সাম্প্রদায়িকতা যখন রাজনীতির অভিমুখ হয়ে যায়, সহিংসতা তখন এক স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়৷ ভারত সে পথেই হাঁটছে৷
বিজ্ঞাপন
গরু বললে দীর্ঘদিন কেবল মহেশের কথা মনে পড়তো৷ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই গল্পে গফুর মিঞাঁ ছিলেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল না৷ বস্তুত, আমাদের ছোটবেলাতেও ১৪ ফেব্রুয়ারির তত নাম মাহাত্ম্য ছিল বলে মনে পড়ে না৷ ভালোবাসার কিশোর-মন সরস্বতীপুজোকেই ভ্যালেন্টাইনস ডে-র পরিপূরক করে ফেলেছিল৷ সরস্বতীপুজোর সেই প্রেমকাহিনি ফুটনোট-সহ ফেসবুকে লিখে সম্প্রতি যারপরনাই কেস খেয়েছেন অধমের এক বন্ধু৷ একটি পুজোর দিনকে কেন ভ্যালেন্টাইনস ডে-র সঙ্গে তুলনা করা হবে, কেন সেই দিনটিকে প্রেমের মতো এক অকিঞ্চিৎকর, ম্লেচ্ছ ভাবনার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্নবানে বিদ্ধ বন্ধুর ফেসবুক প্রোফাইল৷ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেই বন্ধুর বিরুদ্ধে রীতিমতো ইমেল করে অভিযোগ জানানো হয়েছে৷ তার অতীত ইতিহাস, রাজনৈতিক অবস্থান এবং ধর্মীয় ভাবনার এনসাইক্লোপিডিয়া তুলে ধরা হয়েছে সেই অভিযোগপত্রে৷ এরপর সেই অভিযোগ গৃহীত হবে কি না, তা অবশ্য এখনো পরিষ্কার নয়৷
ধর্মীয় সম্প্রীতি বাড়াতে কতিপয় উদ্যোগ
বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
জাতিসংঘের উদ্যোগ
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ‘বিশ্ব আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সপ্তাহ’ উদযাপন করে জাতিসংঘ৷ ধর্ম যা-ই হোক, সব মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা এর উদ্দেশ্য৷ এই সময় রাষ্ট্রগুলোকে গির্জা, মসজিদ, সিনাগগ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও শুভেচ্ছার বার্তা প্রচারে উৎসাহিত করে জাতিসংঘ৷ জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ ২০১০ সালে এমন সপ্তাহ পালনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷
ছবি: Eduardo Munoz/AP/picture alliance
পোপ ও আল-আজহারের ইমামের উদ্যোগ
মিশরের আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব ও পোপ ফ্রান্সিস ২০১৯ সালে ‘বিশ্ব শান্তি ও একসাথে বসবাসের জন্য মানব ভ্রাতৃত্বের নথি’তে সই করেন৷ এই নথির উপর ভিত্তি করে ২০২০ সালে জাতিসংঘ ৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মানব ভ্রাতৃত্ব দিবস’ ঘোষণা করে৷ এদিন মানব ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশ্বের যে কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে ‘জায়েদ অ্যাওয়ার্ড ফর হিউম্যান ফ্র্যাটার্নিটি’ দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
সৌদি বাদশাহর উদ্যোগ
২০০৮ সালে সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহর উদ্যোগে স্পেনের মাদ্রিদে একটি আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল৷ বৌদ্ধ, হিন্দু ও শিখদেরও সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সৌদি বাদশাহ৷
ছবি: Victor R. Caivano/AP Photo/picture alliance
পোপ ও সৌদি বাদশাহর উদ্যোগ
২০১২ সালে ভিয়েনায় ‘কিং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টাররিলিজিয়াস অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল ডায়ালগ’ বা কেএআইসিআইআইডি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এটি একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা, যা সংঘাত প্রতিরোধ ও সমাধানের জন্য আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপকে উৎসাহিত করে৷ ২০০৭ সালে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট ও সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহর বৈঠকের পর এই সংগঠন তৈরি করা হয়৷
ছবি: CHROMORANGE/IMAGO
বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ
‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ নামে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প আছে৷ এর আওতায় বিভিন্ন জেলায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়৷ এছাড়া গতবছর জুলাইতে বছরব্যাপী একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়৷ এর আওতায় ওয়েব ড্রামা সিরিজ, টিভি কমার্শিয়াল, নাটক, টক শো, মিউজিক ভিডিও ও ডকুমেন্টারি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়৷ এছাড়া সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক বার্তা-সমৃদ্ধ লিফলেট, পোস্টার, বিজ্ঞাপন তৈরিরও পরিকল্পনা করা হয়৷
ছবি: Privat
বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ
‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ নামে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প আছে৷ এর আওতায় বিভিন্ন জেলায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়৷ এছাড়া গতবছর জুলাইতে বছরব্যাপী একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়৷ এর আওতায় ওয়েব ড্রামা সিরিজ, টিভি কমার্শিয়াল, নাটক, টক শো, মিউজিক ভিডিও ও ডকুমেন্টারি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়৷ এছাড়া সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক বার্তা-সমৃদ্ধ লিফলেট, পোস্টার, বিজ্ঞাপন তৈরিরও পরিকল্পনা করা হয়৷
ছবি: Joy Saha/Zumapress/picture alliance
আন্তর্জাতিক সংস্থার আয়োজন
বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে শান্তি ছড়িয়ে দিতে ১৯৭০ সালে ‘রিলিজিয়নস ফর পিস’ আরএফপি সংগঠন যাত্রা শুরু করে৷ এর সদরদপ্তর নিউইয়র্কে৷ সংগঠনটি নিজেদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তঃধর্মীয় বেসরকারি সংস্থা মনে করে৷ জার্মান সরকারের আর্থিক সহায়তায় ২০১৯ সাল থেকে জার্মানির লিন্ডাও শহরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে আরএফপি৷
ছবি: Christoph Strack/DW
জার্মানিতে আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন
প্রতি দুই বছরে একবার জার্মানির লাইপসিশে বিভিন্ন ধর্মের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে প্রোটেস্ট্যান্ট, ক্যাথলিক, রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ, ইহুদি, মুসলিম, বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মের প্রতিনিধিরা অংশ নেন৷
ছবি: DW
বিভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথার আদান-প্রদান
২০০২ সালে ইহুদি বন্ধু ও খ্রিস্টান এক কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ‘ইন্টারফেইথ ইয়ুথ কোর’ গঠন করেছিলেন এবু প্যাটেল নামের এক মুসলিম যুবক৷ লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীর মধ্যে কথা আদান-প্রদান করা৷ এছাড়া ক্ষুধার্তদের খাওয়ানো ও শিশুদের পড়াশোনা করানোর কাজগুলোও একসঙ্গে করতেন তারা৷ সংগঠনটি ‘ইন্টারফেইথ অ্যামেরিকা’ নাম ধারণ করে এখনও সক্রিয় আছে৷ তাদের লক্ষ্য, আন্তঃধর্মীয় সহযোগিতাকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করা৷
ছবি: Stephen Shugerman/Getty Images
9 ছবি1 | 9
যে কোনো গরুর রচনার মতোই এই লেখাও গফুর থেকে হিন্দুত্ববাদে পৌঁছে গেছে এক প্যারাগ্রাফেই৷ ফের গরুতে ফেরা যাক৷
ভারতীয় অ্যানিম্যাল হাসবেন্ডারি মন্ত্রণালয় অতি সম্প্রতি একটি নোটিস জারি করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতি (ভারতীয় সংস্কৃতি কেবলমাত্র বৈদিক হলো কবে থেকে, তার কোনো উল্লেখ নেই চিঠিতে) অবলুপ্তির পথে৷ বৈদিক সংস্কৃতি আমাদের গরুর প্রতি অনুরক্ত করে৷ পশ্চিমি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশে আমাদের এইসমস্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্রমশ ধ্বংস হয়েছে৷ সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানোর জন্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সকলকে গরুকে জড়িয়ে ধরে সেলফি পোস্ট করতে হবে৷
পাঠক, ভুল পড়েননি৷ ভারতের একটি কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয় সই করে, স্ট্যাম্প মেরে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে৷ চিঠির টাইটেলে ‘কাও হাগ ডে’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এক শ্রেণির মানুষ ভ্যালেন্টাইনস ডে-র আগে থেকেই চিঠির নির্দেশ পালন করতে শুরু করেছেন৷ আরেক শ্রেণির মানুষ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে হাস্যরসে মাতোয়ারা হয়েছেন৷ আর আমার ভাবনায় গফুর মিঞাঁ কেবলই ফিরে আসছেন মহম্মদ আখলাক হয়ে৷ ফ্রিজে গোমাংস থাকতে পারে এই অপরাধে একদিন যাকে পিটিয়ে ভ্যানিশ করে দেওয়া হয়েছিল৷ ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে কাও হাগ ডে পালন করার ফরমান পড়েই আশঙ্কা হলো, দিকে দিকে আরো আকলাখ-কাণ্ডের ফ্লাডগেট খুলে গেল না তো?
ভালোবেসে গরুর সঙ্গে সেলফি তুললে, গরুকে জড়িয়ে ধরলে আপত্তি থাকার কথা নয়৷ কিন্তু যারা সে কাজ করছে না, তাদের উপর হিন্দুত্বাবাদী ব্রিগেড চড়াও হবে না তো! পশ্চিমি সংস্কৃতি বন্ধ করার নামে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে পাবে-ক্লাবে-বারে ঢুকে উগ্র তাণ্ডবের সাক্ষী এই সমাজ৷ কেবলমাত্র ধর্মের জন্য, বর্ণের জন্য পিটিয়ে খুন করে দেওয়ার দৃষ্টান্ত আছে এই সমাজেই৷ এই সমাজ প্রশ্রয় দেয় লাভজিহাদের মতো শব্দবন্ধ৷ এই সমাজ কয়েহাজার দাঙ্গার সাক্ষী৷ অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ জুড়ে যে ইতিহাস বয়েই চলেছে৷ তাই আশঙ্কা হয়৷
আশঙ্কা বাড়ে, যখন দেখি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে সেই উগ্রতাকেই ব্যবহার করছে বিরোধীপক্ষ৷ পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও ধর্ম হয়ে উঠেছে রাজনীতির ভাষা৷ গোটা সমাজ, গোটা রাজনীতি এক আশ্চর্য সংকীর্ণ ধর্মের আধারে ঢুকে পড়ছে৷ এ আধারে বড়ই আঁধার৷ আলো দেখানোর মতো লাইটম্যান নেই আশেপাশে৷ প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সাম্প্রদায়িক টেনশন তৈরি হচ্ছে৷ পাশাপাশি বসবাস করা মানুষ একে অপরকে সন্দেহ করছে৷ মূর্খ, সহিংস, ঘৃণার এক সভ্যতা রচিত হচ্ছে প্রতিদিন৷ সাম্প্রদায়িকতাই কার্যত ভারতীয় সমাজ এবং রাজনীতির মূলস্রোতের ভাষায় পরিণত হয়েছে৷
গরুকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক ভারতীয় রাজনীতির পরিমণ্ডলে একজন গফুর মিঞাঁর তাই বড্ড প্রয়োজন৷
২০১৯ সালের এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...
ভারতের নির্বাচনে গরুর গুরুত্ব
ভারতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এখন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরেও জাতীয়তাবাদের প্রতীক বলতে সবার মুখে একটাই নাম ‘গো-মাতা’৷ কীভাবে ছড়াচ্ছে এই চিন্তা, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/S.Panthaky
আগে ছিল রাম
নব্বইয়ের দশকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীক বা আদর্শিক মূলে ছিল অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের প্রকল্প, যাকে ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে শক্তিশালী হতে থাকে ভারতীয় জনতা পার্টি, বিজেপি৷ এখন রাম মন্দির নির্মাণের আন্দোলন মূলস্রোতের রাজনীতিতে হারিয়ে গেলেও তার জায়গা নিয়েছে ‘গো-রক্ষা’ ও ‘গো-মাতা’র মতো নতুন ইস্যু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Armangue
গরুর গুরুত্ব
সনাতনধর্ম প্রচলনের বহু আগে থেকেই দক্ষিণ এশিয়ায় গবাদি পশু ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ ধার্মিক আচারের মধ্যে এই প্রাণীর পবিত্রতার কথা উল্লেখ থাকায় ভারতে তার গুরুত্ব বেড়েছে কয়েকগুণ৷ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন উৎসবে গরুকে আরাধ্য হিসাবে দেখা হয়৷ গরুর বহু গুণের জন্য তাকে অনেকে পুজো করেন ‘মাতা’ হিসাবে৷ ওপরের ছবিতে এক নারীকে দেখা যাচ্ছে রামনবমী উপলক্ষে গরুকে খাওয়াতে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Faget
গরু বাঁচাতে যা হলো...
২০১৪ সালে যখন বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তখন তাদের নির্বাচনি ইশতাহারের অনেকটা জুড়ে ছিল ‘গো-রক্ষা’র প্রচার৷ বলা হয়েছিল যে, ক্ষমতায় আসলে প্রতিটি রাজ্যে গো-রক্ষা কমিটি গঠন করা হবে৷ গো-মাংস ভক্ষণ করে যারা, তাদের হাত থেকে ‘গো-মাতা’কে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি রাজ্যে তা গঠিতও হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Armangue
গরুর জন্য খুন!
২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে গো-রক্ষার নামে ভারতে এখন পর্যন্ত ২৮০ জন আক্রান্ত হয়েছেন৷ বেশ কয়েকজন প্রাণও হারিয়েছেন৷ প্রশ্ন উঠছে, গরুকে বাঁচানোর নামে কি তবে ভারতে চলছে মানুষ মারার উৎসব? শুধু তাই নয়, যারা হিন্দু নন তাদের বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা গো-মাংস ভক্ষণের অভিযোগ তুলছে, যা হিন্দুত্ববাদীদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে বলে জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের ‘গো-রক্ষা বাহিনী’র সদস্য কমল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Armangue
নিষিদ্ধ গো-মাংস
২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতের একাধিক রাজ্যে গো-মাংস নিষিদ্ধ করে৷ একই সাথে রাজ্যগুলিতে বাড়তে থাকে বিভিন্ন গো-রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা, যারা প্রায়ই গো-রক্ষার নামে সংখ্যালঘু মানুষদের নানাভাবে হেনস্থা করে৷ উল্লেখ্য, গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ হলেও বর্তমানে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গো-মাংস রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় দ্বিতীয়৷ ওপরের ছবিটি প্রয়াগরাজের একটি গো-রক্ষা কেন্দ্রের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Armangue
আইন বড়, না গরু?
নরেন্দ্র মোদী একটি কমিটি গঠন করেন, যার উদ্দেশ্য ভারতের আদি নিবাসী যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা, তা প্রমাণ করা৷ এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের আধিকারিক অভিনব প্রসূন বলেন, ‘‘এটি রাজনৈতিক বিষয়৷’’ এভাবেই হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীদের তালে তাল মিলিয়ে বদলাচ্ছে আইন, সরকারি কর্মসূচি৷ গো-রক্ষা থেকে হিন্দুত্ববাদী কমিটি- সবখানেই স্পষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা৷ গরু হয়ে উঠছে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের প্রতীক৷
ছবি: AP
ভোটের বাজারে গরু
ভারতে গো-রক্ষার নামে যে সহিংসতা চালু হয়েছে গত কয়েক বছরে, তা সবারই জানা৷ আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীত্ব লাভ করেছেন এমন দু’জন ব্যক্তি যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে গো-রক্ষার নামে মানুষ খুনের অভিযোগ! গরুকে জাতীয়তাবাদের প্রতীক বানিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভয়ের পরিবেশ৷ কিন্তু এবারও কি নির্বাচনে গো-রক্ষার জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে?