ইউনিসেফের সর্বশেষ বিবরণ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপি ২৮ মিলিয়ন শিশু সহিংস সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হয়েছে৷ প্রায় সমান সংখ্যক শিশু সুন্দর জীবনেরআশায় ঘরছাড়া৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ কিন্তু উদ্বাস্তুদের প্রায় অর্ধেকই শিশু বলে ইউনিসেফের রিপোর্টে প্রকাশ৷ রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় গত মঙ্গলবার, ৬ই সেপ্টেম্বর৷ রিপোর্টের শিরোনাম, ‘ছিন্নমূল: উদ্বাস্তু ও অভিবাসী শিশুদের ক্রমবর্ধমান সংকট'৷ ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী গত এক দশকে ঘরহারা শিশুদের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে৷
বাস্তুহারা বা গৃহহীনদের মধ্যে প্রায় এক কোটি শিশু উদ্বাস্তু ও দেশছাড়া; এছাড়া দশ লাখ শিশু রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী৷ বাকি এক কোটি সত্তর লাখ শিশু সংঘাতের কারণে স্বদেশেই ঘরছাড়া৷ প্রতিবেনটিতে আরো বলা হয়েছে, শিশু উদ্বাস্তুদের ৪৫ শতাংশই সিরিয়া ও আফগানিস্তানের৷ ঘরছাড়া শিশুরা ক্রমেই আরো বেশি করে একা একা যাত্রা করছে, অর্থাৎ বাবা-মা বা অভিভাবক ছাড়াই দেশ ছাড়ছে৷ ২০১৫ সালে এক লক্ষ অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক ৭৮টি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে; এই সংখ্যা ২০১৪ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ৷ রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে যে, আরো প্রায় দু'কোটি শিশু দারিদ্র্য ও ‘গ্যাং ওয়ারফেয়ার' বা দলগত সহিংসতার কারণে অভিবাসী হয়েছে৷
উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের সন্তানরা যাত্রাপথে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি ও বিপদের সম্মুখীন হয়, যেমন সাগর পাড়ি দেবার সময় নৌকাডুবি; এছাড়া অপুষ্টি, জলাভাব, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা৷ অন্য দেশে পৌঁছানোর পরেও প্রায়শই তাদের বৈষম্য ও বহিরাগত বিদ্বেষের শিকার হতে হয়৷ ইউনিসেফ আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের প্রতি এসব শিশুর জন্য সুরক্ষা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করতে বলেছে৷ অপরদিকে সরকারবর্গকে দেখতে হবে, অগণিত উদ্বাস্তু ও অভিবাসীরা ঘর ছাড়ছেন কেন এবং সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷
‘‘আমরা (আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের কাছ থেকে) স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চাই-'' নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেছেন ইউনিসেফের সহকারী কার্যনির্বাহী পরিচালক জাস্টিন ফরসাইথ৷ তিনি আরো বলেন,‘‘এই সংকটে দায়িত্ব বণ্টন ঠিকমতো হচ্ছে না: প্রতিবেশী বা দরিদ্রতম দেশগুলিই সবচেয়ে বড় ভাগটা বহন করছে৷''
আগামী ১৯শে ও ২০শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে একটি নয়,উদ্বাস্তু সমস্যা সংক্রান্ত দু'টি শীর্ষবৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সে দু'টি শীর্ষবৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না৷ তা সত্ত্বেও ফরসাইথ উদ্বাস্তু সংকটে ম্যার্কেলের ভূমিকাকে বাকি বিশ্বের পক্ষে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছেন৷
‘‘এ ধরনের নীতিসম্পন্ন একজন চ্যান্সেলরকে পেয়ে জার্মানদের গর্বিত হওয়া উচিত'', বলেছেন জাস্টিন ফরসাইথ৷
শরণার্থীদের প্রিয় জার্মানি, আরো প্রিয় ম্যার্কেল
শরণার্থীদের নিয়ে একটা ছবি সবারই নজর কেড়েছে৷ প্ল্যাকার্ড হাতে এক শিশু, প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’’৷ অনেকেই এসে পৌঁছেছেন তাঁদের কাঙ্খিত ঠিকানা জার্মানিতে৷ পছন্দের মানুষ ম্যার্কেলের দেশে এসে খুশি তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd von Jutrczenka
জার্মানিকে চাই...
সেই ছবি৷ বুদাপেস্টে তখন শরণার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে৷ অস্ট্রিয়া বা জার্মানির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে না পারায় তাঁরা ক্ষুব্ধ৷ সবাই ছুটছিলেন প্ল্যাটফর্মের দিকে৷ পুলিশ ফিরিয়ে দিলো৷ স্টেশনের বাইরে শুরু হলো বিক্ষোভ৷ কারো কারো হাতে তখন ট্রেনের টিকিট৷ কেউ ক্ষোভ জানালেন কোলের সন্তানকে নিয়ে৷ অনেক শিশুর হাতে দেখা গেল, ‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’ লেখা কাগজ৷ ইউরোপে এত দেশ থাকতে কেন জার্মানি?
ছবি: Reuters/L. Foeger
আছে নব্য নাৎসি, পুড়েছে শরণার্থী শিবির, তবুও...
জার্মানির কোথাও কোথাও শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে৷ অনেক জায়গায় রাতের অন্ধকারে আশ্রয় শিবিরে লেগেছে আগুন৷ তারপরও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিকেই বেছে নিতে চায়৷
ছবি: Getty Images/M. Rietschel
বড় কারণ ম্যার্কেল এবং...
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে শুরু থেকেই উদার জার্মানি৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সবসময়ই অভিবাসী এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাশে ছিলেন৷ পেগিডা আন্দোলনের সময়ও সরকারের অভিবাসীদের পাশে থাকার কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন ম্যার্কেল৷ পাশে থেকেছেও৷ জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও ছিল তাঁর পাশে৷ এখনও আছে৷ এই বিষয়গুলোও মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মনে জার্মানির প্রতি আরো আস্থাশীল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NDR
তোমাদের স্বাগত
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিতে পা রেখেই দেখেছে অবাক হওয়ার মতো দৃশ্য৷ এখানে তাঁরা অনাহূত নয়৷ নিজের দেশ থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসে জার্মানিতে পাচ্ছেন সাদর সম্ভাষণ!
ছবি: Getty Images/A. Beier
জার্মানির নেতৃত্বে ম্যার্কেল, ইউরোপের নেতৃত্বে জার্মানি
বৃহস্পতিবার আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, শরণার্থীদের বিষয়ে জার্মানির ভূমিকা হতে হবে অনুসরণীয়, দৃষ্টান্তমূলক৷ জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে বক্তব্য রাখার সময় তিনি আরো বলেন, অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় ইউরোপকেও সফল হতে হবে৷
দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটিকে শরণার্থীরা নিজেদের একজন হিসেবেই বরণ করে নিয়েছিলেন৷ শরণার্থীদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই সময় কাটিয়েছেন ম্যার্কেল৷ কয়েকজন শরণার্থী তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন৷ সানন্দে তাঁদের আশা পূরণ করেছেন ম্যার্কেল৷