নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ বুধবার চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে৷ সাভারে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশ বলছে, প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক সাভারের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেছিল৷ তাঁদের সেখান থেকে সরাতে জলকামান ব্যবহার করা হয় বলে এএফপিকে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা সানা সামিনুর রহমান৷ এর আগে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বুধবার কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাভারে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে৷ সাভারের উলাইল, আশুলিয়া, কাঠগড়া, জিরাবো, নরসিংহপুরসহ কয়েকটি এলাকায় এসব সংঘর্ষ হয়েছে৷ পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে এই আশঙ্কায় ঐ এলাকার কয়েকটি কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়েছে৷
পোশাক শ্রমিক বিক্ষোভ: ডিডাব্লিউ টিভির বিশ্লেষণ
03:25
এদিকে, শ্রমিকরা পুলিশের উদ্দেশ্যে ইট, পাটকেল ছোড়ায় ‘বেশ কয়েকজন’ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা রহমান৷
বিজিবি মোতায়েন
গাজীপুরের গাজীপুরা ও নাওজোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের কাঁদানে গ্যাস দিয়ে ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির৷
টঙ্গীর বিসিক এলাকায়ও পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে৷
রবিবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সাভারের উলাইলে সুমন মিয়া নামে এক পোশাক শ্রমিক নিহত হন৷ শ্রমিকরা বলছেন, পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে প্রণীত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন৷ এই কাঠামোতে বেতনের ১১টি গ্রেড করা হয়৷ এর মধ্যে শ্রমিকদের জন্য সাতটি ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয় চারটি গ্রেড৷ শ্রমিকদের প্রথম গ্রেডে মজুরি ধরা হয় ১৭ হাজার ৫১০ টাকা৷ আর সপ্তম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় আট হাজার টাকা৷ এর মধ্যে মূল মজুরি চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা৷
বেতন কাঠামোতে শিক্ষানবিশ গ্রেডও রয়েছে৷ শিক্ষানবিশ শ্রমিকরা মাসে পাঁচ হাজার ৯৭৫ টাকা পাবেন৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, বিডিনিউজ)
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি: অতীত-বর্তমান
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে৷ পোশাক খাতই দেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল শিল্প খাত৷ অথচ এই খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বারবার নামতে হয় রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুতে মাত্র ৬৩০ টাকা
পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়৷ ওই সময় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দশ বছরে বাড়ে ৩০০ টাকা
১৯৯৪ সালে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি করা হয় ৯৩০টাকা৷ এরপর ১২ বছর এই খাতে কোনো বেতন কাঠামো ঘোষিত হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
দুই দশক পর হাজারের ঘরে বেতন!
গত ৪০ বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বাইরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আয়ই প্রধান৷ অথচ এই খাতে মজুরি এখনো কম৷ ২০০৬ সালে ন্যূনতম বেতন হাজারের ঘর স্পর্শ করে৷ ১৯৯৪ সালের ঘোষিত ৯৩০ টাকা ২০০৬ সালে বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৬২ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রায় দ্বিগুণ, কিন্তু অপ্রতুল
২০১০ সালে মজুরি বাড়িয়ে করা হয় তিন হাজার টাকা৷ কিন্তু তখন ন্যূনতম ৮ হাজার টাকার দাবি ছিল শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৩ সালেও প্রত্যাশার চেয়ে কম
২০১৩ সালের জুন মাসে গঠিত মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি নির্ধারণ করে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা৷ দ্রব্যমূল্য বাড়লেও শ্রমিকরা ২০১০ সালের দাবি অনুযায়ীও মজুরি পায়নি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
২০১৮ সালে ১১ গ্রেডের বেতন কাঠামো
গত বছর নতুন করে পোশাক শ্রমিকদের বেতনের ১১টি গ্রেড করা হয়৷ এর মধ্যে শ্রমিকদের জন্য সাতটি ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয় চারটি গ্রেড৷ শ্রমিকদের প্রথম গ্রেডে মজুরি ধরা হয় ১৭ হাজার ৫১০ টাকা৷ এর মধ্যে শিক্ষানবিশ গ্রেডও রয়েছে৷ শিক্ষানবিশ শ্রমিকরা মাসে পাঁচ হাজার ৯৭৫ টাকা পাবেন৷
ছবি: bdnews24.com
কী হয় এ বেতনে!
শ্রমিকদের সপ্তম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার টাকা৷ এর মধ্যে মূল মজুরি চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা৷ তবে বলা বাহুল্য, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি বা বর্তমান মজুরি কাঠামোকে পোশাক শ্রমিকরা সঙ্গতিপূর্ণ মনে করছেন না৷
ছবি: Taslima Akhter/Hygienemuseum Dresden
টাকার অংকে মজুরি বেড়েছে মাত্র ২৭১ টাকা
বাংলাদেশ মজুরি বোর্ডের আইন অনুযায়ী মূল মজুরি প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ে৷ পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার আইনও রয়েছে৷ সে অনুযায়ী সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের ২০১৩ সালের মূল ছিল ৩ হাজার ৮২৯ টাকা৷ আর এখন নতুন মূল মজুরি ঘোষিত হলো ৪ হাজার ১০০ টাকা৷ অর্থাৎ, এই গ্রেডের মজুরি বেড়েছে ২৭১ টাকা মাত্র!
ছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi
অন্য খাতের মজুরি
২০১৮ সালে চামড়া খাতে নতুন যে মজুরি কাঠামো ঘোষিত হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন গ্রেডের শ্রমিকদের মোট মজুরি ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা৷ শিপব্রেকিং খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকা৷ অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যানামেল শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার ৭০০ টাকা৷ পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে অনেক কম৷