনের।
ছবি: Amanda R. Gray/U.S. Navy via AP/picture alliance
মাক্রোঁর সিদ্ধান্ত
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা চুক্তি হওয়ার পর ফ্রান্স ওয়াশিংটন থেকে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায়। বাইডেনের স্বীকারোক্তির পর মাক্রোঁ ঠিক করেছেন, রাষ্ট্রদূতকে আবার ফেরত পাঠানো হবে। তিনি আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন যাবেন। তারপর মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন।
ছবি: Ludovic Marin/AFP
বাইডেনের কৌশল
বাইডেন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে কিছু বলেননি, তিনি প্রক্রিয়াগত ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। আগে পরামর্শ করে নেয়া উচিত ছিল তা বলেছেন এবং ভবিষ্যতে পরামর্শ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আধঘণ্টা ধরে মাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে এটাই ছিল বাইডেনের কৌশল। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি অটুট থাকছে।
ছবি: Evan Vucci/AP Photo/picture alliance
অক্টোবরে বৈঠক
অক্টোবরে বাইডেন ও মাক্রোঁ বৈঠক করবেন। ইউরোপে এই বৈঠক হবে। সেখানে সাবমেরিন-বিতর্কের পর দুই দেশের সম্পর্ককে আরো জোরদার করার চেষ্টা করা হবে। দুই দেশই জানিয়েছে, মুখোমুখি ও খোলাখুলি আলোচনা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
ছবি: Brendan Smialowski/AP/picture alliance
মাক্রোঁর জন্য
আগামী বছর মাক্রোঁকে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে। তাই তিনি তার কড়া মনোভাব নিয়েই চলবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সেই সঙ্গে তিনি এই বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবেন।
ছবি: Ludovic Marin/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
কেন সম্পর্ক খারাপ হয়
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্যের সাবমেরিন নিয়ে চুক্তির পর ফ্রান্স বলেছিল, তাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে।
তারপরই মাক্রোঁ অ্যামেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠান। বাইডেন প্রশাসন এরপর থেকেই বলে আসছে, এই পরিস্থিতি ভিন্নভাবে মোকাবিলা করা উচিত ছিল। আরো খোলাখুলি আলোচনা হলে সব পক্ষই উপকৃত হতো।
পরে বাইডেন ফোন করেন মাক্রোঁকে। তিনি পদ্ধতিগত ভুল স্বীকার করে নেন। কিন্তু তারপরেও মাক্রোঁ বলেছেন, ইউরোপের উচিত নিজেদের নিরাপত্তা কৌশল নিজেরাই বসে ঠিক করা।