এখন থেকে জার্মানিতে কারও সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে কেউ তাঁর সাবেক সঙ্গীকে তাঁদের নগ্ন ছবি মুছে ফেলার অনুরোধ করতে পারবে৷ এই অনুরোধের পর সেই সঙ্গীকে অবশ্যই সেটা মানতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
গত অক্টোবরে জার্মানির কোবলেন্স শহরের আদালত এই রায় দেয়৷ গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সেই রায় বহাল রাখার কথা জানায় জার্মানির সর্বোচ্চ আপিল আদালত ‘বুন্ডেসগেরিষ্টসহোফ' (বিজিএইচ)৷
এক নারী তাঁর সাবেক সঙ্গী এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর, ঐ সঙ্গীকে তাঁর নগ্ন ছবি তোলার অনুমতি দিয়েছিলেন৷ এরপর দু'জনের মধ্যে যৌনমিলনের আগে ও পরে বেশ কিছু ছবি তোলা হয়৷ এছাড়া ঐ নারী নিজেও নিজের নগ্ন ছবি তুলে সেগুলো ঐ ফটোগ্রাফার সঙ্গীকে দিয়েছিলেন৷
জার্মানির সর্বোচ্চ আপিল আদালতছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
আদালত বলেছে, যদিও ঐ নারী ছবিগুলো তোলার অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু যেহেতু সেগুলো ‘শুধু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তোলা হয়েছিল, কোথাও প্রকাশ কিংবা প্রচারের জন্য নয়', তাই ছবিগুলো নিজের কাছে রাখার অধিকার নেই ঐ ফটোগ্রাফারের৷ সাবেক সঙ্গীকে নিজেদের নগ্ন ছবি মুছে ফেলতে বাধ্য করার অধিকার নাগরিকদের রয়েছে বলে জানায় বিজিএইচ৷
যৌনতা: অনন্তকাল ধরে বিতর্কিত
‘সেক্স’ কথাটা উঠলেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায়৷ সেক্স নিয়ে যেমন বহু কেলেঙ্কারি, সেভাবেই যৌনতা নারীমুক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বন শহরের একটি প্রদর্শনীতে জার্মান সমাজে যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন ঝড়ঝাপটার একটা খতিয়ান দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নিষিদ্ধ’ বিষয়
গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যৌনতা সংক্রান্ত মনোবৃত্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে৷ জার্মানিতে ‘ব্রাভো’-র মতো টিনেজার ম্যাগাজিনগুলিতে খোলাখুলি সেক্স সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷ এর আগে ফিল্মেও যা ‘নিষিদ্ধ’ বিষয় ছিল, তাই নিয়েই তৈরি হয় ১৯৬৮ সালের হিট ছবি ‘সুয়র জাখে, শ্যাটসেন’ বা ‘পথে এসো, প্রেয়সী’৷ এখানে ছবির নায়ক-নায়িকা ভ্যার্নার এঙ্কে ও উশি গ্লাস; মাঝের মহিলাটি হলেন পরিচালিকা মাই স্পিল্স৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মা যা ছিলেন
পঞ্চাশের দশকেও দুনিয়াটা ‘ঠিকঠাক’ ছিল – অন্তত নবীন পশ্চিম জার্মানির নীতি-নৈতিকতা যাদের দায়িত্বে, তাদের চোখে৷ নারীর স্থান ছিল গৃহে, সংসারে, পতিব্রতা স্ত্রী, স্নেহময়ী জননী, নিপুণা গৃহকর্ত্রী হিসেবে৷ কাজে যেতেন শুধু পুরুষরা৷ জনসমক্ষে সেক্স নিয়ে কথা বলা কিংবা রাস্তায় চুমু খাওয়া চলত না৷ ব্যক্তিগত জীবন ও নৈতিকতা ছিল গির্জা বা সরকারের তাঁবে৷
ছবি: DW/H. Mund
আদম ও হবার কাহিনি
১৯৫১ সালের জার্মান ছবি ‘দি জ্যুন্ডারিন’ বা ‘পাপিনী’ জার্মান ফিল্ম জগতে কেলেংকারির অবতারণা ঘটায়৷ রক্ষণশীল চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার-এর আমলে এ ধরনের ‘নোংরামি’ সেন্সর করা উচিত, এই ছিল অধিকাংশ মানুষের অভিমত৷ ‘পাপিনী’ ছবির যৌনোদ্দীপনামূলক দৃশ্যগুলো ছিল অতি সংক্ষিপ্ত, তা সত্ত্বেও ছবিটিকে কেন্দ্র করে নৈতিকতা ও প্রকাশ্য যৌনতা নিয়ে বিপুল তর্ক শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: ullstein - Thomas & Thomas
নারীমুক্তি
শেরিং কোম্পানি যখন ১৯৬১ সালে প্রথম গর্ভনিরোধক ‘পিল’ বাজারে ছাড়তে শুরু করে, তখন জার্মানির গির্জায় গির্জায় ‘যুবসমাজের নৈতিক অধোপতন’ সম্পর্কে ভাষণ শোনা গেছে৷ পিল নেওয়ার ফলে মহিলাদের যৌন আসক্তির খবর বেরোয় পত্রপত্রিকায়৷ সব সত্ত্বেও, গর্ভনিরোধের নতুন উপায়গুলি মহিলাদের স্বনির্ধারণে সাহায্য করে৷
ছবি: DW/H. Mund
ছাত্র বিপ্লব, যৌন বিপ্লব
ষাটের দশকের শেষে জার্মানিতে যে ছাত্র বিপ্লব দেখা দেয়, তার সঙ্গে তথাকথিত ‘কাউন্টার কালচার’ বা বিকল্প সংস্কৃতিরও যোগ ছিল৷ সেই বিকল্প সংস্কৃতি – হিপি আমলের রূপরেখা অনুযায়ী – খোলা এবং স্বাধীন যৌনতায় বিশ্বাস করত, যার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় ‘কমিউন ওয়ান’-এর মতো কুখ্যাত কলোনিতে স্ত্রী-পুরুষের একসঙ্গে বাস ও সহবাসে৷ যে কারণে রাইন্যার লাংহান্স এবং উশি ওবারমায়ার-এর মতো চরিত্র আজও অবিস্মৃত৷
ছবি: picture-alliance/KPA TG
যৌনশিক্ষা
৬৮-র ছাত্র বিপ্লব পশ্চিমে পরিবারজীবনের সংজ্ঞাই বদলে দেয়৷ তরুণ বাবা-মায়েরা নিজেদের ‘বাবা’ কি ‘মা’ বলে অভিহিত না করে, নাম ধরেই ডাকতে শুরু করেন৷ ১৯৬৯ সালে স্কুলের জীববিজ্ঞান ক্লাশে একটি যৌনশিক্ষার ‘মানচিত্র’ চালু করা হয়৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অর্থানুকুল্যে সৃষ্ট ‘হেলগা’ নামধারী একটি যৌনশিক্ষার ফিল্ম দেখতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হতো৷
ছবি: DW/H. Mund
মেইল-অর্ডার যৌনতা
‘বেয়াটে উজে’ বললেই জার্মানির শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ আজও বোঝেন: মেইল-অর্ডার সেক্স-শপ৷ যদিও সে-ধরনের দোকানে বাস্তবিক ঢোকার মতো সাহস আজও সকলের নেই – লোকলজ্জা বলে একটা কথা আছে তো৷ বেয়াটে উজে-র বাণিজ্যিক সাফল্যের সূচনা ১৯৪৮ সালে, যখন তিনি মহিলাদের গর্ভনিরোধের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করার জন্য একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেন৷ তার পরে আসে তাঁর মেইল-অর্ডার সেক্স-শপ৷
ছবি: imago
পশ্চিমের আগে পুব
সাবেক পূর্ব জার্মানির মানুষরা তাদের পশ্চিমের সতীর্থদের চেয়ে অনেক বেশি যৌন স্বাধীনতা ভোগ করেছেন৷ গোটা পূর্ব জার্মানি জুড়ে ছিল নিউডিস্ট ক্লাব৷ যৌনতার বিচারে পুবের মেয়েরা পশ্চিমের মেয়েদের চেয়ে বেশি ‘স্বাধীন’ ছিলেন, বাচ্চাদের সরকারি ডে-কেয়ারে জমা করে প্যান্ট-শার্ট পরে কাজে যেতেন৷ স্বাধীনতার অপরপীঠে ছিল রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা৷ যেমন এই সাইনটিতে পূর্ব জার্মানির মায়েদের ‘ধন্যবাদ’ জানানো হচ্ছে৷
ছবি: DW/H. Mund
‘বিকারগ্রস্ত সমাজ’
যে সব চিত্রপরিচালক সর্বপ্রথম সমকামিতা নিয়ে ছবি তৈরি করেন, রোজা ফন প্রাউনহাইম ছিলেন তাঁদের অন্যতম৷ ১৯৭১ সালে তিনি একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন, যার বক্তব্য ছিল: সমকামী নিজে বিকারগ্রস্ত নয়, বিকারগ্রস্ত হল তার সমাজ৷ এভাবেই তিনি জার্মানির ‘গে’ এবং ‘লেসবিয়ান’ সম্প্রদায়ের জন্য সম্মান ও সমানাধিকার আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগ-যুগান্তের সংস্কার
জার্মানিতে সমকামিতা ছিল একটি বিতর্কিত বিষয়, রাজনীতিকরাও যা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেতেন৷ আইনের যে সূত্র – ১৭৫ নং অনুচ্ছেদ – দু’টি পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করেছিল, সেই অনুচ্ছেদটি ১৯৬৯ সালে কিছুটা নরম করার পর, ১৯৯৪ সালে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়৷ কিন্তু – বিশেষ করে খেলাধুলার জগতে – সমকামীদের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব আজও পুরোপুরি উধাও হয়নি৷
ছবি: DW/H. Mund
নারী না পুরুষ?
ট্র্যান্সভেস্টাইট আর্টিস্ট, ২০১৪ সালের ইউরোভিশন সং কনটেস্ট বিজয়ী কনচিটা ভুয়র্স্ট ওরফে টম নয়ভির্থ আজ একজন সেলিব্রিটি৷ দাড়ি-সম্বলিত, ইভনিং গাউন পরিহিতা কনচিটা ২০১৫ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় উপস্থাপিকা ছিলেন৷ তা-তে কারো কোনো আপত্তি দেখা যায়নি – আপাতদৃষ্টিতে৷...
ছবি: DW/H. Mund
ইতিহাস
জার্মানির ‘ড্র্যাগ কুইন’ তথা টিভি হোস্ট লিলো ভান্ডার্স এই প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন৷ ‘নির্লজ্জ? পরিবর্তনের মুখে যৌন নৈতিকতা’ প্রদর্শনীটি চলবে ২০১৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি অবধি, বন শহরের ‘হাউড ডেয়ার গেশিস্টে’ বা ইতিহাস ভবনে৷
ছবি: DW/H. Mund
12 ছবি1 | 12
তবে ঐ ফটোগ্রাফার তাঁর সাবেক সঙ্গীর সব ছবি মুছে ফেলতে বাধ্য হবেন না৷ বিশেষ করে ঘুরতে যাওয়ার সময় পোশাক পরা অবস্থায় যে ছবিগুলো আছে সেগুলো চাইলে রেখে দিতে পারবেন তিনি৷ কারণ আদালত মনে করছে, ঐ ছবিগুলো ‘কম ক্ষতিকর'৷ মুছে ফেলতে হবে এমন ছবির সংজ্ঞাও ঠিক করে দিয়েছে আদালত৷ এগুলো হচ্ছে, সেই ছবিগুলো যেখানে ঐ নারীকে পুরো নগ্ন কিংবা অর্ধনগ্ন দেখাচ্ছে, যে ছবিগুলোতে ঐ নারীর শরীরের গোপন অংশ দেখা যাচ্ছে এবং যৌনমিলনের আগে ও পরের ছবি৷
এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মানির আইনজীবীরা৷ তাঁদের একজন ক্রিস্টিয়ান সলমেকে৷ তিনি ব্যক্তিগত অধিকার সম্বলিত আইনগুলো লড়ে থাকেন৷ তিনি বলেন, এই রায়ের ফলে ‘রিভেঞ্জ পর্নো' বিষয়ক মামলাগুলো লড়তেও সহজ হবে৷
বন্ধুরা, জার্মান আদালতের এই রায়কে কি আপনি সমর্থন করেন? উত্তর দিন নীচের ঘরে৷
নগ্ন হয়ে ঘুমালে অনেক উপকার!
প্রতিদিন কত নতুন নতুন তথ্য যে জানা যায়! হালে জানা গেছে, কাপড়-চোপড় পরে ঘুমানোর চেয়ে কাপড় না পরে ঘুমানোয় উপকার বেশি৷ চলুন জেনে নেয়া যাক কী কী উপকার এতে৷
ছবি: picture-alliance/AP
সুখী করে
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর নগ্ন হয়ে ঘুমানো নাকি ভালো৷ ইউএসএ কটন ২০১৪ সালে এক জরিপ চালিয়ে দেখেছে, জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্য যাঁরা নগ্ন হয়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৫৭ ভাগই মনে করেন যে তাঁরা সুখী৷ পাজামা পরে যাঁরা ঘুমান তাঁদের মধ্যে সুখী যুগল ছিল শতকরা ৪৮ ভাগ৷
ছবি: Fotolia/G. Sanders
নারীর জন্য ভালো
কসমোপোলিটান ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডাক্তার জেনিফার লান্ডা জানান, সব সময় কাপড় পরে ঘুমালে মেয়েদের বিশেষ কিছু রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ তিনি জানান, কাপড় পরার ফলে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে আর তাপমাত্রা খুব বেশি হলে মেয়েদের যোনিপথের আশপাশে খুব তাড়াতাড়ি ছত্রাক বা ব্যাক্টেরিয়া বাড়তে থাকে৷
ছবি: Gina Sanders - Fotolia
গুহাবাসীদের মতো.....
নিউরোলজিস্ট ব়্যাচেল সালাস ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দু’বছর আগেই বলেছিলেন, গুহামানবদের মতো আধুনিক, ফ্যাশন সচেতন মানুষেরও গায়ে সুতা না রেখে ঘুমানো ভালো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পূর্বসূরীরা একসময় নগ্নই ঘুমাতেন৷ মাংসাসী প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাঁরা মূলত গুহায় ঘুমাতেন এবং তা নগ্ন হয়ে৷ তাই নগ্ন হয়ে ঘুমালে আজও আমরা কিছুটা নিরাপদ বোধ করি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
মাইক ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীরে ত্বক যদি ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে থাকে, তাহলে স্ট্রেস হরমোন ‘কর্টিসল’ হ্রাস পায়৷ ফলে কর্টিসল যে কারণে রোগপ্রতিরোধ বাধাগ্রস্থ করে, সে সমস্যাটা কমে যায়৷ শরীরের এক অংশের ত্বক অন্য অংশের ত্বকের সংস্পর্শে থাকলে ‘অক্সিটোসিন’-এর মাত্রা বেড়ে যায়, যাতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের উপকার হয়৷
ছবি: Fotolia
ভালো ঘুম হয়
যাঁরা কাপড় পরে ঘুমান তাঁদের কি ঘুম ভালো হয় না? না, এমন কথা কেউ বলেনি৷ তবে ২০০৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরের তাপমাত্রা ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে৷ তাই গরমে কাপড় পরে ঘুমালে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তাতে ঘুম ভালো হয় না৷ সে অবস্থায় শরীরে কোনো কাপড় না থাকলে ক্ষতি নেই, বরং লাভই বেশি, কেন না ঘুম হবে দারুণ!