1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘তোমারই তরে মা’

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৬ অক্টোবর ২০১৩

মো. সাঈদ মিয়া৷ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন৷ তাঁর কথা ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’৷ তিনি চান ধর্মের নামে যেন অধর্ম না হয়৷ কাউকে হত্যা করা না হয়৷

Youths burn vehicles and debris in the streets of Ahmadabad, in the Indian state of Gujarat, Thursday, Feb. 28, 2002, a day after a Muslim mob attacked a train, killing at least 58 people. Hindu mobs attacked Muslims across Gujarat on Thursday, burning homes and businesses in riots that killed 20 people. (AP Photo/Manish Swarup)
ছবি: AP

এই সাঈদ মিয়া ঢাকার পাশেই কেরাণীগঞ্জের বাসিন্দা৷ আর অবাক করা ব্যাপার হলো দাঙ্গাবাজ হিসেবে বেড়ে ওঠা এই মানুষটি শেষ পর্যন্ত দাঙ্গা দমনে ভূমিকা রেখেছেন৷ এমনকি নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেও৷

১৯৪৩ এবং ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় তিনি অংশ নিয়েছেন একজন দাঙ্গাবাজ হিসেবে৷ সেই তিনি ১৯৪৭ এর দাঙ্গার সময় দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন৷ ধর্মের নামে মানুষের রক্ত নিয়ে হোলিখেলা শেষ পর্যন্ত তিনি আর মানতে পারেননি৷ জেগেছে তাঁর মানবিকতা বোধ৷ ধর্ম নয়, মানুষ পরিচয়ই তাঁর কাছে বড় হয়ে উঠেছে৷

সেন্টু রায়ের ‘তোমারই তরে মা' তথ্যচিত্রের অন্যতম একটি চরিত্র হলেন এই সাঈদ মিয়া৷ ঢাকার ছায়ানট ভবনে শুক্রবার সন্ধ্যায় হয়ে গেল সেই তথ্যচিত্রের প্রথম প্রদর্শনী৷ আর সেই প্রদর্শনীতে উপস্থিত থেকে বয়সের ভারে নুব্জ সাঈদ মিয়া বললেন ধর্ম ভিত্তিক নয়, ধর্মনিরপেক্ষ এক মানবিক রাষ্ট্র চান তিনি৷

ব্রিটিশ শাসনামলে ধর্মের ভিত্তিতে ‘ভাগ কর এবং শাসন কর' নীতি যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছিল তা আজো শেষ হয়নি৷ ধর্মের ভিত্তিতে ভোটাধিকারের বিধান করে ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে চরম ধর্মীয় বিভেদ উস্কে দেয়৷ আর তার আগুনে জ্বলতে থাকে হিন্দু, মুসলমান দুই সম্প্রদায়৷

ছবি: Reuters

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে তার রেশ চলতে থাকে৷ ১৯৪৮, ১৯৫০ এবং ১৯৫৮-এর দাঙ্গা পূর্ব বাংলাকে বিপর্যস্ত করে৷ শিকার হন প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন৷ আর এর নেপথ্যে ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা৷ কিন্তু ধর্মের নামে যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে, হত্যা করেছে তারা জয়ী হতে পারেনি৷ জয়ী হয়েছে মানবিকতা বোধ৷ হিন্দু সম্প্রদায়কে দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে রক্ষা করতে মুসলমানরাই প্রাণ দিয়েছেন৷ যাদের মধ্যে আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, আমীর হোসেন চৌধুরী, নিয়াজ আলী মাষ্টার অন্যতম৷ ১৯৫৮ সালের দাঙ্গার বিরুদ্ধে সারা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল সংবাদপত্র৷ তারা শিরোনাম করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও'৷ আর পূর্ব পাকিস্তান ঠিকই রুখে দাঁড়িয়েছিল৷ ঢাকায় স্মরণকালের দাঙ্গা বিরোধী বিশাল শান্তি মিছিল দাঙ্গা বন্ধ করতে পেরেছিল৷ আর একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে এই জাগ্রত জনতার চেতনা বড় ভূমিকা রেখেছে৷

সেন্টু রায় তাঁর তথ্যচিত্রে এসব ঘটনা তুলে এনেছেন সেই সব দাঙ্গার শিকার, প্রত্যক্ষদর্শী এবং তাদের উত্তর পুরুষের কাছ থেকে৷ চেষ্টা করেছেন ঘটনার সত্যনিষ্ঠতা বজায় রাখতে৷ তবুও প্রশ্ন ছিল সেই সময়ের অমানবিক এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্রায়ন ঘৃণা উস্কে দেবে কিনা৷ তাঁর জবাব ‘ঘৃণা নয়, মানবিতাবোধ জাগ্রত করাই তাঁর উদ্দেশ্য৷ আর মানবিকতা যে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় তার প্রমাণ তথ্যচিত্রেও আছে৷' দর্শকরাও তাঁর কথায় সায় দেন৷ তাঁরা বলেন তাঁরা বেদনার্ত হয়েছেন এই দাঙ্গার তথ্য জেনে৷ ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক এই দাঙ্গা যেন আর না ঘটে কখনো তার জন্য সজাগ থাকবেন৷

তবুও থামেনা৷ স্বাধীন বাংলাদেশেও কখনো কখনো রাজনৈতিক কারণে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়া হয়েছে৷ দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ আর সর্বশেষ কক্সবাজারের রামুতে হলো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, গুজব ছড়িয়ে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ইউরোপ