বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে সাবমেরিন যুক্ত হবে ২০১৫ সাল নাগাদ৷ আর এজন্য সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার নিরাপত্তার জন্য সাবমেরিনের প্রয়োজন আছে৷
বিজ্ঞাপন
চীন থেকে কেনা যুদ্ধজাহাজ ‘আলী হায়দার' ও ‘আবু বকর' গত ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তাস্তর করা হয়৷ আর ২৭ জানুয়ারি জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম নেভাল জেটিতে এসে পৌঁছায়৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটিতে যুদ্ধ জাহাজ দুটির নামফলক উন্মোচন ও কমিশনিং করেন৷
‘জিয়াংহু-৩' ক্লাসের মিসাইল ফ্রিগেট দুটি দৈর্ঘ্যে ১০৩ দশমিক ২২ মিটার এবং প্রস্থে ১০ দশমিক ৮৩ মিটার৷ জাহাজ দুটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম৷ আধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি যুদ্ধ জাহাজ বিমান বিধ্বংসী কামান, জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল এবং সমুদ্র তলদেশে সাবমেরিনের অবস্থান শনাক্তকরাসহ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম৷
কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের জলসীমা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জলপথে দেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই৷''
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত করতে এই বাহিনীতে ২০১৫ সালের মধ্যে দুটি সাবমেরিন সংযোজন করা হবে৷''
পটুয়াখালীর রামনাবাদে একটি বৃহত্ নৌঘাঁটি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটি সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপনেরও চিন্তা-ভাবনা চলছে৷'' মিয়ানমারের পর এবার ভারতের সঙ্গেও সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মূলকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর
বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দরের অবস্থান চট্টগ্রামে৷ সে কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটিকে বলা হয় বন্দর নগরী৷ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ঘিরে চোরাচালানি, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কাজ এগিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: cpa.gov.bd
প্রধান সমুদ্র বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর৷ প্রতিবছর কয়েক লাখ কন্টেইনার এই বন্দর থেকে পরিবহন হয়৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ ছিল ৫,৫৬,৭৮১ টি৷
ছবি: gemeinfrei
বহু পুরনো বন্দর
কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর চালু হয়েছিল উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলের শুরুর দিকে৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন, পরে ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়৷’’
ছবি: Getty Images
পৃথিবীর নব্বইতম ব্যস্ত বন্দর
সমুদ্র সংক্রান্ত পত্রিকা লয়েড-এর প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হচ্ছে পৃথিবীর ৯০তম ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর৷ প্রতিনিয়ত এই বন্দরের চাহিদা বাড়ছে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত অনেকটা এই বন্দরের উপরই নির্ভরশীল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: imago
রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাঝেমাঝেই ক্ষতির শিকার হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর৷ কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৯৫ শতাংশ সড়কপথ এবং ৫ শতাংশ রেলপথে হয়ে থাকে৷ হরতাল, অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পণ্য পরিবহনে বিঘ্ন ঘটে৷ এতে করে আমদানি পণ্য যেমন বন্দরে আটকে যায়, তেমনি রপ্তানির জন্য পণ্য জাহাজে তোলা যায় না৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
চোরাচালান, দুর্নীতি
চোরাচালানের জন্য মাঝেমাঝেই চট্টগ্রাম বন্দর পত্রিকার পাতায় স্থান করে নেয়৷ এছাড়া চুরি, ডাকাতির ঘটনাও ঘটে৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সতর্ক নিরাপত্তা বাহিনী
চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে কোস্টগার্ড৷ গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ড দাবি করে, আগের বছরের তুলনায় ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-দস্যুতা ৫০ ভাগ কমেছে৷ ২০১২ সালে ৫৮৬ কোটি, ২০১১ সালে ৩০২ কেটি টাকার চোরাচালানি পণ্য আটক করা হয়েছে বলেও ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: REUTERS
ভারত, ভুটানের আগ্রহ
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং ভুটানের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে৷ এই আগ্রহের বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বাংলাদেশের বাড়তি অর্থ আয়ের একটি উপায় তৈরি হবে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
প্রয়োজন আরো নৌবন্দর
চট্টগ্রাম এবং মংলায় সমুদ্রবন্দর চালু থাকলেও আরো একটি সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বাংলাদেশে৷ এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে নভেম্বরে বাংলাদেশের পটুয়াখালিতে পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
গতি মন্থর
তবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হলেও কাজ আগাচ্ছে খুব ধীর গতিতে৷ বিশেষ করে বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় জমিই এখনো পুরোপুরি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি৷ আর বন্দরের সংযোগ সড়কও তৈরি হয়নি৷ ফলে কবে নাগাদ তৃতীয় সমুদ্র বন্দর চালু হবে, তা এখনো জানা যাচ্ছে না৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Getty Images
তথ্যের ঘাটতি
উল্লেখ, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে (http://cpa.gov.bd/portal/) তথ্যের বেশ ঘাটতি রয়েছে৷ বন্দরে পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত হালনাগাদ কোনো তথ্য সাইটটিতে নেই৷ সর্বশেষ ২০১১ সালের বিভিন্ন পরিসংখ্যান রয়েছে সাইটটিতে৷
ছবি: cpa.gov.bd
10 ছবি1 | 10
এদিকে ভারতের সংবাদ মাধ্যমে শনিবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয় পাকিস্তানও চীন থেকে সামমেরিন কিনছে৷ প্রতিবেদনে ভারতের সাবমেরিন সংকটের কথা তুলে ধরে বলা হয়, চীন যে সময় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সাবমেরিনসহ অস্ত্র পাঠানোর চুক্তি করেছে, ঠিক সে সময়েই প্রকট সাবমেরিন-সংকটে আছে ভারত৷ ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ পাকিস্তানের কাছে ছয়টি সাবমেরিন বিক্রি করার চুক্তি করেছে চীন৷ বাংলাদেশের কাছেও দুই ধরনের সাবমেরিন বিক্রি করবে দেশটি৷ সাবমেরিন কেনার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ২০৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে৷
এই বিষয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভূ-রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশের জন্য সাবমেরিন প্রয়োজন৷ আর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা এখন বেড়ে গেছে৷ তাই তার নিরপত্তায়ও সাবমেরিন দরকার৷''
তিনি জানান, চীন থেকে সাবমেরিন কেনা তার কাছে যৌক্তিকই মনে হয়েছে৷ কারণ আমাদের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে চীনের সাবমেরিনের দাম সঙ্গতিপূর্ণ৷ তাছাড়া খুচরা যন্ত্রাংশ এবং কৌশলগত দিক দিয়েও চীনই বাংলাদেশের জন্য সাবমেরিন কেনার সঠিক দেশ৷