1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সারা বিশ্বে বাড়ছে ভ্রমণ প্রবণতা

১১ মার্চ ২০১৮

প্রাকৃতিক বিপর্যয়, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সারা বিশ্বে বাড়ছে ভ্রমণ প্রবণতা৷ আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে প্রায় ৬ ভাগেরও বেশি মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণ করেছেন, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ৷

Symbolbild Designerhut Hut Frau Wassermelone
ছবি: Fotolia/soup studio

এ বছর ভ্রমণের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা করছেন পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্যটন মেলা আইটিবি বার্লিনের ৫২তম আসরে এমনটিই বলা হয়েছে৷

আইটিবি বার্লিন ২০১৮
১৯৬৬ সালে খুব ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করে বার্লিনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আকর্ষণ করার এই উদ্যোগ৷ সে বছর মিশর, ইরাক, জার্মানি, গিনি ও ব্রাজিলের ৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এখানে৷ মাত্র ৫৮০ বর্গমিটারের এই আয়োজনে ২৫০ জন বাণিজ্যিক পরিদর্শক অংশ নেন৷
পরের বছর বিভিন্ন কারণে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত করা যায়নি৷ তবে তার পরবর্তী বছরগুলোতে আস্তে আস্তে এটি বড় হতে থাকে৷ মাত্র পাঁচটি দেশকে নিয়ে সেই আয়োজন এখন পাঁচটা মহাদেশের ১৮০টিরও বেশি দেশের আয়োজনে পরিণত হয়েছে৷ এ বছর ১০ হাজারেরও বেশি স্টল বসেছে৷ বাণিজ্যিক পরিদর্শক এসেছেন প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার৷

১ হাজারেরও বেশি বিশ্বের শীর্ষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে৷ মেলার পরিসর এখন ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গমিটার৷ গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া পাঁচ দিনের এ আয়োজনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে প্রায় ৭শ' কোটি ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা৷
এবারের আয়োজনে বিশ্বের সব নামকরা টুরিজম এজেন্সি বা অপরেটররা যেমন অংশ নিয়েছে, তেমনি সরকারি বেসরকারি এয়ারলাইন্স, ক্রুজ, বিমানবন্দর, শহর ও রাজ্য কর্তৃপক্ষ, দেশের প্রতিনিধিরা এসেছেন৷ বড় বড় হোটেল, রিসোর্টগুলোও নিজস্ব স্টল নিয়ে এসেছে৷
পর্যটক ও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সবাই তাদের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সংস্কৃতি, খাবার, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন৷ সাধারণ ভ্রমণপিপাসু মানুষও এসেছেন অনেক৷ তারা তাদের পছন্দের জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করবার জন্য তথ্য সংগ্রহ ও অপারেটরদের অফারগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছেন৷ এছাড়া এমন একটি আয়োজনে অনেক দেশ ও অঞ্চল সম্পর্কেও তারা জানতে পেরেছেন৷
এছাড়া এই আয়োজনে বিভিন্ন পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেপার প্রেজেন্টেশন ও আলোচনা হয়েছে৷ সেগুলোতে পর্যটন খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনার নানা দিকও উঠে এসেছে৷

বাড়ছে ভ্রমণ প্রবণতা, এগিয়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা
বিশ্বজুড়ে অনেক জায়গায়তেই সন্ত্রাস, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও মানুষের ভ্রমণ প্রবণতা বাড়ছে৷ যদিও এসব কারণে অনেকেই তুলনামূলক ‘নিরাপদ' জায়গায় ভ্রমণ করারই পক্ষপাতী৷ ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল মনিটরের গবেষণা বলছে, ২০১৮ সালে অন্তত ৩৩ ভাগ মানুষ তাদের ভ্রমণের স্থান বদলে নিরাপদ জায়গায় ভ্রমণ করবেন৷
সেখানে পছন্দের তালিকায় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপই ওপরের দিকে অবস্থান করছে৷
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত হিসেবে দেখা যায় উত্তর অ্যামেরিকায় মানুষের ভ্রমণ প্রবণতা আগের বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেড়েছে, ৭ দশমিক ৫ ভাগ৷ ইউরোপে বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকাতেও মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ৫ ভাগ৷

আইটিবি বার্লিন ২০১৮ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে৷ এখানেও বেড়েছে ৫ ভাগ৷ মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় পর্যটকদের আগ্রহ বেশি৷ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, ভূটান ও মালদ্বীপে পর্যটকদের আগ্রহ অনেক বেশি৷
পর্যটনের নির্দিষ্ট বাজারের কথা বললে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে রাশিয়ায়৷ ২০১৭ সালে তাদের পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ১৮ ভাগ৷ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্থিরতার কারণে মেক্সিকোতে পর্যটকের সংখ্যা কমেছে সবচেয়ে বেশি, ৫ ভাগ৷
তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে স্পেনে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ গত বছর প্রবৃদ্ধির হার ১১ ভাগ৷

গড়ে ৮ রাত
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে ভ্রমণের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৬ ভাগ বেড়েছে৷ এমনকি একজন পর্যটক এখন একটি জায়গায় আগের চেয়ে বেশিদিন থাকছেন৷ গড়ে প্রতিজনে তা ৮ রাত বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল মনিটর৷
এ বিষয়ে পর্যটন ডেটা নিয়ে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইপিকে ইন্টারনেশনালের সিইও রলফ ফ্রাইটাগ বলেন, ‘‘এ এক অসাধারণ অগ্রগতি৷ বিশ্ব জিডিপির চেয়েও তিনগুণ বেশি আয় এখন পর্যটন খাতে৷ বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন পর্যটন একটি বিরাট খাত৷''
তিনি মনে করেন, যদিও ভ্রমণকারীরা নিরাপত্তার কথাও বিবেচনা রাখেন, তবে তাদের কাছে খরচ ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে কী পাচ্ছেন তা এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷
তবে ২০১৮ সালে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়লেও তা ২০১৭ সালের মতো এতটা নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷

শহর ভ্রমণে আগ্রহ বেশি
অনেকেরই একটা ধারণা আছে যে, ভ্রমণ মানেই সমুদ্র সৈকত, পাহাড় বা বিভিন্ন হলিডে স্পট৷ কিন্তু পরিসংখ্যান বলে, সাধারণ পর্যটকদের মধ্যে শহর ভ্রমণের আগ্রহই বেশি৷ সারাবিশ্বে পর্যটন প্রবণতা বাড়তে থাকার একটি বড় নিয়ামক শহর ভ্রমণ৷ আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে শহর ভ্রমণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ ভাগ, যেখানে সমুদ্র সৈকত ও সূর্যস্নানের জায়গাগুলোতে পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে ৯ ভাগ৷
বিস্ময়ের ব্যাপার অন্যান্য ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে পর্যটকদের আগ্রহ বরং কমেছে ২ ভাগের মতো৷ বন্ধু ও আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে আগের বছরের তুলনায় মানুষ দেখা করতে গেছেন ৮ ভাগ বেশি৷
ব্যবসার কাজে ভ্রমণের হার বেড়েছে ৬০ ভাগ৷

‘মিলেনিয়াল'রাই চাবিকাঠি
মিলেনিয়াল বা যাদের জন্ম ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে তারাই পর্যটন খাতের চাবিকাঠি৷ সারাবিশ্বে এরাই সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করছেন এবং এ খাতের অর্থনীতি চালু রাখছেন৷ বিশেষ করে মুসলিম পর্যটকদের মধ্যে এই বয়সীদের সংখ্যা বেশি৷
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মুসলিম জনগোষ্ঠীর ৬০ ভাগের বয়স ত্রিশের নিচে৷ সিঙ্গাপুরভিত্তিক ক্রিসেস্ট রেটিং অ্যান্ড হালাল ট্রিপের প্রধান নির্বাহী ফজল বাহারদীন বলেন, ‘‘এরাই পর্যটনের ভবিষ্যৎ বাজার৷'' 
তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী হলো, ২০১৬ সালে মুসলিমরা প্রায় ১২১ বিলিয়ন ডলার পর্যটনে ব্যয় করেছেন, যা ২০২০ সাল নাগাদ ২২০ বিলিয়নে পৌঁছাবে৷
তাঁর মতে, এদের একটা বড় অংশ এশিয়াতেই ভ্রমণ করছেন৷ মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে ভবিষ্যৎ পর্যটনের বড় বাজার বলে মনে করেন তিনি৷ ইউরোপে তিনি জানান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সে ১০ থেকে ১২ শতাংশ মুসলিম ভ্রমণ করছেন৷ এছাড়া তুরস্ক ও ইরানও মুসলিম পর্যটকদের জন্য বড় বাজার৷

সব মিলিয়ে আইটিবি বার্লিন ২০১৮ বরবারের মতোই আগামীর পর্যটনকে পথ দেখাচ্ছে৷ এখান থেকেই হয়তো গড়ে উঠছে এ খাতের ভবিষ্যৎ কর্ণধাররা৷ একইসঙ্গে নীতিনির্ধারকদের সুযোগ করে দিচ্ছে পর্যটনের নতুন নতুন ভাবনাকে একীভূত করে সামনে পথ চলার৷

মিশরের একটি স্টলছবি: DW/H. Driouich
ছবি: DW/L. Pitu
২০১৮ বিশ্বকাপকে ব্র্যান্ডিং করছে রাশিয়াছবি: DW/V. Esipov
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ