1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাবেক রাজ্যপালের তোষণ-মন্তব্যে বিতর্ক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১ আগস্ট ২০১৯

বিদায়বেলায় বিতর্কের সূত্রপাত করে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী৷ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোষণের রাজনীতি করছেন৷ নষ্ট হচ্ছে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি৷

Indien Kesharinath Tripathi, Ex-Gouverneur von West Bengal
ছবি: DW/P. Samanta

তাঁর মন্তব্যের সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস৷ মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন বর্ষীয়ান আইনজীবী জগদীপ ধনকর৷ রাজভবন ছেড়ে গিয়েছেন তাঁর পূর্বসূরী কেশরীনাথ ত্রিপাঠী৷ যাওয়ার সময় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণের রাজনীতিতেই এ রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে৷ আমার মনে হয়, বৈষম্য ছাড়া প্রত্যেক নাগরিককেই তাঁর সমান ভাবে দেখা উচিত৷''

এই মন্তব্যের মাধ্যমে নতুন নয়, একটি চালু বিতর্কেই ফের শোরগোল শুরু হয়েছে৷  কার্যত বিজেপির অভিযোগের প্রতিধ্বনি করেছেন তিনি৷ পশ্চিমবঙ্গের জনসমষ্টির এক-চতুর্থাংশের বেশি সংখ্যালঘু৷ এদের মধ্যে মূলত মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পক্ষপাতিত্ব করেন, এই অভিযোগ বিজেপির৷ ভোটের হিসেব বলছে, মুসলমানদের সিংহভাগই তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক৷ বিজেপির অভিযোগ, এই ভোট ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী তোষণের রাজনীতি করেন৷

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরি থেকে পুলিশ-প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি নগণ্য৷ তারা রাজ্যের সংখ্যাগুরু মানুষের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে৷ এই পরিস্থিতিতে মুসলমানদের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন৷ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাত করা যায় না৷ সব নাগরিককে সমান চোখে দেখতে হয়৷ তৃণমূলের বক্তব্য, দুর্বলের উন্নতির চেষ্টা পক্ষপাত নয়৷ তাই প্রাক্তন রাজ্যপালের তোষণ-মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূল মহাসচিব, রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷

তাঁর ভাষায়, ‘‘রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় উনি তোষণের কথা বলেননি৷ এখন চলে যাওয়ার সময় কেন বলছেন জানি না৷ ওঁর আর দ্বিতীয় দফায় রাজ্যপাল থাকারও সুযোগ নেই৷ তবে রাজভবন যে বিজেপির পার্টি অফিস হয়ে উঠেছে, এ কথা তিনি যাওয়ার সময় প্রমাণ করে গেলেন৷''

কেশরিনাথ ত্রিপাঠি

This browser does not support the audio element.

২০১৪ সালে রাজ্যপালের দায়িত্বভার নেয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছরে কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকারের মতবিরোধ হয়েছে৷ তিনি বিজেপির প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রীও বটে৷ তৃণমূল তাঁর মন্তব্যের পিছনে রাজনীতি দেখলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ রাজ্যপালের বক্তব্যকে বাস্তবসম্মত বলছেন৷

অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দের মতে, রাজ্যে সাঙ্ঘাতিক মেরুকরণ হয়েছে৷ ‘‘মূলত সে জন্যই বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে এত ভালো ফল করেছে৷ মেরুকরণ কেন হল, তা বিশ্লেষণ করতে গেলেই তোষণের প্রসঙ্গ উঠে আসবে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷

তিনি যোগ করেন, ‘‘রাজ্যের সংখ্যাগুরু মানুষের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক পদক্ষেপের ভীষণ প্রতিক্রিয়া হয়েছে৷ প্রথমে শুধু সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের মধ্যে সাইকেল বিতরণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়৷''

সবথেকে বেশি বিতর্ক হয়েছিল ইমাম ভাতার ঘোষণায়৷ অধ্যাপক নন্দ বলেন, ‘‘এই ভাতা নিয়ে সংখ্যাগুরুদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের জন্য ভাতা ঘোষণা করেন৷ কলকাতা হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেয়৷ এরপর ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে ঘুরপথে রাজ্য সরকার ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে৷ তিন তালাক রদের বিরুদ্ধেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা সওয়াল করেছেন৷ এটাকে সংখ্যাগুরু জনতা তোষণ হিসেবেই দেখেছে৷''

তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী রাজনীতিকরা অবশ্য এতে দুই দলের কৌশলে মিল খুঁজে পাচ্ছেন৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘দুই দল সাম্প্রদায়িকতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷ ধর্মের নামে ভোট চাইছে, এতে সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে৷ তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরকে সাহায্য করছে৷ দেশভাগের জ্বালা সত্ত্বেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে মাথা তুলতে পারেনি৷ তৃণমূল সেই সুযোগ করে দিচ্ছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ