মাস ঘুরলেই দিল্লিতে ভোট। তার আগে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সিদ্ধান্তের কথা জানালেন রাজধানীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কও।
বিজ্ঞাপন
এত দিন মহিলাদের ভাড়া গুনতে হত না বাসে। সমস্ত সরকারি বাসে মেয়েদের বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নতুন প্রতিশ্রুতি-- দ্বিতীয়বার তাঁর নেতৃত্বে সরকার তৈরি হলে ছাত্রছাত্রীদের বাস ভাড়া দিতে হবে না। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাধারণ মানুষ একে স্বাগত জানালেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, এ সমস্ত করে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেষ্টা করছেন কেজরিওয়াল।
২০১৫ সালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মেয়েদের জন্য বিনা পয়সায় বাস ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। একই সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের বিল দিতে হবে না। তার উপরে বিদ্যুৎ খরচ করলে টাকা দিতে হবে। জলের ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছেন তিনি। মাসে বাড়ি পিছু ২০ হাজার লিটার জল বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তার বেশি জল খরচ করলে কর দিতে হয়। এ বার সেই তালিকাতেই যুক্ত হল ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বাস ভ্রমণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিল্লির এক বিজেপি নেতার মন্তব্য, কেজরিওয়াল যে ভাবে একের পর এক জনপ্রিয় নীতি নিয়ে চলেছেন, তাতে এই মুহূর্তে ভোট হলে বিজেপি ১৫টি আসনও জিততে পারবে না। কারণ কেজরিওয়ালের জনপ্রিয় পদক্ষেপগুলিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনও নেতা আপাতত দিল্লিতে নেই। কেবল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখ দেখিয়ে এর সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব হবে না।
ভারতের ১০ শহরে মেট্রো রেল
বাস এবং লোকাল ট্রেনে ধাক্কাধাক্কি করার পর নিত্যযাত্রীদের কাছে মেট্রোরেলের আগমন অনেকটা আশীর্বাদের মতোই৷ এখন ভারতের ১০টা শহরে মেট্রো রেল চলছে৷ ছবিঘরে দেখুন ভারতে কবে, কোথায় মেট্রোরেল চালু হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
কলকাতা
১৯৮৪ সাল থেকে কলকাতায় মেট্রো রেল চলছে৷ ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন এবং দ্বিতীয় ব্যস্ততম মেট্রো রেল হিসেবে এর পরিচিতি আছে৷ শহরের ২৭ দশমিক ২২ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা এই মেট্রো রেলপথের সীমানায়৷ নিত্যযাত্রীদের ভিড়ে এখন মেট্রোরেলেও দমবন্ধকর অবস্থা! তাই এ শহরে মেট্রো রেলপথ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Paul
দিল্লি
রাজধানী দিল্লিতে মেট্রো পৌঁছেছে ২০০২ সালে৷ ১৬০ টি স্টেশন সমৃদ্ধ দিল্লির মেট্রো রেলপথ দেশের সবচেয়ে বড় মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক৷ প্রায় ২৩১ কিলোমিটার পর্যন্ত এই রেলপথ ছড়িয়ে৷ দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক বলে পরিচিত এই মেট্রো রেল৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna
বেঙ্গালুরু
বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ট্রাফিকের সমস্যা লেগেই ছিল৷ তার মধ্যে বেঙ্গালুরুতে ২০১১ সালে মেট্রোর আগমন নিত্যযাত্রীদের কাছে স্বস্তিদায়ক বলে চিহ্নিত হয়৷ প্রায় ৪২ কিলোমিটার পর্যন্ত এই রেলপথ পৌঁছেছে৷ এই রেলপথ বাড়ানোর কাজ চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
গুরুগ্রাম
দিল্লি মেট্রো গুরুগ্রাম পর্যন্ত যায়৷ ব্যবসার কেন্দ্রস্থল দিল্লি সংলগ্ন গুরুগ্রামে একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন মেট্রো রেলপথ আছে৷ এটি প্রায় ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরত্বে যাতাযাত করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna
মুম্বই
দেশের আর্থিক রাজধানী মুম্বইতে মেট্রো রেলের আগমন ঘটেছে ২০১৪ সালে৷ এই মেট্রো রেল ১২ টি স্টেশনে থামে৷ কিন্তু একটা লাইনেই মেট্রো রেল চলাচল করে৷ ২০২৫ এর মধ্যে সারা মুম্বই শহর জুড়ে যাতে মেট্রো চালানো যায়, তার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে৷ সেই অনুযায়ী কাজও এগোচ্ছে বেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
চেন্নাই
চেন্নাই শহরে মেট্রোর আগমন মাত্র ৩ বছর আগে৷ ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ও তামিলনাড়ু সরকারের যৌথ উদ্যোগে মেট্রো রেল চালু হয়েছে৷ চেন্নাই মেট্রো রেল লিমিটেডের সহায়তায় এখন সেখানে রেলপথ বিস্তারের কাজ চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
জয়পুর
ভারতের ‘গোলাপী শহর’ জয়পুরে মেট্রো রেল চলাচলের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে ২০১৫ সালে৷ এখন শহরে ১০ কিলোমিটারের রুটে দিব্যি চলছে মেট্রো৷ তবে ভবিষ্যতে এই রেলপথ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
কোচি
হালফিলে এই শহরে চালু হয়েছে মেট্রো রেল৷ ২০১৭ সাল থেকে সেখানকার যাত্রীরা মেট্রো রেলের সুবিধা পেয়ে চলেছেন৷ যে গতিতে সেখানে কাজ হচ্ছে, তাতে সারা দেশে হয়ত কোচি মেট্রো রেল পরিষেবায় একটা দৃষ্টান্ত রাখতে চলেছে৷ এই মেট্রো পরিষেবাকে একই সঙ্গে রেল, সড়ক এবং জল পরিবহণ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ সারা দেশে এমন নজির আর নেই৷
ছবি: DW/M.Ansari
হায়দ্রাবাদ
‘সাইবার সিটি’ বলে পরিচিত হায়দ্রাবাদ শহরে মেট্রো রেলের উপস্থিতি গত বছর, ২০১৭ তে৷ এই মেট্রো রেলপথকে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় ২৪ টি স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল৷ এখন রেলপথ বিস্তারের কাজ চলছে পুরোদমে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
লক্ষ্ণৌ
২০১৭ সালেই লক্ষ্ণৌ শহরে মেট্রো চলাচল শুরু হয়৷ এই মেট্রো পরিষেবা উদ্বোধন কেন্দ্র করে খুব রাজনীতি শুরু হয়৷ কিন্তু চালু হওয়ার প্রথম দিনই মেট্রো ট্রেন যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য দেড় ঘণ্টা বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
10 ছবি1 | 10
দিল্লি বিজেপির আর এক নেতা সলিল নন্দি অবশ্য বলেন, ''একেই বলে সস্তা ভোটের রাজনীতি। এ ভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করার অধিকার কেজরিওয়ালকে কে দিয়েছে?''
দিল্লির আপ নেতৃত্ব অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ঘোষণায় খুশি। আপ নেতা অনুপ ঠাকুরের বক্তব্য, ''কেন্দ্রে মোদী সরকার বড়লোকদের কথা ভেবে নীতি প্রনয়ণ করে। কেজরিওয়াল ঠিক তার উল্টো কাজ করেন। দিল্লিতে যে মহিলারা বাসে চড়েন, তাঁরা নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। বাস ভাড়া বাঁচলে তাঁদের প্রভূত উপকার হয়। এ বার আমাদের লক্ষ্য স্কুল কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। তাদের টিকিটের দাম মকুব করলে সরকারের ব্যাপক কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে।'' আপের বক্তব্য, শুধু বাস ভাড়াই নয়, আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, দিল্লির মহিলাদের আরও বেশি সুরক্ষা দিতে, প্রতিটি মহল্লায় একজন করে মার্শাল রাখা হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রস্তাবটিও বিপুল সাড়া ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাস ভাড়া মকুবের মতো সস্তা রাজনৈতিক লোভ না দেখালেও কেজরিওয়াল এ বারের ভোটে ভালই ফলাফল করবেন। সরকারি স্কুলগুলিকে তিনি যে জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন এবং প্রতিটি এলাকায় যে ভাবে মহল্লা ক্লিনিকের ব্যবস্থা করেছেন, তাতে এমনিই দিল্লিবাসী খুশি। এগুলি জরুরি কাজ। বাস ভাড়া মকুবের মতো রাজনীতি না করলেও কোনও ক্ষতি ছিল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত হাজরার বক্তব্য, ''এ ধরনের সস্তা রাজনীতি একেবারেই অভিপ্রেত নয়। এই ফ্রি রাজনীতির কোনও শেষ নেই। দরকার পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি। যাদের দরকার তাদের দেওয়া হোক, সকলকে এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার কারণ নেই, প্রয়োজনও নেই। মনে রাখা দরকার, সরকার মানুষের করের টাকা এ ভাবে নষ্ট করতে পারে না।''