সরকার অনুমতি না দেয়ায় মঙ্গলবার ঢাকার মহাসমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে, বলে দাবি হেফাজতের৷ তবে পুলিশ বলছে হেফাজত নিজ থেকেই সমাবেশ স্থগিত করেছে৷ তাদের সমাবেশ করতে না দেয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
তবে ঢাকায় সমাবেশ করতে না পারলেও সারাদেশে সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম৷
সংগঠনটি তাদের ১৩ দফা দাবি আদায়ে ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার৷ কিন্তু ঢাকায় এই সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার দাবি করে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা৷ হেফাজতের নায়েবে আমির এবং ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী বারিধারায় জামেয়া মাদানিয়া মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যাবতীয় প্রস্তুতি থাকার পরও সরকারের বাধার কারণে তারা সমাবেশ করতে পারছেন না৷ তিনি জানান পুলিশের বাধার কারণে হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা শাহ আহমেদ শফি ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারি থেকে ঢাকায় রওয়ানা হতে পারেননি৷
হাটহাজারির সহকারী পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন জানান মাওলানা শাহ আহমেদ শফি ও জুনায়েদ বাবুনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারি বড় মাদ্রাসা থেকে সকাল ১১টার পর ঢাকায় যাওয়ার জন্য বের হন৷ তখন পুলিশের একটি দল তাদের ঢাকায় না যেতে অনুরোধ করলে তারা মাদ্রাসায় ফিরে যান৷
ঢাকা অবরোধের নামে হেফাজতের তাণ্ডব
রবিবার (০৫.০৫.১৩) ঢাকা অবরোধের নামে মতিঝিল এলাকায় প্রায় ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/GettyImages
ঢাকা অবরোধের নামে তাণ্ডব
রবিবার (০৫.০৫.১৩) ঢাকা অবরোধের নামে মতিঝিল এলাকায় প্রায় ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা৷ এতে মতিঝিল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়৷ হেফাজতের কর্মীরা দোকানপাট, মার্কেট, বাণিজ্যিক ভবন, অফিস, গাড়ি সব কিছুতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷
ছবি: Reuters
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
হেফাজত যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল তখন পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়৷ মতিঝিল এলাকা পরিণত যুদ্ধক্ষেত্রে৷ শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, সেখানকার আবাসিক ভবনগুলোতে এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷
ছবি: Reuters
রাতে অভিযান
সমাবেশের জন্য বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টার পরও শাপলা চত্বরে থেকে যাওয়ার ঘোষণা দেয় হেফাজতের কর্মীরা৷ এরপর রাত আড়াইটার দিকে বিজিবি, ব়্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনী মতিঝিলকে ঘিরে অভিযান শুরু করলে ১০ মিনিটের মধ্যেই হেফাজতের কর্মীরা পিছু হটে যায়৷
ছবি: Reuters
কাঁচপুরে অবস্থান
মতিঝিল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর হেফাজত কর্মীদের বড় একটি অংশ সোমবার (০৬.০৫.১৩) সকালে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থান নেয়৷ তারা সেখানে পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়৷ (ফাইল ছবি)
ছবি: AFP/Getty Images
হামলার শিকার সংবাদমাধ্যম
হেফাজতের হামলা থেকে মুক্তি পায়নি গণমাধ্যমের কর্মীরাও৷ এছাড়া পল্টন এলাকায় অবস্থিত ব়্যাঙ্গস ভবনের ‘সকালের খবর’ পত্রিকা অফিসে আগুন দিয়েছে তারা৷
ছবি: Reuters
ভেঙে দেয়া হলো গণজাগরণ মঞ্চ
রবিবার রাতেই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের মঞ্চসহ সব কিছু সরিয়ে ফেলে পুলিশ৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
ধরপাকড়
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হেফাজতের কর্মীদের আটক করে পুলিশ৷
ছবি: Reuters
১৩ দফা দাবি
কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবিতে ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি পালন করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/GettyImages
8 ছবি1 | 8
তবে এই ঘটনার পর হাটহাজারি মাদ্রাসার ভিতরে এক সংবাদ সম্মেলনে জুনায়েদ বাবুনগরী দাবি করেন পুলিশি বাধার কারণে তিনি এবং হেফাজতের আমির ঢাকা যেতে পারেননি৷ ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেয়া হলে সারাদেশে জেলায় জেলায় সমাবেশ করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন৷
এদিকে হেফাজতের দুই শীর্ষ নেতাকে পুলিশ ঢাকা যেতে দেয়নি এই খবরে হাটহাজারি মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়৷ তারা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু করে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাদের শান্ত করতে সক্ষম হয়৷ অন্যদিকে ঢাকায় জামেয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার চারপাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ এই মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন হেফাজতের নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী৷
হেফাজতে ইসলাম ঢাকার শাপলা চত্বরে মঙ্গলবারের সমাবেশের জন্য সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের সহায়তা চেয়েছিল৷ সরকারের কাছে সমাবেশের অনুমতি ও নিরাপত্তা এবং বিরোধী দলের কাছে অবরোধ প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিল৷
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, হেফাজত নিজে থেকেই সমাবেশ স্থগিত করেছে৷ বিরোধী দল অবরোধ প্রত্যাহার না করায় তাদের পক্ষে সমাবেশ করা সম্ভব ছিল না৷ সরকার হেফাজতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি এই দাবি সঠিক নয়, বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন হেফাজতকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়া হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত তারা নেননি৷ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই তারা সমাবেশ স্থগিত করেছেন৷
‘নাস্তিক ব্লগার’ ইস্যুতে ইসলামি দলের তাণ্ডব
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মনিন্দার’ অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ বাংলাদেশের কয়েক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিভিন্ন ইসলামি দল৷ এতে প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্র
শুক্রবার (২২.০২.১৩) দুপুর বারোটার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ১২টি ইসলামি ও সমমনা দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের ভাষায় যেসব ব্লগার ইন্টারনেটে ‘ধর্মনিন্দা’ করে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলন করা হবে৷ কিন্তু সেই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই তাণ্ডবে রূপ নেয়৷ এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘পরিকল্পিত অ্যাকশন’
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানিয়েছেন, ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবেই সহিংস অ্যাকশনে গেল জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা৷ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির কথা বলে তাদের ভাষায় ‘মুরতাদ-নাস্তিকদের’ ফাঁসির দাবিতে আগেই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কর্মসূচি দেয়৷ আর আজ (২২.০২.১৩) জুম্মার নামাজের আগেই তারা তাণ্ডব শুরু করে৷’
ছবি: Reuters
শাহবাগে হামলার চেষ্টা
শুক্রবার (২২.০২.১৩) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইসলামি দলের সদস্যরা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে চাইলে সংঘর্ষ পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ ককটেল, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সেলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ প্রায় একই সময়ে ঢাকার কাঁটাবনে শাহবাগ বিরোধীরা রাস্তায় নামে৷ তারাও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
ঢাকার বাইরে তাণ্ডব, প্রাণহানি
ঢাকার বাইরে চট্টগামের প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে৷ তাদের হামলায় পুলিশ এবং সাংবদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুরে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালায় তারা৷ হামলা চালায় সিলেট শহীদ মিনারে৷ সেখানে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার বিকেল অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাইবন্ধায় ২ জন এবং ঝিনাইদহে জাগরণ মঞ্চ বিরোধীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
শাহবাগে জনতা
দেশব্যাপী ইসলামি দলগুলোর এই তাণ্ডবের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আবারো ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ ব্লগারদের ডাকে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এই চত্বরে অবস্থান করছেন অগুনতি মানুষ৷ তাদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট৷’’
ছবি: Reuters
তাণ্ডবের পর নতুন কর্মসূচি
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আজকের (২২.০২.১৩) হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ইন্টারনেটে সতর্ক দৃষ্টি
‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
রোববার হরতাল
শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ ১২টি ইসলামি দল৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পর এর প্রতিবাদে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ব্লগারদের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে ওঠে৷ আর এর পরই হেফাজতে ইসলাম সক্রিয় হয়৷ তারা ব্লগারদের ‘নাস্তিক ও মুরতাদ' ঘোষণা দিয়ে তাদের ফাঁসিসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে৷ গত ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ব্যাপক নাশকতা এবং তান্ডবের ঘটনা ঘটে৷ বিপুল সম্পদের ক্ষতি ছাড়াও ১২ জন নিহত হয় ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে৷ মতিঝিলের শাপলা চত্বরে র্যাব, পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়৷
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অতীতে সমাবেশের নামে হেফাজত ঢাকায় ব্যাপক নাশকতা করেছে৷ তাই তাদের আবার পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সুযোগ দেয়া যায় না৷