একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতীয় পার্টি সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল৷ এটা যুদ্ধাপরাধ মামলার ১৪তম রায়৷
বিজ্ঞাপন
রায়ে বলা হয়, সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে৷ এর মধ্যে সাতটিতে তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২৷ বাকি দুটি, অর্থাত্ ৪ এবং ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায়, এ দুটি অভিযোগ থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কায়সারকে খালাস দেয়া হয়৷
তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে৷ ১৯৭১ সালে কায়সার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী' গঠন করে ঐ দুটি জেলায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দিয়েছিল৷
মঙ্গলবার সকাল ১১টার পর হবিগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ কায়সারের মামলার রায় পড়া শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ ৪৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়া হয়৷ শুরুতে সংক্ষিপ্ত এক সূচনা বক্তব্য দেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান৷ বিচারক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া৷
একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি বৃহস্পতিবার রাতে কার্যকর করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো৷ মোল্লার ফাঁসি নিয়ে তৈরি আমাদের বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: AP
অবশেষে ফাঁসি
৪৮ ঘণ্টা ধরে নানা নাটকীয় পরিস্থিতির পর ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়৷ এর আগে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে বিচারকের নির্দেশে তা স্থগিত হয়৷ মোল্লাকে এভাবে ফাঁসি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, জার্মানি সহ অন্যান্যরা৷
ছবি: picture-alliance/AA
শেষ দেখা
বৃহস্পতিবার ফাঁসির রায় কার্যকরের কিছুক্ষণ আগে কাদের মোল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের সদস্যরা৷ এসময় জেলগেটে কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল বলেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই আমার পিতাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Reuters
গ্রেপ্তার, দম্ভোক্তি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০০৮ সালে ঢাকার একটি থানায় দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা৷ পরবর্তীতে কারাগারে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বাংলাদেশ হয়েছে বলে অনেকের মাতব্বরি বেড়ে গেছে৷’’
ছবি: Reuters
যত অভিযোগ
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট ৬টি অপরাধ বিবেচনায় নেয়া হয়৷ এগুলো হলো পল্লবি এলাকার গণহত্যা, কবি মেহেরুননিসা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালিব হত্যা, কেরানীগঞ্জের ভাটার চর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ড, আলুব্দি গণহত্যা এবং মিরপুরের হযরত আলি পরিবারে গণহত্যা৷ এর সঙ্গে লুটতরাজ, ধর্ষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগও আছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi
প্রথমে যাবজ্জীবন, পরে মৃত্যুদণ্ড
ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়৷ এর প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে৷ সেসময় কাদের মোল্লা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিজয় চিহ্ন’ দেখান৷ এতে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে আপিলের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
দাফন সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মাইক্রোবাসে করে কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে, ‘‘স্থানীয় সময় রাত ৪টার দিকে ফরিদুপরের আমিরাবাদ গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।’’
ছবি: Mustafiz Mamun
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সৃষ্টি হওয়া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে আবারো ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ৷ মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত জনতা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে৷
ছবি: Reuters
‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো’’
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো৷ ৪২ বছর পরে হলেও একজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর হলো৷’’ তিনি আশা করেন, সব যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডই কার্যকর হবে৷
ছবি: privat
জার্মানির প্রতিক্রিয়া
এর আগে, বৃহস্পতিবার জার্মানির মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মার্কুস ল্যোনিং এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, জার্মানি নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না৷ তাই ফাঁসির পরিবর্তে কারাদণ্ড দেবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: dapd
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মুহম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ ১৬টি অভিযোগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ২০শে আগস্ট রায় অপেক্ষমান রাখে ট্রাইব্যুনাল৷
১৬টি অভিযোগে কায়সারের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল৷ অবশ্য প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ দাখিল করেছিল৷ এরপর ৪ঠা মার্চ থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়৷
গত ২৩শে জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ছয় কার্যদিবস প্রসিকিউিশন এবং ৭ই আগস্ট থেকে ১৯শে আগস্ট পর্যন্ত আসামিপক্ষ সাত কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করে৷ গত ৯ই মার্চ থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমসহ ৩২ জন সাক্ষী৷ অন্যদিকে আসামিপক্ষ কোনো সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারেনি৷
এর আগে গত বছরের ১৫ই মে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল৷ ২১শে মে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ৪ঠা আগস্ট বিশেষ বিবেচনায় কায়সারকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল-২৷ অভিযোগ গঠনের শুনানিতে কায়সার মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে৷ গত ২০শে আগস্ট ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে৷ সেদিন শারীরিক কারণে জামিনে থাকা কায়সারের (৭৩) জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল৷ এরপর মঙ্গলবার রায়ের সময় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়৷
কায়সার নামা
সৈয়দ কায়সারের বাবা সৈয়দ সঈদউদ্দিন ১৯৬২ সালে সিলেট-৭ আসনে কনভেনশন মুসলিম লীগ থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন৷ আর ১৯৭০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয় কায়সার৷
প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫০০ থেকে ৭০০ ‘স্বাধীনতাবিরোধীকে' নিয়ে ‘কায়সার বাহিনী' গঠন করে এই মুসলিম লীগ নেতা৷ কায়সার নিজেই ঐ বাহিনীর প্রধান ছিল৷ বাহিনীটির ছিল নিজস্ব ইউনিফর্ম৷ স্বাধীনতার ঠিক আগে কায়সার আত্মগোপন করে৷ পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর, ১৯৭৮ সালে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হয় কায়সার৷
১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হয় কায়সার৷ পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে বিএনপিতে যোগ দেয় এবং হবিগঞ্জ বিএনপির সভাপতি হয় মোহাম্মদ কায়সার৷ এরপর এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয় এবং ১৯৮৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার৷
গোলাম আযমের শাস্তি, প্রাণহানি
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ তবে এই রায়ে সন্তুষ্ট নয় সাধারণ জনতা৷ এই নিয়ে সংঘর্ষে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
আমৃত্যু কারাদণ্ড
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে – একথা উল্লেখ করে সোমবার (১৫.০৭.১৩) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছে, ‘‘তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তবে আযমের বয়স এবং অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে তাকে আমৃত্যু কারাগারে রাখার জন্য ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, সেই যুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়৷ তবে বাংলাদেশের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণ করেছিল৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী সংগঠন ‘‘জামায়াতে ইসলামী’’
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সোমবার দেওয়া রায়ে তার দল জামায়াতে ইসলামীকে ‘‘সন্ত্রাসী সংগঠন’’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আদালত৷ রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘গোলাম আযম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই সংগঠনের প্রধান ছিলেন৷ তার নির্দেশে এবং পরিকল্পনাতেই একাত্তরে বাংলাদেশে হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলি সংঘটিত হয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘‘তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল’’
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত বলেছে তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তাই তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল৷’’ অন্যদিকে বীরাঙ্গনা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী রায় শুনে পুরোপুরি হতাশ৷ তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো শাস্তি নেই গোলাম আযমের জন্য৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
নিহত কমপক্ষে তিন
সোমবার (১৫.০৭.১৩) গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন স্থানীয় সময় বিকেল ছয়টা পর্যন্ত কমপক্ষে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে৷ বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের বরাতে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ‘‘কুষ্টিয়ায় রাস্তা ব্লক করার চেষ্টার সময় গণপিটুনিতে প্রাণ হারায় দুই জামায়াতে ইসলামী কর্মী৷ এছাড়া চাপাইনবাবগঞ্জে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় আরেক ব্যক্তি৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ
গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড হওয়ায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার এই রায়ে সন্তুষ্ট৷ আদালত স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছে৷’’
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
আপিলের ঘোষণা
তবে গোলাম আযমের আইনজীবীদের একজন তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এই রায় ন্যায়ভ্রষ্ট এবং আবেগতাড়িত৷ তাই এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ আদালতের রায়ে একাত্তরে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলারও সমালোচনা করেছেন তাজুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘আদালত তার আওতার বাইরে গিয়ে এই মন্তব্য করেছে৷’’
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সজাগ গণজাগরণ মঞ্চ
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ গোলাম আযমের বিপক্ষে দেওয়া আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে৷ তাদের দাবি, গোলাম আযমকে ফাঁসি দিতে হবে৷ এই দাবি নিয়ে সোমবার আবারো শাহবাগে সমাবেত হয়েছেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে৷ প্রতিবাদ গোলাম আযমের শাস্তি হওয়ায় নয়, বরং তার ফাঁসির আদেশ না হওয়ায়৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আহসান টিটু লিখেছেন, ‘‘এক কথায় খুশি না! ফাঁসি চাই৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
চতুর্দশ রায়
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চতুর্দশ রায় দিল ট্রাইব্যুনাল৷ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়৷
এর আগের ১৩টি রায়ের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, একাত্তরের দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীন, জামায়াত আমির একাত্তরের বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের শুরা সদস্য মীর কাসেম আলী, ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড, দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আদালত৷
এর মধ্যে আপিলের রায়ে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হলে গত বছরের ১২ই ডিসেম্বর তা কার্যকর করা হয়৷ সাঈদীর আপিলে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷ আর কামারুজ্জামানের আপিলে ফাঁসির আদেশই বহাল থাকে৷
যুদ্ধাপরাধের দণ্ড ভোগের মধ্যেই গত ৩০শে আগস্ট কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালের ‘প্রিজন সেলে' মারা যায় আলীম৷ মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর৷ এছাড়া নিজ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি চলাকালীন গত ২৩শে অক্টোবর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যায় ৯২ বছর বয়সি জামায়াতগুরু গোলাম আযম৷