মৃত্যুদণ্ড আগের তুলনায় বেড়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৫ সালে গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ অ্যামনেস্টি মনে করে, মৃত্যুদণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়৷
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে সারা বিশ্বে কার্যকর হওয়া মৃত্যুদণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিগত বছরে মৃত্যুদণ্ড বৃদ্ধির হার ছিল উদ্বেগজনক, কেননা, গত ২৫ বছরের মধ্যে সে বছরই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷
বিভিন্ন দেশের প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট ১৬০০টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, ২০১৪ সালের চেয়ে যা শতকরা ৫০ ভাগ বেশি৷
২০১৫ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের সংখ্যাও বেড়েছে৷ বিশ্বের মোট ৯৪ দেশের আইনে এখনো সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ এর মধ্যে ২০১৫ সালে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ২৫ টি দেশ৷ ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া দেশের সংখ্যা ছিল ২২৷
আগের বছর মৃত্যুদণ্ড দেয়নি এমন ছয়টি দেশও ২০১৫ সালে এ তালিকায় নাম লিখিয়েছে৷ এক্ষেত্রে আফ্রিকার দেশ চাড-এর কথা আলাদাভাবেই অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ, দেশটি গত এক দশকে একটিও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করলেও বিগত বছর এই দণ্ড দিয়ে কেড়ে নিয়েছে ১০ জনের প্রাণ৷
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে৷ তবে চলতি শতকে কয়েকটি দেশ এই শাস্তি প্রথা বাতিল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলবেনিয়া
বাতিল: ২০০০; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯৫
ছবি: Fotolia/Matthias Krüttgen
আর্মেনিয়া
বাতিল: ২০০৩; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: AP
ভুটান
বাতিল: ২০০৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৭৪
ছবি: DW
বুরুন্ডি
বাতিল: ২০০৯; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০০
ছবি: picture-alliance/Philipp Ziser
চিলি
বাতিল: ২০০১; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮৫
ছবি: picture-alliance/dpa
ফিলিপাইন
বাতিল: ২০০৬; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০০
ছবি: DW/P. Hille
গ্যাবন
বাতিল: ২০১০; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮১
ছবি: AP
কাজাখস্থান
বাতিল: ২০০৭; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০৩
ছবি: picture-alliance/dpa
মাদাগাস্কার
বাতিল: ২০১৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৫৮
ছবি: picture alliance / blickwinkel
মন্টোনেগ্রো
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: imago/P. Widmann
সেনেগাল
বাতিল: ২০০৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৬৭
ছবি: Alexander Joe/AFP/Getty Images
সার্বিয়া
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: picture-alliance/dpa
টোগো
বাতিল: ২০০৯; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৭৮
ছবি: DW/J. von Mirbach
তুরস্ক
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮৪
ছবি: Bulent Kilic/AFP/Getty Images
উজবেকিস্তান
বাতিল: ২০০৮; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০৫
ছবি: picture-alliance/dpa
15 ছবি1 | 15
সব মিলিয়ে সামষ্টিকভাবে মৃত্যুদণ্ড বৃদ্ধি এবং এর পাশাপাশি কিছু দেশে নতুন করে এ প্রবণতা দেখা দেয়ায় অ্যামনেস্টি উদ্বিগ্ন৷ আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থার মৃত্যুদণ্ড বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিয়ারা সাংগিওরগিও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘(মৃত্যুদণ্ডের) এই নাটকীয় বৃদ্ধিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বৈশ্বিক প্রকৃত চিত্রটা নিশ্চয়ই আরো ভয়াবহ৷''
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে চীনসহ কিছু দেশের মৃত্যুদণ্ডের হিসেব আসেনি৷ চীনে প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় বলে ধারণা করা হলেও সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়না৷ ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয়' হিসেবে বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড বিষয়ক সব তথ্য গোপন রাখে চীন৷
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান, পাকিস্তান ও সৌদি আরব৷ সারা বিশ্বের মোট মৃ্ত্যুদণ্ডের ৯০ ভাগই হয়েছে এই তিন দেশে৷ এ বছর ৩২০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে পাকিস্তান৷ ইরান ওই এক বছরে এক হাজারের মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে৷ তবে এই তিন দেশের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে৷ আগের বছরের তুলনায় ২০১৫ সালে শতকরা ৭৬ ভাগ মৃত্যুদণ্ড বেড়েছে দেশটিতে৷
বিভিন্ন দেশে যেভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য একেক দেশ একেক রকম পদ্ধতি ব্যবহার করে৷ ছবিঘরে থাকছে তেমন কয়েকটি উপায়ের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইনজেকশন
অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য সোডিয়াম পেন্টোনাল, সম্পূর্ণ অক্ষম করার জন্য প্যানকিউরোনিয়াম ব্রোমাইড আর হৃদযন্ত্র থামিয়ে দেয়ার জন্য পটাশিয়াম ক্লোরাইড নামের তিনটি রাসায়নিক উপাদান ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনামে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: BilderBox
গুলি
ইন্দোনেশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া সহ কয়েকটি দেশে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে তাকে বসিয়ে বা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ এরপর সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য একের পর এক গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন৷
ছবি: Fotolia/Scanrail
বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে
অভিযুক্তকে কাঠের চেয়ারে বসিয়ে তার মাথা ও পায়ের মাধ্যমে শরীরে ৫০০ থেকে ২,০০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড করে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কয়েকবার এভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ এই পদ্ধতিটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফাঁসি
বাংলাদেশ সহ আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, জাপান, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রচলন রয়েছে৷
ছবি: vkara - Fotolia.com
শিরশ্ছেদ
কয়েক হাজার বছর ধরেই শিরশ্ছেদ বিষয়টি রয়েছে৷ তবে বর্তমানে শুধু সৌদি আরবে এই পদ্ধতিটি চালু রয়েছে৷ সাধারণত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গনে শিরশ্ছেদ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
অন্যান্য উপায়
পাথর ছুড়ে মারা, গ্যাস চেম্বারে ফেলে দেয়া, অনেক উঁচু থেকে অভিযুক্তকে নীচে ফেলে দেয়ার মাধ্যমেও কোথাও কোথাও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করার হাতিয়ার হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে বেছে নিয়েছে অনেক দেশ৷ তবে চিয়ারা সাংগিওরগিও-র মতে, ‘‘সন্ত্রাস বন্ধ করার উপায় কখনোই মৃত্যুদণ্ড নয়৷ কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিই বোমা হামলা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে চায়, তাহলে সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদের মূল কারণগুলোর দিকে মনযোগ দিতে হবে৷''
২০১৫ সালে মৃত্যুদণ্ড বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও প্রতিবেদনে কয়েকটি আশা জাগানিয়া তথ্যও দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ প্রতিবেদনে জানানো হয়, এখনো বিশ্বের ৯৪টি দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও এর চেয়ে বেশি দেশ এই দণ্ড থেকে সরে এসেছে৷ ১০২টি দেশে এখন আর মৃত্যুদণ্ড নেই৷
তাছাড়া সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে মৃত্যুদণ্ডের হার কমেছে৷ সে অঞ্চলের কয়েকটি দেশ মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার কথাও ভাবছে৷ সবার আগে বলতে হয় জিম্বাবোয়ের কথা৷ দেশটি গত দশ বছরে একটিও মৃত্যুদণ্ড দেয়নি৷
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকা
২০১৩ সালে মোট ২২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: Fotolia/lafota
চীন
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, চীনে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ তবে ব্যাপারটিকে যেহেতু চীনে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসেবে দেখা হয় তাই অ্যামনেস্টির পক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো সম্ভব হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
তিনভাবে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় – গুলি করে, পাথর ছুড়ে আর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে৷ ২০১৩ সালে এভাবে কমপক্ষে ৩৬৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ সামান্য অভিযোগে সাংবাদিক সহ মানবাধিকার কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মাঝেমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি৷
ছবি: ISNA
ইরাক
সাদ্দাম হুসেনের আমলে ইরাকে বেশি সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটতো৷ ২০১৩ সালে ১৬৯ জনের বেশি বন্দিকে এই শাস্তি পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী৷
ছবি: picture alliance/dpa
সৌদি আরব
২০১৩ সালে ১৮ বছরের কম বয়সি তিনজন সহ কমপক্ষে ৭৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
যুক্তরাষ্ট্র
ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এভাবে ২০১৩ সালে ৩৯ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ অবশ্য সে বছর কমপক্ষে ৮০ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷
ছবি: CHANTAL VALERY/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ ১৮ নম্বরে
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছে সোমালিয়ার নাম৷ ২০১৩ সালে সেদেশে ৩৪ জনের বেশি বন্দির প্রাণ নেয়া হয়৷ তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে ১৮ নম্বরে৷ অ্যামনেস্টির হিসেবে ঐ বছর বাংলাদেশে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷