সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য ঝুঁকির জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি
২৬ অক্টোবর ২০২৩
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্ষয়িষ্ণু জীববৈচিত্র্যের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত৷
বিজ্ঞাপন
২০০টিরও বেশি স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র প্রতি এ বিষয়ে সতর্কতা জারির আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷
বুধবার প্রকাশিত এ নিবন্ধে বিশ্বের প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা জাতিসংঘ, বিশ্ব নেতৃত্ব এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য লোপ পাওয়ার বিষয়কে বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বানও জানান৷
জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার শ্রীলঙ্কার মানুষেরা
শ্রীলঙ্কার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ মানুষ বাস করেন৷ সাগরের তীর ভাঙায় তাদের অনেকে ঘর হারাচ্ছেন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
সদ্য ঘর-হারা মানুষ
সাগর উপকূলে ভাঙনে ঘর হারিয়েছেন দিলরুকশান কুমারা৷ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ইরানাউইলাতে তার বাড়ি ছিল৷ উপকূলে ভাঙন অনেকদিন ধরেই শ্রীলঙ্কায় একটি সমস্যা৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
উপকূলে ভাঙনের হার
গবেষণা বলছে, শ্রীলঙ্কার পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় স্বল্পমেয়াদী ভাঙনের হার বছরে ০ থেকে তিন মিটার৷ তবে ২০৫০ সালের মধ্যে এই হার বেড়ে বছরে সর্বোচ্চ চার থেকে ১১ মিটার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আর ২১০০ সালের মধ্যে সেটা আরও বেড়ে ১০ থেকে ৩৪ মিটার হতে পারে৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
হঠাৎ সব শেষ!
‘‘গতমাসে এক রাতে আমার ছেলে বাথরুমে গিয়েছিল৷ এরপর হঠাৎ তাকে চিৎকার করে বলতে শুনি - আমাদের বাড়ি সাগরে চলে গেছে!’’ বলছিলেন ৫৮ বছর বয়সি জেলে ফার্নান্দো৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
আইপিসিসির আশঙ্কা
ভাঙার পর বাড়ির যে অংশটুকু অক্ষত আছে তা সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী৷ জাতিসংঘের আইপিসিসি সংস্থা বলছে, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ শতকের শেষ নাগাদ বিশ্বের নিম্নাঞ্চলীয় এলাকায় সাগরের পানি বৃদ্ধির ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যাবে৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
সাগরের ছোবল
‘‘আমি দেখলাম আমার বাড়ির একটা অংশ সাগর খেয়ে ফেলেছে, আর আমার ছেলে কমোড নিয়ে পানি থেকে উঠে আসছে৷ বাড়ির ভিত্তি পুরো ধসে গেছে৷ তাই অন্যত্র সরে যেতে হয়েছে,’’ বলছিলেন ফার্নান্দো৷ ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে তার ভাঙা বাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
ভাঙনের কারণ
ইরানাউইলার স্থানীয়রা বলছেন, আবহাওয়া খারাপ হওয়ার ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে৷ এছাড়া কাছেই সাগর পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলায় ভাঙন বেড়েছে৷ গত তিন বছরে উপকূল কয়েকশ মিটার এগিয়েছে বলে জানান তারা৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
জীবিকা ধ্বংস
ফার্নান্দোর স্ত্রী জসিন্তাকে এক অস্থায়ী আবাসে দেখা যাচ্ছে৷ শ্রীলঙ্কার ১,৬২০ কিলোমিটার উপকূলে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, যা লাখ লাখ মানুষের আয়ের উৎস৷ দেশটির উপকূলীয় এলাকায় প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ মানুষ বাস করেন৷
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
সেখানে তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র উচিত বড় বিপর্যয় এড়ানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকে একক বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করার এখনই সময়৷
নভেম্বরে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে ২৮তম কপ সম্মেলন৷ সেখানে বরাবরের মতোই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে৷ আগামী বছর তুরস্কে অনুষ্ঠেয় জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত ১৬তম কপ সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতেও গুরুত্ব পাবে বিষয়টি৷
খরা আর দাবানলের ইউরোপ
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতর হয়ে উঠছে ইউরোপ৷ ফলে খরা আর দাবানল যেন এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাসিন্দাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠছে৷
ছবি: Nicolas Economou/Reuters
সাধারণ তথ্য
গতবছর ইউরোপের ৩৫টি দেশে গরম সংশ্লিষ্ট অসুখে ৬১ হাজার ৬০০ জন মারা যান৷ ২০২১ সালের আগস্টে ইটালির সিসিলিতে তাপমাত্রা ৪৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল- যা ইউরোপের সর্বোচ্চ৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.com
ক্রোয়েশিয়া
১৩ জুলাই উপকূলীয় শহর সিবেনিকে দ্রুত দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ২৫ জুলাই পর্যটন নগরী ডুবরোভনিকে আরেকটি দাবানল শুরু হয়েছিল৷ দুটোই খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
সাইপ্রাস
উত্তরের লিমাসলের এক বনে ৬ আগস্ট আগুন লেগেছিল৷ এরপর তা দ্রুত পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে৷ সতর্কতা হিসেবে তিনটি কমিউনিটির বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হয়েছিল৷ উপরের ছবিটি ২০২১ সালের৷
ছবি: Etienne Torbey/Getty Images/AFP
ফ্রান্স
পুরো দেশজুড়েই বিভিন্ন জায়গায় ছোট আকারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ এপ্রিলের মাঝামাঝি ফ্রান্সের জিওলজিক্যাল সার্ভিস বিআরজিএম জানিয়েছিল, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় এবার গ্রীষ্মে দক্ষিণাঞ্চলে গতবছরের চেয়ে বেশি খরা দেখা দিবে৷
ছবি: DAMIEN MEYER/AFP/Getty Images
গ্রিস
রোডস দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে মধ্য জুলাইয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল৷ দাবানলের কারণে ২৫-২৬ জুলাই রাতে করফু দ্বীপেও মানুষজনকে সরাতে হয়েছে৷ রাজধানী এথেন্সের ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ১৭ জুলাই দাবানল হয়েছিল৷ এথেন্সের দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমেও ছোটখাটো দাবানল হয়েছে৷
ছবি: Nicolas Economou/Reuters
ইটালি
১৮ জুলাই ২৭টি প্রধান শহরের মধ্যে ২০টিতে লাল অ্যালার্ট জারি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ রাজধানী রোমে তাপমাত্রা ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল, যা এক নতুন রেকর্ড৷
ছবি: Alberto Lo Bianco/AP/picture alliance
পর্তুগাল
ওডেমিরা অঞ্চলে ৫ আগস্ট দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল৷ পাঁচদিন পর তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়৷ এক পর্যায়ে দাবানলটি পর্তুগালের শীর্ষ পর্যটন গন্তব্য আলগার্ভের কিছু অংশকেও স্পর্শ করেছিল৷ দাবানলে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ তীব্র গরমের কারণে দেশটির ১২০টি পৌরসভাকে দাবানলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: PATRICIA DE MELO MOREIRA/AFP
স্পেন
লা পালমা দ্বীপে ১৫ জুলাই দাবানল হয়েছিল৷ অন্তত চার হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হয়েছিল৷ জুলাই মাসের শেষে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল৷ ২০২৩ সালের প্রথম চার মাস রেকর্ড শুষ্ক ছিল৷
ছবি: Europa Press/Abacca/IMAGO
সুইজারল্যান্ড
আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ১৭ জুলাই কর্তৃপক্ষ ইটালি সীমান্তে অবস্থিত কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামের প্রায় ২০০ মানুষকে নিরাপদে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ ছবিটি গতবছরের৷
ছবি: Gabriel Kuchta/Getty Images
তুরস্ক
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের হাতায় ও মারসিন রাজ্য এবং উত্তর-পশ্চিমের চানাকালে রাজ্যে ১৬ জুলাই দাবানল শুরু হয়েছিল৷ ছবিটি গতবছরের৷
ছবি: MEHMET CIL/DHA
10 ছবি1 | 10
জলবায়ু বিষয়ক কনফারেন্স অব পার্টিস (কপ) এবং জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনফারেন্স অব পার্টিস (কপ)-এর গবেষকরা আলাদাভাবে কাজ করলেও ২০২০ সালে এক ধরনের সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে যৌথ কর্মশালা করেছিল তারা৷
তখন যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যকে একই জটিল সমস্যার অংশ হিসেবে
বিবেচনায় নিলেই কেবল অভিযোজনবিমুখতা এড়ানো এবং সুফল বৃদ্ধিতে সহায়ক একটা ব্যবস্থার দিকে এগিযে যাওয়া সম্ভব৷''
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অবশ্য পরিবেশরক্ষার বিষয়ে আগে থেকেই এক ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের বার্তা দেয়া হচ্ছে৷ বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে গত বছর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘‘প্রকৃতি ছাড়া আমাদের কিছুই নেই৷''
নিউইয়র্ক শহরে বৃষ্টির ‘নতুন বাস্তবতা’
নিউইয়র্ক শহরে বৃষ্টির ‘নতুন বাস্তবতা’
ছবি: Mike Segar/REUTERS
ঝুম বৃষ্টি
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঝুম বৃষ্টি নামে নিউইয়র্কের আকাশ থেকে৷ প্রায় আট ইঞ্চি বা ২০ মিলিমিটার সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়৷ আর এতেই ডুবে যায় অ্যামেরিকার সবচেয়ে জনবহুল শহরটি৷
ছবি: Jake Offenhartz/AP/dpa/picture alliance
তাহাদের ছোট নদী
নিউইয়র্কের রাস্তা, অলি-গলি যেন একেকটা ছোট ছোট নদী৷ কোথাও কোথাও নৌকাও দেখা গেছে৷ সেন্ট্রাল পার্কের চিড়িয়াখানার সী লায়নগুলো তাদের পুল ছেড়ে বাইরেও সাঁতরেছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: Mike Segar/REUTERS
যান চলাচল ব্যাহত
যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে৷ কোথাও কোথাও বাসগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল ঘন্টার পর ঘন্টা৷
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
চিকিৎসা সেবায় বাধা
সপ্তাহান্তে বন্যার পানি নেমে এলেও তার আগে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে স্থানীয় একটি হাসপাতাল৷ তাদের বিদ্যুৎ চলে যায়৷ ফলে ডাক্তার, স্টাফ ও রোগীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়৷
ছবি: Michael M. Santiago/Getty Images
জরুরি অবস্থা
স্থানীয় প্রশাসন এক রকমের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ এতে করে ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি সেবা পৌঁছে দেয়া সহজ হয়৷
ছবি: Andrew Kelly/REUTERS
নতুন বাস্তবতা
নিউইয়র্কের মেয়র ক্যাথি হোখুল এই পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নতুন বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি একে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেন৷
ছবি: Mike Segar/REUTERS
বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরির্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে৷ ফলে বাড়ছে বাতাসে বাষ্পের পরিমাণ৷ তাই কারণে অকারণে যখন তখন বৃষ্টি হচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বাড়ছে৷ নিউইয়র্কের মত নিচু শহরগুলো এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ তা সহজেই প্লাবিত হয়ে পড়ছে৷