সামাজিকমাধ্যমে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ঠেকাতে ইইউর শক্ত পদক্ষেপ
১০ নভেম্বর ২০২৩
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে দেওয়া রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ঠেকাতে নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন৷
বিজ্ঞাপন
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বারাক ওবামার রাজনৈতিক দল এই কৌশল নিয়েছিল৷ ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির প্রোফাইলে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোট চাওয়ার এ কৌশলকে বলে মাইক্রোটার্গেটিং৷ খুব সূক্ষভাবে ব্যবহারকারীর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়৷ তারপর ওই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন সাজিয়ে নির্দিষ্ট ভোটারদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হয়৷
ঠিক এখানেই আপত্তি করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন৷ সোমবার এ বিষয়ে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ কাউন্সিল অব ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই চুক্তিতে বলা হয়, ইউনিয়নের নির্দিষ্ট শর্ত মানলেই কেবল এ ধরনের বিজ্ঞাপনের অনুমতি মিলবে৷ জোটের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷
বিশ্বে ডেটা ফাঁসের কয়েকটি বড় ঘটনা
প্রযুক্তির যুগে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা প্রদানের বিষয়টি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে বিশ্বজুড়ে তথ্য ফাঁসের ঘটনাও নতুন নয়৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য ফাঁসের ঘটনার কথা থাকলো ছবিঘরে৷
ছবি: Klaus Ohlenschläger/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের তথ্য
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রায় ১৯৮ মিলিয়ন ভোটারের তথ্য অরক্ষিত পাওয়া গেছে বলে দাবি করে একটি গবেষণা সংস্থা৷ এর মানে দাঁড়ায়, ইন্টারনেটে যে কেউই তথ্যগুলো পেতে পারে এমন অবস্থায় ছিল৷ এই ডেটা রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনি প্রচারণায় সহযোগিতা করেছিল বলে অভিযোগ আছে৷
ছবি: Nathan Posner/AA/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ার ৪০ ভাগ মানুষের তথ্য ফাঁস
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডাটা ফাঁসের ঘটনাটি ঘটে গত বছর৷ অস্ট্রেলিয়ার টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান অপটাসের দাবি, দেশটির প্রায় ১০ মিলিয়ন নাগরিকের তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে গিয়েছিল৷
ছবি: Mark Baker/AP/picture alliance
ভারতের আধার ডাটা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইডি ডেটাবেজ বলা হয় ভারতের আধার ডাটাবেজকে৷ ডাটাবেজটি মূলত ভারতীয় নাগরিকদের তথ্যের ভাণ্ডার৷ ২০১৮ সালে হ্যাকাররা এক দশমিক এক বিলিয়ন ভারতীয় নাগরিকের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল৷
ছবি: Aamir Ansari/DW
বাংলাদেশের নাগরিকদের অরক্ষিত তথ্য
বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের সর্বশেষ ঘটনার খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ৷ ৭ জুলাই তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এবারের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে সরকারি একটি সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে৷ কোন ওয়েবসাইট, তা নিরাপত্তার জন্য তারা প্রকাশ করেনি৷
ছবি: Marko Lukunic/Pixsell/picture alliance
ইয়াহু
এক সময়ের জনপ্রিয় ওয়েবভিত্তিক ইমেল সেবা প্রতিষ্ঠান ইয়াহু৷ ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট তিন বিলিয়ন ব্যবহারকারীর ডেটা ফাঁস হয় গিয়েছিল৷ সংখ্যার দিক থেকে এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ডেটা ফাঁসের কেলেঙ্কারি৷ ব্যবহারকারীদের নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা ইত্যাদি নিয়ে যায় হ্যাকাররা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. M. Davey
ফার্স্ট অ্যামেরিকান ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশন
ফার্স্ট অ্যামেরিকান ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশন হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান৷ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির ৮৮৫ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়৷ ডেটাবেজ সুরক্ষিত না থাকায় এমনটা হয়েছিল বলে মত বিশেজ্ঞদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফেসবুক
একই ঘটনার সম্মুখীন হয় জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক৷ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির ৫৪০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর তথ্য কয়েক মাস উন্মুক্ত ছিল বলে জানিয়েছিল একটি সিকিউরিটি কোম্পানি৷ তার আগে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৮৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর ডেটা হস্তান্তরের অভিযোগ আসে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhoto/picture alliance
ম্যারিয়ট হোটেল
সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য ফাঁসের ঘটনার কথা বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যারিয়ট হোটেলের নাম আসে৷ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির ৫০০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য খোয়া যায়৷
ছবি: Alexander Limbach/Zoonar/picture alliance
8 ছবি1 | 8
গোপন প্রভাব ঠেকানো
সদ্য সাক্ষরিত চুক্তির ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে তথ্য বিষয়ক নতুন একটি আইন প্রণয়ন সহজ হচ্ছে৷ আইনে বলা হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির তথ্য তখনই সংগ্রহ করা যাবে, যদি সেই ব্যক্তি পূর্ণ সম্মতি প্রদান করে যে এই তথ্য রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা যাবে৷
তাছাড়া যেসকল তথ্য ব্যক্তির জাতিগত পরিচয়, রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং লিঙ্গভিত্তিক পরিচয় প্রকাশ করে সেসকল তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না৷ এই আইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে৷
জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মার্টিন এমার ডয়চে ভেলেকে বলেন, নতুন আইনটি যে পুরোপুরি ব্যবহারকারীকে টার্গেট করা বন্ধ করে ফেলবে, বিষয়টি সেরকম নয়৷ এই আইনটি মূলত লুকানো প্রভাব ঠেকানোর জন্য করা হচ্ছে৷ বিষয়টি এমন যে, কোনো রাজনৈতিক দল, যারা নিজেদের আদর্শ বা মতবাদ প্রকাশ না করে ব্যবহারকারীর তথ্য কাজে লাগিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোটের প্রচার চালায় তাদের প্রভাব ঠেকানো৷
আইনটি বলছে, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলো এমন হতে হবে যেন এগুলোকে পরিস্কারভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং ব্যবহারকারী যেন এই বিজ্ঞাপনের পেছনে কারা রয়েছে, তা বুঝতে পারে৷