‘শিক্ষাবিদদের সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন শিক্ষাক্রম করা হয়েছে'
সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ জানুয়ারি ২০২৩
নতুন বছরে শুরু হয়েছে নতুন কারিকুলামে শিক্ষাক্রম। কেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই নতুন কারিকুলাম শুরু হলো?
বিজ্ঞাপন
এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম।
ডয়চে ভেলে : আগের কারিকুলামের সঙ্গে এই কারিকুলামের পার্থক্য কী?
অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম : প্রথম পার্থক্য হলো, এটা যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম। আন্তর্জাতিকভাবে মিল রেখে ক্লাস সিক্সে আমরা কিছু যোগ্যতা ফিক্সড করে দিয়েছি। সিক্সে এই যোগ্যতাগুলো অর্জন করতেই হবে। এই যোগ্যতা অর্জন করতে পারলেই সে কামিয়াবি হলো। এই যোগ্যতাগুলো আগে পেন্সিল-কলমে নিতাম, এখন বলছি, করে দেখালেও হবে। আগে যেমন ছিল, অজু কীভাবে করতে হয় সেটা লিখে দিতে হতো, এখন বলছি, কেউ যদি করে দেখাতে পারে তাহলেও হবে। কর্মদক্ষতাকে আমরা এখানে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
নতুন কারিকুলামের প্রয়োজন হলো কেন?
এই জন্য প্রয়োজন হলো যে, বিগত দিনে আমাদের সামনে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। এখন অনেকগুলো বড় চ্যালেঞ্জ সামনে আছে। প্রথমত, এসডিজি বাস্তবায়ন। দ্বিতীয়ত, গ্লোবাল সিটিজেনশিপ। তৃতীয়ত, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বে উপনীত হওয়া। চতুর্থত, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে ধারণ করা। আমরা বিগত তিনটা শিল্প বিপ্লবের ধারে-কাছেও ছিলাম না। কিন্তু আমরা দেখেছি, আমাদের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট স্মার্ট ও পারদর্শী। এই সময়ে যদি আমরা তাদের ভালো শিক্ষা দিতে না পারি সেই ব্যর্থতা আমাদের। কেনিয়া, মিয়ানমারের মতো আমাদের চেয়েও দরিদ্র দেশও আন্তর্জাতিক কারিকুলামে চলে গেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে ধারণ করতে গেলে কারিকুলাম পরিবর্তনের কোনো বিকল্প ছিল না। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, এখন যারা ক্লাস ফাইভে পড়ে, তারা যখন চাকরির বাজারে ঢুকবে, তখন তারা দেখবে ৬০ ভাগ চাকরির ধরন প্রযুক্তির কারণে পাল্টে গেছে। ফলে তাদের শিক্ষা তো সেইভাবে দিতে হবে, যাতে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতি ধারণ করতে পারে।
ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না, কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে?
শিক্ষকরা ধারাবাহিক মূল্যায়ন করবেন। শিক্ষকদের তো আমরা এমনিতেই নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি একটা অ্যাপ তৈরি করছি। কীভাবে মূল্যায়ন করতে হবে সেটা জেনেও নিতে পারবে।
সব স্কুল ও সব শিক্ষকের মান তো এক নয়। যেসব স্কুলে শিক্ষকের মান ভালো নয়, তারা কি পিছিয়ে পড়বে না?
না, পিছিয়ে পড়বে না এই কারণে যে, আমরা যে অ্যাপ করেছি, সেটা নিয়ে স্বাভাবিক স্কুলগুলোতেও গিয়েছিলাম তারা আসলে অপারেট করতে পারে কিনা দেখতে৷ সেখানে আমরা দেখেছি, তারা পারে। কিছু সংশোধনীর প্রয়োজন হয়েছিল, সেটা করেছি। পরীক্ষামূলকভাবে এই কাজ চলছে। আশা করি অসুবিধা হবে না।
কর্মদক্ষতাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি: মো. ফরহাদুল ইসলাম
নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, ৪০ নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং ৬০ নম্বরের পরীক্ষা। এতে শিক্ষকের হাতে কী অসীম ক্ষমতা চলে গেল না? এই ক্ষমতার যে অপব্যবহার হবে না, সেটা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?
এটা একটা ডিবেটিং প্রশ্ন! এটা হতেই পারে। শিক্ষকরা প্র্যাক্টিক্যালে ২৫-এর মধ্যে ২৫ দিয়ে দিচ্ছেন। সেখানে এটার সম্ভাবনা থেকেই যায়। প্রভাবশালী অভিভাবকরা শিক্ষকদের চাপ দিয়ে সন্তানের জন্য বেশি মার্ক নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই পারেন। এগুলো অমূলক নয়, হতে পারে। আবার ধারাবাহিক মূল্যায়নটাও প্রয়োজন। অনেকদিন ধরে আমরা চেষ্টা করছি। আপনার বাচ্চা যে পারে নাই, সেটা তো আপনি বছর শেষে বুঝতে পারতেন। তার ফলে যে ক্ষতি হওয়ার সেটা হয়েই যেতো। এখন সঙ্গে সঙ্গে আপনি জানবেন। সংশোধনের সুযোগ থাকবে। একটা স্কুলে একজন স্ট্যান্ড করেছে, আর ৪০ জন ফেল করেছে। এটা তো আমরা চাচ্ছি না। আমরা যেটা চাচ্ছি, একটা স্কুলে ৫০টা বাচ্চা থাকলে সবাই যেন একসঙ্গে বেড়ে উঠতে পারে। ভয়ে থাকলে তো হবে না। দেখি না কী হয়? শিক্ষকদের কিছু স্বাধীনতা দেওয়ারও তো প্রয়োজন আছে। আমরা তো এখনই পাবলিক পরীক্ষায় যাচ্ছি না।
শিক্ষকদের হাতে এত ক্ষমতা দেওয়া হলে কি প্রাইভেট বা কোচিং উৎসাহিত হবে না?
হতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা তো বিকল্প ব্যবস্থা নিতেই পারি। আমরা যে কারিকুলাম করেছি, সেখানে ধারাবাহিক মূল্যায়নটা যায়। একটা চর্চার মধ্যে না গেলে আমরা কীভাবে বুঝবো ভুল হয়ে গেল সিদ্ধান্তটা?
ক্লাস নাইন থেকে গ্রুপ উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা উঠিয়ে দেওয়ার যুক্তি কী? এটা কি ভালো হবে, নাকি খারাপ হবে?
ভালো হবে না ,খারাপ হবে সেটা তো এখনই বলা যাচ্ছে না। বিশ্বের অন্তত ৭০ শতাংশ দেশে মাধ্যমিক পর্যন্ত কোনো গ্রুপ নেই। আমরা চাচ্ছি, এসএসসি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী একই ধরনের জ্ঞান ও যোগ্যতা নিয়ে বেড়ে উঠুক। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের উপর তাদের বেসিক জ্ঞানটা যেন থাকে। আগে যারা কমার্সে ছিল, তাদের সায়েন্সের কোনো জ্ঞানই ছিল না। অন্যদের ক্ষেত্রেও তাই। এটা তো আমাদের সিদ্ধান্ত না, সারা পৃথিবীর শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষাবিদদের সুপারিশের ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে। ২০০৫ সালে যখন একমুখী শিক্ষা করা হলো, তখন জাফর ইকবাল স্যার এর বিরুদ্ধে ছিলেন। এখন কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে তিনি এর পক্ষে। সময়ই বলে দেয় কী করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে একের পর এক বিতর্ক
বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক চলছেই৷ সবশেষ সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে ওয়েবসাইট থেকে চৌর্যবৃত্তির পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে অনুবাদেরও৷ পাঠ্যবই নিয়ে আরো কিছু বিতর্কের তথ্য জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com
চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা ২০২৩ সালের সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি৷ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েবসাইট থেকে কিছু অংশ সূত্র উল্লেখ না করেই হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ এর সত্যতাও পেয়েছেন রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান৷ এজন্য দুঃখ প্রকাশ করে পরবর্তী সংস্করণে ভুল ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তারা৷
ছবি: Bdnews24com
যৌনশিক্ষা বাদ দেয়ার দাবি
ইসলামি ঐক্যজোট ২০১৬ সালে দাবি তোলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক থেকে যৌনশিক্ষা বাদ দেয়ার৷ ‘বাংলাদেশের সমাজ এবং ধর্মের সঙ্গে এই শিক্ষা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ বলে দাবি করেন দলটির তৎকালীন চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী৷ নবম-দশম শ্রেণিতে বাউলদের নিয়ে লেখা ‘সময় গেলে সাধন হবে না' নামক বইটিকে ‘বাউলদের যৌনাচারের' বই বলে অভিহিত করেন তিনি৷
‘ইসলামি মূল্যবোধ’, ‘হিন্দুত্ব’ ও ‘নাস্তিক্যবাদ’
২০১৬ সালে হেফাজতে ইসলামী অভিযোগ তোলে যে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ইসলামী মূল্যবোধের ১৭টি বিষয় বাদ দিয়ে ইসলামী ভাবধারার বিপরীত সাতটি নতুন কবিতা ও গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে কেন হিন্দু লেখকদের বিভিন্ন লেখা পাঠ্য়পুস্তকে প্রাধান্য পাচ্ছে, এ নিয়েও প্রশ্ন তোলে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা সংগঠনটি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
হেফাজতের ‘দাবি পূরণ’
যেসব গল্প-কবিতা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আপত্তি ছিল, তার একটি পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের 'বই' কবিতা৷ হুমায়ুন আজাদকে ‘স্বঘোষিত নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার কবিতা ইসলামবিরোধী দাবি করে তা বাদ দেয়ার আহ্বান জানায় সংগঠনটি৷ পরের বছর হেফাজতের পছন্দের তালিকার ১৭টি আবার পাঠ্যপুস্তকে ফিরিয়ে আনা হয়, বাদ দেয়া হয় হেফাজতের অপছন্দের ১২টি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ৷
ছবি: bdnews24
যৌন নির্যাতন থেকে ‘বাঁচার কৌশল’
২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচার কিছু কৌশলের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল৷ বাড়িতে কখনোই একা না থাকা, অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাক না পরা এবং পাড়ার বখাটে দলের হয়রানিতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না করে কৌশলে উপেক্ষা করাসহ বেশ কয়েকটি সতর্কতামূলক উপদেশ দেয়া হয়েছিল মেয়েদেরকে৷
ছবি: Ashraful Islam/DW
‘বিবর্তনবাদ’ বাদ দেয়ার দাবি
২০১৩ সালে নবম-দশম শ্রেণি থেকে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয় চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ৷ ২০১৯ সালে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা বাদ দেয়ার দেবি জানান হেফাজতে ইসলামীর তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী৷ বিবর্তনবাদকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বাবুনগরী বলেছিলেন, ‘‘বিবর্তন এর শিক্ষা চলতে থাকলে আগামী কয়েক প্রজন্ম পর সবার অগোচরেই দেশ নাস্তিক অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’’
ছবি: bdnews24
ওড়না আর ছাগল
২০১৭ সালেই প্রথম শ্রেণির বর্ণপরিচয়ে ‘ও’ বর্ণ শেখাতে লেখা ‘ওড়না দাও’ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল৷ প্রথম শ্রেণিতেই একটি মেয়েকে এভাবে বর্ণপরিচয় শেখানোর বিরোধিতা করেন অনেকে৷ একই বইয়ে ’অ‘ বর্ণ শেখাতে ছাগলের অপ্রচলিত সমার্থক ‘অজ’ ব্যবহার করে ছবি দেয়া হয়েছে ছাগল আম গাছে উঠে আম খাওয়ার৷ পরের বছর ছাগল আমগাছ থেকে নামলেও, ওড়না প্রথম শ্রেণি থেকে সরিয়ে স্থান দেয়া হয় প্রাক-প্রাথমিকে৷
ছবি: bdnews24.com
ভারতেও পাঠ্যসূচি বিতর্ক
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হিন্দুদের ইতিহাস’ পড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ সেন্টার ফর হিন্দু স্টাডিজ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ অন্য ধর্ম বাদ দিয়ে কেবল হিন্দুদের ইতিহাস কেন পড়ানো হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Mana Vatsyayana/Getty Images/AFP
বিশ্বজুড়ে বিতর্ক
পাঠ্যসূচি নিয়ে প্রায়ই বিশ্বের নানাপ্রান্তে বিতর্ক রাজনৈতিক রূপও নিয়েছে৷ ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় পাঠ্যক্রমকে সংকীর্ণ এবং সেকেলে দাবি করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকেরা৷ তারা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর না দিয়ে কেবল তথ্য জানানোতেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ পরবর্তীতে তাদের দাবি মেনে পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়৷
ছবি: Kevin Coombs/REUTERS
হাঙ্গেরিতে ইহুদিবিদ্বেষ, সাংস্কৃতিক যুদ্ধ
সমকামীদের অধিকার বিষয়ে স্কুলের শিশুদের না পড়ানোর নির্দেশ দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তোপের মুখে পড়েছে হাঙ্গেরির কট্টর ডানপন্থি সরকার৷ তার ওপর ইহুদিবিদ্বেষী এবং উগ্র জাতিয়তাবাদী হিসাবে পরিচিত লেখকদের লেখা অন্তর্ভুক্ত করে ২০২০ সালে ন্যাশনাল কোর কারিকুলাম ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সরকার৷
ছবি: Shelby Tauber/REUTERS
10 ছবি1 | 10
পর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি না নিয়ে এটা চালু হলো কিনা...
না না, আগে তো কারিকুলাম করেই বাস্তবায়নে গেছি। এবারই প্রথম শিক্ষাক্রম শুরুর আগে মাঠ পর্যায়ের সকল শিক্ষককে, শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করেছি। তারপর জানুয়ারিতে এসে এটা শুরু করেছি। আমরা চাচ্ছি, শিক্ষকদের ট্রেনিংটাও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে হবে। উনারা শুক্রবার ও শনিবার ট্রেনিংয়ে আসছেন। আর ৫ দিন ক্লাস নিচ্ছেন। ফলে ক্লাসে কী ধরনের সমস্যায় পড়ছেন, পরের শুক্রবার ও শনিবার এসে সেগুলো বলছেন। এটা আমরা ইচ্ছে করেই করেছি।
বই লেখা হয়েছে তাড়াহুড়ো করে, এতে প্রচুর ভুল আছে। যে কারণে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন। এটা কি ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো হলো?
বিগত দিনগুলোতে যত কম সময় দিয়েছিলাম, এবার কিন্তু পর্যাপ্ত সময় দিয়েছি। এবার কিন্তু এনারা পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন। তারপরও শিক্ষাক্রমটা নতুন। এর আলোকে কনটেন্টটা কীরকম হবে এটা একটু সময় নিয়ে করা হয়েছে। আমরা তো ১৯৮৬ সালেও করেছি, ১৯৯৫ সালেও করেছি, ২০১২ সালেও করেছি। নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে তার জন্য যে পাঠ্যপুস্তক রচনা হয় সেটা প্রথম বছর পরীক্ষামূলকভাবে যায়। এরপর ট্রাই আউট হয়। ট্রাই আউট হলো, সকলের মতামত নেওয়া হয়। শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করা হবে। সবকিছু পর্যবেক্ষন করে যদি দেখা যায় বাংলার একটা গল্প ৮০ ভাগের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে কঠিন মনে হয় তাহলে এটা একটু সহজ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এ বছরটা পরীক্ষামূলকভাবে চলবে। তাহলে যারা ক্লাস ওয়ান এবং সিক্স ও সেভেনে পড়ছে ,তারা কী শিখবে? বাচ্চাদের গিনিপিগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ আছে কিনা?
আমরা যে পাইলটিং করেছি, সেই রেজাল্ট তো পজিটিভ। এ কারণেই তো বইটা আমরা দিয়েছি। প্রথম ৯ মাসের রেজাল্টের ভিত্তিতে এটা আমরা করেছি। একেবারে গিনিপিগ বলবেন, সেটা ঠিক হবে না। তারপরও নানান জনের নানান অভিমত তো থাকবেই। সবার মতামত আমাদের শোনা উচিত। এটা কিন্তু শুধু আমাদের দেশে না, সারা পৃথিবীতেই এভাবেই হয়।
তিনটি বৈশ্বিক শিক্ষা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান
শিক্ষার মান তুলে ধরে এমন তিনটি বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ খারাপ৷ এর মধ্যে দুটি সূচকে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নীচে৷
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com
বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক
ইউএনডিপি ও মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম নলেজ ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম৷ সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে৷ প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশ৷ সূচক সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান
বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে পাকিস্তান (১২৩), নেপাল (১২৮) ও আফগানিস্তান (১৫১)৷ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে আছে শ্রীলঙ্কা (৮৬)৷ ভারত ও ভুটান আছে যথাক্রমে ৯৭ ও ১০৮তম স্থানে৷
ছবি: David Talukdar/Zumapress/picture alliance
প্রতিভা সূচক
ফ্রান্সভিত্তিক বিজনেস স্কুল ‘ইনসিয়েড’ ও ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘পোর্টুল্যান্স ইনস্টিটিউটের’ গত অক্টোবরে প্রকাশিত ২০২১ সালের ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্সে’ ১৩৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩ নম্বরে৷ মেধা অর্জনের সক্ষমতা, আগ্রহ, বিকাশ, ধরে রাখা, বৃত্তিমূলক, কারিগরি দক্ষতা ও বৈশ্বিক জ্ঞান- এই সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সূচকটি তৈরি করা হয়েছে৷ সূচক সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Imago/epd
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান
প্রতিভা সূচক দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নীচে৷ এই অঞ্চলে শীর্ষে আছে ভারত (৮৮)৷ এরপর আছে শ্রীলঙ্কা (৯৩), পাকিস্তান (১০৭) ও নেপাল (১১৩)৷
ছবি: AP
বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক
জাতিসংঘের সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের’ প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ১৩২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৬ নম্বরে৷ সূচক সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: bdnews24.com
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান
উদ্ভাবন সূচকেও দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নীচে আছে বাংলাদেশ৷ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভারত (৪৬)৷ এরপর আছে শ্রীলঙ্কা (৯৫), পাকিস্তান (৯৯) ও নেপাল (১১১)৷
ছবি: IANS
বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম
ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকসের হিসেব বলছে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে সবচেয়ে কম বাজেট বরাদ্দ করা হয়৷ ১৯৭১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে৷ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে জিডিপির মাত্র ১.৮৩ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ একটি দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত বলে মনে করে ইউনেস্কো৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷