বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার সোশ্যাল মিডিয়া এবং ম্যাসেজিং অ্যাপ্লিকেশনের উপর নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়াচ্ছে, যা ইন্টারেনট স্বাধীনতার উপর বড় আঘাত বলে মনে করছে এক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ৷ জানা গেছে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রিডম হাউসের প্রকাশিত ‘দ্য ফ্রিডম অন দ্যা নেট' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত ছয় বছর ধরে অনলাইন ফ্রিডম ক্রমশ পড়তির দিকে রয়েছে৷ হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন কমিউনিকেশন অ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন অ্যাক্টিভিস্টরা৷
গবেষণাটির পরিচালক সঞ্জয় ক্যালি বলেন, ‘‘ফেসবুক ও টুইটারের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো গত কয়েকবছর ধরেই নিষেধাজ্ঞার শিকার হচ্ছে৷ এখন সরকারগুলো হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মতো ম্যাসেজিং অ্যাপের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে৷''
অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে ম্যাসেজিং অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে, কেননা, অনেক এনক্রিপটেড অ্যাপ রয়েছে যেগুলো সহজে মনিটর করা যায় না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ ক্যালি বলেন, ‘‘অস্থিরতা চলাকালে সাধারণ মানুষ যাতে সংবাদ আদানপ্রদান করতে না পারে সেটা অ্যাপগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ৷''
গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সময় ৬৫টি দেশের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৩৪টি দেশে গত বছরের জুন থেকে ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম' পড়তির দিকে রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ পরিস্থিতির অবনতি ঘটা দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উগান্ডা, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইকুয়েডর এবং লিবিয়া৷ একই সময়ে শ্রীলংকা এবং জাম্বিয়ায় পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে৷
এআই/এসিবি (এএফপি)
ইরানে পুলিশের নজর এড়াতে অ্যাপ
ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের নজর এড়াতে ‘গেরশাদ’ নামে অভিনব একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে৷ চলতি বছর ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার একটি বিভাগে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে প্রকল্পটি৷
ছবি: DW/Röhl
অ্যাপ তৈরির উদ্দেশ্য
‘গেরশাদ’ নামক অ্যাপটি তৈরির উদ্দেশ্য পুলিশকে এড়িয়ে চলা৷ ইরানের ‘গাশত-ই-এরশাদ’ বা নৈতিকতা পুলিশের কাজ রাস্তায় নারী ও পুরুষরা ‘ঠিক’ পোশাক ও সাজসজ্জা অনুযায়ী বের হয়েছে কি না তা দেখা৷ ব্যতিক্রম হলে ‘অপরাধী’ ধরে শাস্তি দেয়া৷
ছবি: gershad.com
অপরাধের ধরণ
নারীরা যদি স্কার্ফ দিয়ে মাথা না ঢাকেন, তাঁদের চুলের স্টাইল যদি রীতি অনুযায়ী না হয় এবং তাঁরা যদি অতিরিক্ত মেক-আপ নেন তাহলে তাঁদের নৈতিকতা পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়৷ ছেলেদের ক্ষেত্রে তাঁরা যদি পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরেন তাহলেই বিপত্তি ঘটতে পারে৷
ছবি: gershad.com
শাস্তি
‘অপরাধ’ অনুযায়ী শাস্তি দিয়ে থাকে পুলিশ৷ জরিমানা আদায় থেকে শুরু করে সংশোধন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে জীবনযাপনের উপর শিক্ষা দেয়া, কারাগারে পাঠানো এমন সব শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে৷ গেরশাদ এর পেছনের কারিগররা জানান, ২০১৩ সালে প্রায় ত্রিশ লক্ষ নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ৷ এর মধ্যে দুই লক্ষের বেশি জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে পত্র লিখতে হয়েছে৷ আর জেলে যেতে হয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি নারীকে৷
ছবি: DW
অ্যাপটি যেভাবে কাজ করে
অ্যান্ডরয়েড ফোন যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন৷ অ্যাপের মাধ্যমে শহরের কোন স্থানে নৈতিকতা পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে তা জানা যায়৷ ফলে পথচারীরা সহজেই ঐ পথ এড়িয়ে চলতে পারেন৷
ছবি: https://www.gershad.com
ব্যবহারকারীরাই তথ্য দেন
অ্যাপের ব্যবহারকারীরাই তথ্য দিয়ে জানিয়ে দেন, কোথায় চেকপোস্ট আছে আর কোথা থেকে চেকপোস্ট উঠিয়ে নেয়া হয়েছে৷ অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশকে এড়িয়ে বিকল্প পথে যাওয়ার পথও বাতলে দেয়া হয়৷
ছবি: gershad.com
সরকারের নিষেধাজ্ঞা
অ্যাপের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই ব্যবহারকারীরা এটি তাদের স্মার্টফোনে ডাউনলোড করা শুরু করলে সরকার এটি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷
ছবি: gershad.com
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
চলতি বছর ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার ‘প্রগতির জন্য প্রযুক্তি’ বিভাগে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে প্রকল্পটি৷ তবে অ্যাপটির নির্মাতারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চান৷ দ্য বব্সের ইরানি ভাষার বিচারক গোলনাজ এসফানডিয়ারিকে তাঁরা জানান, ‘‘এই পুরস্কার অ্যাপটির ব্যবহারকারীদের প্রাপ্য৷ এটা নিঃসন্দেহে যারা নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ বাহিনীকে এড়িয়ে চলতে চান, তাদের উপর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে৷’’