মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধু সাগরের সমস্যা নয়, সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের পানীয় জলে অদৃশ্য প্লাস্টিক ফাইবার ভেসে বেড়াচ্ছে৷ কোথা থেকে আসছে এই ফাইবার এবং তা স্বাস্থ্যের পক্ষে কতোটা ক্ষতিকর?
বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটন ভিত্তিক নন-প্রফিট ডিজিটাল নিউজরুম ‘অর্ব মিডিয়া'-র গবেষণা অনুযায়ী নিউ ইয়র্ক থেকে নতুন দিল্লি অবধি কলের জলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ফাইবার পাওয়া গেছে৷
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই নতুন তথ্যকে একটি বিপদ সংকেত বলে অভিহিত করেছেন: ‘‘এ থেকে আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ৷ গলায় ফাঁসটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে৷''
জরিপের জন্য পাঁচটি মহাদেশের বিভিন্ন শহর থেকে কলের পানির ১৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ দেখা যায়, গড়ে ৮৩ শতাংশে প্লাস্টিক রয়েছে৷ কলের জলে যদি প্লাস্টিক থাকে, তবে তা পাউরুটি কিংবা বেবিফুডে থাকার সম্ভাবনা কম নয়৷
কলের পানিতে প্লাস্টিক ফাইবার কিভাবে এলো – বা তা থেকে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি কতটা, তাও পরিষ্কার নয়৷ এই প্লাস্টিক ফাইবার সিন্থেটিক জামাকাপড়, সিন্থেটিক পদার্থের তৈরি কার্পেটিং বা সোফার কাপড় থেকে এসেছে, বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷
প্লাস্টিক ফাইবার পানির সাথে শরীরে ঢোকে৷ এর ফলে বাইরের পরিবেশ থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যা জীবজন্তুর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে৷
ধনি-দরিদ্রের ফারাক নেই
ধনি-দরিদ্র সব দেশের কলের জলেই প্লাস্টিক ফাইবারপাওয়া গিয়েছে৷ নিউ ইয়র্কের ‘ট্রাম্প গ্রিল'-এর হাত ধোয়ার বেসিনের পানিতে যে পরিমাণ প্লাস্টিক ফাইবার পাওয়া গিয়েছে, জাকার্তা থেকে আসা নমুনাগুলিতেও সেই পরিমাণ প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে৷ বোতলের পানি ও ফিল্টার করা পানিতেও প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে৷
প্লাস্টিক সর্বত্র৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বৈরুতে নেওয়া নমুনার ৯৪ শতাংশে প্লাস্টিক ফাইবার পাওয়া গিয়েছে৷ অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা: নতুন দিল্লিতে ৮২ শতাংশ, কাম্পালায় ৮১ শতাংশ, জাকার্তায় ৭৬ শতাংশ, কুইটোয় ৭৫ শতাংশ ও ইউরোপে ৭২ শতাংশ৷
পরিমাণটা খেয়াল রাখা দরকার৷ উগান্ডায় ভিক্টোরিয়া হ্রদের কাছের একটি গ্রামের কলের জলেও চারটি প্লাস্টিক ফাইবার পাওয়া গিয়েছে৷ সেখানে ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনের কল থেকে নেওয়া ৫০০ মিলিলিটার পানিতে ১৬টি ফাইবার পাওয়া গিয়েছে৷
ওয়াশিং মেশিন ভর্তি করে সিন্থেটিক জামাকাপড় ধোয়ার সময় প্রতি বার সাত লাখ ফাইবার নির্গত হয়৷ ময়লা পানি পরিশোধনে তার সবটা দূর হয় না ও সরকারি পানি সরবরাহ বা খাল-বিল নালা-নর্দমায় ছড়িয়ে পড়ে৷
টাইরি/মরিসন/এসি
পানির অন্য নাম জীবন, তাই ‘জীবন’ বাঁচান
বেশ কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক পানি সপ্তাহ’ উদযাপন করা হয়৷ এখন চলছে ‘আন্তর্জাতিক পানি সপ্তাহ’৷ ছবিঘরের ছবিগুলো দেখেই বুঝতে পারবেন, দূষণমুক্ত সুপেয় পানির অভাব কী কী কারণে বাড়ছে ও কীভাবে অবস্থার উন্নতি সম্ভব৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
পানি ছাড়া জীবনধারণ অসম্ভব
পানি না থাকলে শুধু যে তৃষ্ণা মেটানো যাবে না, তা নয়, ক্ষুধা নিবারণও অসম্ভব হয়ে পড়বে৷ পানি ছাড়া তো চাষবাসও সম্ভব নয়৷ তাছাড়া মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে শৌচকর্ম – সব কিছুতেই পানি দরকার৷ পানি ছাড়া আসলে টেকসই কোনো উন্নয়নও অসম্ভব৷
ছবি: Hugues Tsannang
পানির মূল্য বোঝে ক’জন!
খাদ্যের অপচয় হলে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ কিন্তু সমাজের প্রায় প্রতি স্তরে প্রতিদিনই যে নানাভাবে পানির অপচয় হচ্ছে সে বিষয়ে কারোই যেন খুব একটা মাথা ব্যথা নেই৷ অথচ খাদ্যের অপচয় মানেও কিন্তু পানির অপচয়৷ মানুষ যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করে তার প্রায় ৭০ ভাগই খরচ হয় খাদ্য উৎপাদনে৷ বিশ্বে প্রতি বছর প্রচুর খাদ্যের অপচয় হয়৷ দেখা গেছে, ওই অপচয়িত খাদ্য উৎপাদনের জন্যই ব্যয় হয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/GettyImages
জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আজকাল বৃষ্টিপাত ঠিক সময়ে, ঠিক মতো হচ্ছে না৷ কোথাও অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা শুরু হয়, কোথাও আবার অনাবৃষ্টির কারণে দেখা দেয় ভয়াবহ খরা৷ পানি রক্ষায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা তাই জরুরি হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
দুধ-মাংসের চাহিদা বাড়ছে
গরু-মহিষ-ছাগল প্রতিপালন এবং এদের মাংসের জন্যও প্রচুর পানির দরকার হয়৷ গবাদি পশু লালন-পালন থেকে শুরু করে মাংস খাওয়া পর্যন্ত হিসেব করে দেখা গেছে এক কিলোগ্রাম মাংস উৎপাদনেসব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার লিটার পানি খরচ হয়৷ বিশ্বব্যাপী গবাদি পশুর মাংস, দুধ এবং দুগ্ধজাত পন্যের চাহিদা বাড়ছে৷ অর্থাৎ সেই চাহিদা মেটাতে গিয়ে পানি কিন্তু কমছে!
ছবি: imago/UIG
পানির ক্ষতি কারা বেশি করে?
পানি সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় শিল্প কারখানায়৷ শিল্প কারখানাগুলোর মধ্যে আবার পোশাক শিল্প কারখানায় অপচয় এবং দূষণ হয় সবচেয়ে বেশি৷ পোশাক কারখানা থেকে হাজার হাজার গ্যালন রাসায়নিক বর্জ্য চলে যায় পাশের নদীর পানিতে৷ এভাবে পানির দূষণ হয় ব্যাপক হারে৷ লন্ড্রিতে কাপড় ধোয়ার কাজেও প্রচুর পানির ব্যবহার ও অপচয় হয়৷
ছবি: Supermarche/Gab Kiess
পানির সদ্ব্যবহার
ভারত, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমিয়ে কাজে লাগানো হয়৷ পানির সদ্ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়ানো দরকার৷
ছবি: imago/Indiapicture
পানির জগত থেকে প্লাস্টিকের জগতে
বলা হতো, ভূপৃষ্ঠের তিন চতুর্থাংশই পানি৷ কিন্তু জলাভূমিতে গড়ে উঠছে বসতি, কলকারখানা৷ ফলে পানির উৎস ধীরে ধীরে কমছে৷ অন্যদিকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার৷ উন্নত দেশের একজন মানুষ প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১০০ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক ব্যবহার করে৷ অথচ প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর৷ প্লাস্টিক পচে মাটির সঙ্গে মিশতে ৫০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত লাগে৷