1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সাম্প্রদায়িকতা বন্ধে কড়া আইন প্রয়োজন'

২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের মানুষ মোটা দাগে সাম্প্রদায়িক না হলেও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী কড়া আইনের পক্ষে ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সাম্প্রদায়িকতার নানাদিকে আলোকপাত করেন৷

ছবি: picture-alliance/Zuma Press/S. K. Das

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে মাঝেমাঝেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর কথা শোনা যায়৷ সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে৷ সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম কতটা ভূমিকা রাখছে?

আরিফ জেবতিক: এটার দু'টো দিক৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এটা ছড়াতে ভূমিকাও রাখছে, আবার প্রতিরোধেও কাজ করছে৷ উভয়ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ভূমিকা রাখছে৷ যখনই কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার খবর শোনা যায়, বা এ ধরনের কিছু, তখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়, এবং এক ধরনের সচেতনতা বৃদ্ধি করে৷

পাশাপাশি, এ কথাও খুবই সত্য যে, সাম্প্রদায়িক হামলা বা সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরিতে খুবই শক্তমাত্রায় কাজ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম৷ কারণ হচ্ছে, এটা মানুষের একটা অন্ধকার দিক৷ যেটা মানুষ হয়ত তার পরিবেশে বা সমাজে হয়ত এককভাবে বলতে পারে না, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এসে যেটা হয়, সে মুখোশের আড়ালে থেকে তার অন্ধকার জায়গাটা উগড়ে দিতে পারে৷ এবং তখন অন্য এলাকার আরেকজন লোক যখন দেখে যে, আমার মতো চিন্তাভাবনার আরেকটা লোক আছে, তখন সে এক ধরনের নৈতিক বা মানসিক শক্তি পায়৷ তখন দেখা যায়, এই ক্রিমিনালরা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিতে এক ধরনের অর্গানাইজড হয়, তারা বিভিন্ন পেইজ তৈরি করে এবং সেসব পাতার মাধ্যমে উসকানিগুলোকে ছড়িয়ে দেয়৷

‘আমাদের দেশে, সংখ্যালঘু মানুষের জায়গা, জমি দখল করার এক ধরনের প্রবণতা আছে’

This browser does not support the audio element.

ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বাইরে আর কীভাবে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে?

সাম্প্রদায়িকতার আসলে অনেকগুলো দিক আছে৷ একটা হচ্ছে, অর্থনৈতিক দিক৷ আমাদের দেশে, সংখ্যালঘু মানুষের জায়গা, জমি দখল করার এক ধরনের প্রবণতা আছে৷ বিশেষ করে অনেক জায়গায় ক্ষমতা যারা চর্চা করে, যারা শক্তিশালী লোকজন, তারা তখন সাম্প্রদায়িক ধোঁয়া তৈরি করে৷ আপনি যদি বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার ট্রেন্ড পর্যালোচনা করেন, তাহলে দেখবেন, এটার মধ্যে অন্যতম ছিল জমিজিরাত বা ব্যক্তিগত শত্রুতা, যা পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক হামলার দিকে নিয়ে এসে সেই লোকটাকে কোণঠাসা করে তার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা ছিল৷

দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাপার হলো, আমাদের এখানে যে ধর্মীয় ওয়াজমাহফিল হচ্ছে, এখানে কিছু কিছু বক্তা খুবই উগ্র, সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে থাকে৷ আপনি দেখবেন, ইউটিউবে তাদের ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে ওরা বলছে যে, ‘‘আমাদের জন্ম হয়েছে মূর্তি ভাঙার জন্য, আমাদের জন্ম হয়েছে কাফির নিধনের জন্য৷'' এ ধরনের কথাবার্তা বলে উস্কানি দিচ্ছে৷ এই ওয়াজের শ্রোতারা সহজ, সরল মানুষ, তারা যখন ধর্মীয় ব্যাখ্যায় মনে করে যে, সত্যিই যখন আমার ধর্ম বলেছে, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করতে বা তাদেরকে ঘৃণা করতে, তখন জনমানসে এটার একটা প্রতিক্রিয়া হয়, যেটা খুবই বিপজ্জনক৷

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ কেউ এটাও বলার চেষ্টা করেন যে, ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের উসকে দিচ্ছে কিছু ব্লগার, যারা নিজেদের নাস্তিক মনে করে এবং ধর্মবিরোধী লেখালেখি করে৷ এটা আপনি কীভাবে দেখছেন?

এটা একটা খুব উদ্ভট বিষয়৷ আপনি যদি মনে করেন যে, সূর্য পূর্বদিকে উঠছে, এ কারণে সাম্প্রদায়িক হামলা বেড়ে যাচ্ছে, সেটাও আপনি বললে তো আটকানোর কিছু নেই৷ কারণ, ইন্টারনেটের যুগে আর কত আটকাবেন৷ আর কয়টা লোকই বা ধর্মবিদ্বেষ নিয়ে লেখে৷ যারা লেখে, মানে ধরেন, একটা হিন্দু লোক তো মুসলমানকে গালি দিচ্ছে না, বা ঐ জিনিসটা হচ্ছে না৷ যারা ঐ ধরনের উগ্র ধর্মবিদ্বেষ লিখছে, তাদের কাছে ইসলামও পছন্দ না, হিন্দুত্ববাদও পছন্দ না, খ্রিষ্টানও পছন্দ না৷ সে হচ্ছে ধর্মহীন একটা লোক৷ সে ধর্মের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না৷ সুতরাং তার কারণে আপনি তো একজন হিন্দু লোককে মারতে পারেন না৷ একটা বৌদ্ধকে মারতে বা একটা রামু তৈরি করতে পারেন না৷

আপনি যদি রসরাজের ঘটনা দেখেন বা রামুর হামলার কথা বললাম, এ সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে, একটা লোক ইন্টারনেটে কিছুই বলে নাই, অথচ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, সে আমাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত হেনেছে৷ রসরাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল না, বেচারা ইন্টারনেট জানে না, জেলে মানুষ৷ কিন্তু তাকেও জড়িয়ে, ভুয়া অভিযোগ করে, সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে৷ এটার পেছনে জমিজিরাত এবং স্থানীয় প্রভাব বিস্তারের একটা ব্যাপার ছিল৷  

সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে?

সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে দু'টো কাজ করা যেতে পারে৷ প্রথমত, এক ধরনের নীতির মধ্যে তো থাকতে হবে৷ আপনি দেখবেন যে, পশ্চিমা বিশ্বে কিছুদিন আগেও কিন্তু রেসিজম ছিল৷ কিন্তু এখন যেটা হয়েছে, এটাকে একটা নীতিমালা, কড়া আইনের মধ্যে আনা হয়েছে, যে কারণে আপনি চাইলেই একজন মানুষকে তাঁর বর্ণের জন্য বা ডিফারেন্ট রেইসের জন্য ট্রিট করতে পারেন না৷ এটার একটা বিচার হয়৷

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী কোনো ধরনের নীতিমালা বা আইন আছে কিনা আমরা জানি না৷ থাকলেও এটার কোনো প্রয়োগ নেই৷

পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে অডিও ফাইলে ক্লিক করুন৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ