সরকারের উদ্যোগে সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় গড়ে তোলা হচ্ছে চামড়া শিল্পনগরী৷ ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প সাভারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১,০৭৯ কোটি টাকা৷ শিল্পনগরীতে কারখানা থাকবে ১৫৫টি৷ থাকবে একটি কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারও৷ এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের প্লট বরাদ্দ দিয়েছে সরকার৷ সেখানেই কারখানাগুলো গড়ে উঠছে৷ কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, নির্মাণকাজ সন্তোষজনক নয়৷ অনেক ব্যবসায়ী হাজারীবাগ থেকে সাভারে যেতে আগ্রহী না থাকায় প্রথমদিকে প্লটের বরাদ্দ নিয়েও কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে৷ সাভারে কারখানা স্থানান্তর করতে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে উকিল নোটিশও দেয়া হয়েছে৷
এপ্রিল মাসের শুরুতে বেসরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাভারের শিল্পনগরীতে ১৫৫টি কারখানার কোনোটিরই নির্মাণকাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি৷
এপ্রিলের ৮ তারিখ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, নির্মিত হতে যাওয়া ১৫৫টি কারখানার প্রায় সবগুলোর প্রথম তলার ছাদ আংশিক ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় তলার ঢালাই চলছে ১৩টিতে৷
চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের পরিচালক আবদুল কাইউম জানিয়েছেন, বর্তমান প্রকল্পের পাশে আরও ২০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷ সেখানে শ্রমিকদের জন্য আবাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হবে৷
সাভারের চামড়া শিল্পনগরী কি ঘুরে এসেছেন আপনি? এই নগরী কি হাজারীবাগের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে?
ট্যানারি শিল্পে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ক্রমেই হাজারিবাগের চামড়া শিল্পে দূষণের মাত্রা বাড়ছে৷ পরিবেশ দূষণ ছাড়াও ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি৷ পানি ও বাতোসে রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে নানারকম অসুখে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: DW
একটি ট্যানারির ভেতরের চিত্র
হাজারিবাগে কমপক্ষে ২০০টি ট্যানারি রয়েছে, যাতে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন৷ এ সব ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় ক্রোম পাউডার, কপার সালফেট, সোডিয়াম, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, অ্যাসিড, ব্লিচিং পাউডারসহ নানারকম রাসায়নিক৷ শ্রমিকরা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাত-পায়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করার ফলে চর্মরোগ তাঁদের নিত্যসাথী৷ এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবেও অন্যান্য রোগে ভোগেন নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা৷
ছবি: DW
হুমকির মুখে শ্রমিকদের নিরাপত্তা
চামড়া শিল্পে কাজকরা এ সব শ্রমিকদের শতভাগই অশিক্ষিত৷ তাই এ শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের কাজের জন্য বেশিরভাগ ট্যানারিতেই নেই কোনো চুক্তিপত্র৷ ফলে নিম্ন আয়ের এ সব শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তাও মারাত্মক হুমকির মুখে৷
ছবি: DW
আজও সচেতন নন শ্রমিকরা
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্য সচেতনও নন৷ তবে বড় ট্যানারি কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ভালো৷ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামও রয়েছে এ সব ট্যানারিতে৷ তারপরও শ্রমিকরাই নাকি এ সব সরঞ্জাম ব্যবহার করতে চান না, অভিযোগ এমনটাই৷
ছবি: DW
‘দীপ নিভে গেছে মম...’
দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা ট্যানারি শিল্পে কাজ করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগের জীবনপ্রদীপ ৫০ বছরেই নিভে গেছে৷
ছবি: DW
অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে চামড়া শিল্প
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকরা একরকম মৃত্যুকূপের বাসিন্দা৷ স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও বছরের পর বছর এ শিল্পে কাজ করে চলছেন বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক৷
ছবি: DW
নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের বড় একটা অংশ কাজ করেন দৈনিক ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা৷ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও এ সব শ্রমিকদের জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে৷
ছবি: DW
এলাকাবাসীরাও দূষণের কবলে
শুধু শ্রমিকরাই নন, ট্যানারি শিল্পের দূষণের ছোবলে আক্রান্ত হাজারিবাগ এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা৷ এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাজারিবাগ থেকে এ সব ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর হওয়ার কথা থাকলেও, এ খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ‘‘নানান জটিলতার কারণে এ স্থানান্তর আগামী দু’বছরেও সম্ভব হবে না৷’’
ছবি: DW
শিশুশ্রম – এখনও বাস্তব হাজারিবাগে
দুঃখের খবর, তবুও এটাই সত্য৷ ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের বড় একটা অংশ ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু৷ শিশুদের মজুরি যেমন কম, তেমনই দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় না৷
ছবি: DW
প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য!
হাজারিবাগের ২০০টি চামড়াশিল্প থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য (লবণ, হাড়, চামড়ার বর্জ্য) নির্গত হয়৷ নির্গত হয় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ এই বর্জ্যের মধ্যে আছে ক্রোমিয়াম, সীসা, অ্যামোনিয়া, সালফিউরিক অ্যাসিড প্রভৃতি৷ কিন্তু কোনো কারখানাতেই এই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই৷ ফলে এ সব বর্জ্য আশেপাশের জলাশয় দূষণ করা ছাড়াও গিয়ে মেশে বুড়িগঙ্গা ও ভূগর্ভের পানিতে৷
ছবি: DW
মৃত্যুকূপের বাসিন্দা নারীরাও
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে আছেন নারীরাও৷ ট্যানারির বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের প্রভাবে এ সব নারী শ্রমিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে৷