সাবেক ছাত্রনেতারাও জানালেন, ছাত্রদল করতেন মুরাদ
৭ ডিসেম্বর ২০২১সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বর্ণ ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের পর এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে অশালীন ফোনালাপের অডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় মুরাদকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার এই তথ্য জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷
মুরাদ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলে যুক্ত ছিলেন বলে সেদিনই দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷
মুরাদ বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগে যুক্ত হয়েছিলেন বলে তৎকালীন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে৷
১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পরপরই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ৭১ সদস্যের কমিটির সভাপতি ছিলেন মাহবুব-উল কাদির ও মো. ইসাহাক৷ ডা. ইসাহাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুরাদ ছিলেন তাদের কমিটির প্রচার সম্পাদক৷
তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে মুরাদ হাসান এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং পরে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রদলের কমিটির নেতারা সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যান৷
‘‘কিন্তু মুরাদ হাসান ক্যাম্পাসে থেকে যান এবং ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছাত্রলীগে যোগদান করেন৷’’
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুরাদ হাসান ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করার সময় মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন৷ তথ্যটি সে সময়ে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম রিপনও নিশ্চিত করেন৷
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ছাত্রদলের কমিটিতে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পরে ছাত্রলীগে যোগদান করেন৷ ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন৷
ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে আসার এই তথ্য প্রকাশের আগে রোববার থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও মুরাদ হাসানকে পাওয়া যায়নি৷
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুরাদ হাসান ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন৷ ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে এম ফিল ডিগ্রি নেন৷
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনী অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া মুরাদ ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘কার্যকরী সদস্য' ১৯৯৭ সালে ‘সাংগঠনিক সম্পাদক’ এবং ২০০০ সালে ‘সভাপতি’ নির্বাচিত হন৷
২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হন মুরাদ৷ এ ছাড়াও মুরাদ জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’ এবং জামালপুর জেলা কমিটির ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন৷
জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন তিনি৷
২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ৷ ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তাকে দেওয়া হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)