1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদ উত্‍সবে বৈষম্য

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৯ আগস্ট ২০১৩

বাংলাদেশে উত্‍সাহ উদ্দীপনা এবং ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর৷ এই উত্‍সব সার্বজনীন উত্‍সবে পরিণত হয়েছে৷ আর ধনী গরিবের এক কাতারে নামাজই শুধু নয় তাদের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনাও ঈদের উদ্দেশ্য৷

epa03817561 Muslim devotees attend the Eid al-Fitr prayer at the National Mosque in Dhaka, Bangladesh 09 August 2013. Millions of Muslims are celebrating their biggest religious festival Eid al-Fitr which marks the end of the holy month of Ramadan. EPA/ABIR ABDULLAH
ছবি: picture-alliance/dpa

ঈদের দিনেও রিকশা চালাতে হয়েছে মো. শাহ আলমকে (৪২)৷ রংপুরের মঙ্গা প্রবণ এলাকা থেকে ঢাকায় এসেছেন ৫ বছর আগে ৷ থাকেন বসিলা এলাকার বস্তিতে৷ ৪ ছেলে মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার৷ স্ত্রী জাহানারা বেগম গৃহকর্মীর কাজ করেন৷ আর তিনি রিক্সা চালান৷ এতে তাঁদের ৬ জনের সংসার কোনোভাবে চলে যায়৷ কিন্তু ঈদ-কোরবানির মত বড় কোনো উত্‍সবে তাঁরা পড়েন বিপাকে৷

তিনি যেমন ঈদের দিন সকালেই রিক্সা নিয়ে বেরিয়েছেন৷ তাঁর স্ত্রীও সকালেই কাজে বেরিয়েছেন৷ তাঁদের জীবনে ঈদ বাড়তি কোনো সুখবর বয়ে আনেনা৷ শাহ আলম বললেন, বরং এক ধরনের কষ্ট তাঁদের ওপর চেপে বসে৷ কারণ তাঁদের সন্তানদের তাঁরা তেমন কিছুই দিতে পারেন না ঈদে৷ অথচ যাত্রীদের সঙ্গে দামি পোশাক আর বাজারের বোঝা বয়েছেন৷ বাইরে থেকে দেখছেন আলো ঝলমলে দোকানপাট৷ যেখানে তাঁরা ঢোকারও সাহস করেন না৷ এই বেদনার কথা একজন শাহ আলমেরই শুধু নয়৷ ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এরকম অন্তত ৮ কোটি শাহ আলম পাওয়া যাবে৷

দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামায়াত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়৷ এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ সেই জামায়াতের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বললেন, ঈদের আদর্শ এক দিনের জন্য নয়৷ সারা বছরের জন্য৷ ধনী-গরিবের বৈষম্য কমানোর কথা বলে ঈদ৷ আর বলা হয়েছে ধনীর সম্পদে আছে গরিবের অধিকার৷ তাহলে এই ঈদে তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনা কেন?

জবাবে তিনি বলেন, ঈদ উত্‍সব করা আর তার আদর্শকে ধারণ করা এক জিনিস নয়৷ ঈদে দামি পোশাক আর বিলাসব্যসন যেমন একদিকে, অন্যদিকে এক শ্রেণির মানুষের আছে না পাওয়ার বেদনা৷ এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না৷ ঈদ উত্‍সবের নামে সম্পদের উত্‍কট প্রকাশ ইসলাম সমর্থন করেনা৷ তাঁর মতে, ঈদ যেখানে অসাম্য দূর করবে, সেখানে কখনো কখনো ধনী গরিবের পার্থক্য আরো তীব্রভাবে প্রকাশ পায়৷ যা ইসলাম সমর্থন করে না৷ ইসলাম মনে করে ধনীর সম্পদে আছে গরিবের অধিকার৷

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে এখন ৩১.৫ ভাগ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে৷ আর এই সংখ্যা হল ৫ কোটিরও বেশি৷ আর এদের মধ্যে বড় একটি অংশ হতদরিদ্র৷ তবে এই দারিদ্র্য সীমার উপরে বড় একটি অংশ যারা নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত, তারাও তেমন ভাল নেই৷ উত্‍সব আয়োজনে তাঁরাও দরিদ্রদের মত সংকটে পড়েন৷

বাংলাদেশে উত্‍সাহ উদ্দীপনা এবং ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরছবি: picture-alliance/dpa

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, এটা দুঃখজনক হলেও সত্য, যে ঈদ-কোরবানির মত উত্‍সব আয়োজনে আয় বৈষম্য বা ধনী-দরিদ্রের পার্থক্যটা নগ্নভাবে প্রকাশ পায়৷ কারণ যারা ধনী, তাদের বড় একটি অংশ তাদের সম্পদের প্রদর্শন করার সুযোগ পান এই সময়ে৷ তবে এও সত্য যে ইসলামের বিধি বিধানের কারণে এই সময়ে ধনীদের কিছু সম্পদ গরিবের কাছে যায়৷ তবে এতে সাম্য বা সমতা আসেনা৷

তিনি জানান, বাংলাদেশে এখন বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৯২০ ডলারের বেশি৷ কিন্তু এই মাথাপিছু আয় দিয়ে বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবেনা৷ কারণ অল্প সংখ্যক মানুষের হাতে অধিকাংশ সম্পদ পুঞ্জিভূত৷ আর মাথাপিছু আয় হল জাতীয় আয়ের মাথা পিছু গড় হিসাব৷ তিনি বলেন, বণ্টন ব্যবস্থা ভাল না হলে মাথা পিছু আয় বাড়লেও আয় বৈষম্য কমেনা৷ গরীব মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়েনা৷ যাদের বেশি সম্পদ, তাঁদের ওপর বেশি কর আরোপ করে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা এবং বাজার ব্যবস্থাকে দরিদ্রবান্ধব করলে এই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ