ইউরোপে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অনেক ঐতিহ্য লুকিয়ে রয়েছে৷ যেমন সার্দিনিয়া দ্বীপের এক ছোট শহর বিশেষ ধরনের এক নুডলের জন্য বিখ্যাত৷ দুটি মাত্র পরিবার সেটি তৈরি করতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের কোনো সুপারমার্কেটেই এই নুডেল কিনতে পাওয়া যায় না৷ ‘সু ফিলিন্দেউ' নামের সেই নুডেলের অর্থ ঈশ্বরের সুতা৷ হাতে গোনা কিছু মানুষ সেই নুডেল তৈরি করতে পারেন বলেই এর এত কদর৷ লুকা ফ্লোরিস তাঁদেরই একজন৷ তাঁর মতে, ‘‘ধৈর্য্য ও প্রত্যয়ের প্রয়োজন৷ কেউ যদি মনে করে, চটজলদি এই কৌশল শিখে নিয়ে সেটা রপ্ত করে চলে যাবে, তার এখানে না আসাই ভালো৷''
বিশেষ নুডলের জন্য বিখ্যাত যে দ্বীপ শহর
03:57
ভূমধ্যসাগরে ইটালির সার্দিনিয়া দ্বীপের একটি মাত্র জায়গায়ই এই নুডল তৈরি হয়৷ দ্বীপের মধ্যভাগে পাহাড়ি এলাকায় নুয়োরো শহরে দুটি পরিবারের জিম্মায় সেই পাস্তা তৈরির প্রণালী গচ্ছিত আছে৷ তাদেরই একজন হিসেবে লুকা ফ্লোরিস সেই প্রণালী দেখাতে রাজি হলেন৷ উপকরণ, পানি, লবণ নাকি বিশেষ ময়দার কারণে এই নুডলের এমন খ্যাতি? আসলে কিন্তু বিষয়টা বেশ সহজ৷ লুকার মতে, ‘‘প্রথম দিকে বার বার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়৷ উপকরণগুলির অনুপাত সঠিক হতে হবে৷ বুঝতে হবে, বাতাসে আর্দ্রতা বা উত্তাপের কারণে সেমোলিনা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ তাপমাত্রার পার্থ্যক্য অনুযায়ী সেটি অনেক পানি গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে৷''
যন্ত্র নয়, হাতে করে সেই তাল মাখতে হয়৷ মাখার সময়েই লুকা সঠিক গঠন ও স্থিতিস্থাপকতা টের পান৷ তবে সেই সঙ্গে আরো কিছু বিষয় মনে রাখতে হয়৷ লুকা বলেন, ‘‘ঠিক এই পর্যায়ে অনেক মানুষ একটা ভুল করে৷ তারা মনে করে, ময়দা মাখার কাজ শেষ হয়ে গেছে৷ কিন্তু সেই তাল সত্যি মসৃণ হতে হবে এবং আরো মাখতে হবে৷ সেটা অনেক পরিশ্রমের কাজ৷ সত্যি বেশ বেগ পেতে হয়৷ পরে কনুইয়ে সেটা টের পাওয়া যায়৷''
ফিতা তৈরি বড় জাক৷ তারপর নুডলগুলি বেতের চাকার উপর শুকোতে দেওয়া হয়৷ শুধু এই কৌশল রপ্ত করতেই অনেক অনুশীলনের প্রয়োজন৷ সেই সঙ্গে আরো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ লুকার মতে, ‘‘শুরু ও শেষের অংশ যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করতে হবে৷ কারণ কাজ করার সময়ে এই ময়দার তাল শুকাতে শুরু করে৷ শুকনা তালের উপর তাজা তাল বসানো যায় না৷ সেটা একেবারেই আটকায় না৷''
তিন স্তরের সুতা শেষে এক ধরনের বিনুনির মতো দেখতে লাগে৷ ‘সু ফিলিন্দেউ' খেতে হলে সৌভাগ্যের প্রয়োজন৷ এমনকি সার্দিনিয়ার দোকান-বাজারেও সব সময়ে সেই নুডল কিনতে পাওয়া যায় না৷ সে কারণেও সার্দিনিয়ার এই খাদ্যের কদর এত বেশি৷
ইয়ানা ওরটেল/এসবি
বিভিন্ন খাবার নিয়ে যেসব ভুল ধারণা
লবণ ক্ষতিকর, নুডলস মোটা করে অথবা ডিম কোলোস্টরেলের মাত্রা বাড়ায় কিংবা স্যাকারিন চিনি চেয়ে ভালো -এরকম কিছু ভুল ধারণা অনেকেরই রয়েছে৷ জেনে নিন এসম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online/Tetra
লবণের ভালো-মন্দ
অতিরিক্ত লবণ খেলে স্ট্রোক করা এবং কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তা সত্যি৷ তবে এ কথা ভেবে অনেকেই খাবারে লবণের পরিমাণ একদম কমিয়ে দেন, যা ঠিক নয়৷ কারণ, শরীরে লবণের পরিমাণ কম হলে স্ট্রেস হরমোন উৎপাদন বেড়ে যায়৷ তাছাড়া লবণ নার্ভ সিস্টেমকে ঠিক রাখতে সিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে৷ তাছাড়া পেশির ব্যথা প্রতিরোধে লবণের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি লো ব্লাড প্রেশারের ক্ষেত্রেও লবণ উপকারী৷
ছবি: Colourbox/Haivoronska_Y
নুডলস কি সত্যিই মোটা করে?
নুডলস মোটা করে কিনা তা নির্ভর করে আপনি কোন আটার তৈরি নুডলস খাচ্ছেন, তার ওপর৷ সাদা আটা বা ময়দা যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা আজকাল স্বাস্থ্যসচেতন প্রায় সকলেই জানেন৷ আপনি যদি শস্যদানা থেকে করা আটার তৈরি নুডলস খান, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা৷ অর্থাৎ, সব নুডলস এক নয়! নুডলসের স্বাদ পেতে নুডলসের ‘আটার’ দিকে লক্ষ্য রাখুন৷ জানান, জার্মান পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আনে ফ্লেক৷
ডিম খেলে প্রতিটি মানুষেরই যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাবে, তা ভাবা একেবারেই ঠিক নয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৫০,০০০ মানুষকে নিয়ে করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, হৃদপিণ্ডে ডিম খাওয়ার নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি, বরং তাঁদের শতকরা ১২ ভাগ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে৷ তবে ডিমের পুরোপুরি পুষ্টিগুণ থাকে কেবলমাত্র ‘অর্গানিক’ ডিমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
স্যাকারিন স্বাদ কেড়ে নেয়
যদি ক্যালোরির হিসেব করা হয়, তাহলে অবশ্যই স্যাকারিন ভালো৷ অন্যদিকে কিন্তু স্যাকারিন খিদে বাড়ায়৷ তাছাড়া যাঁরা নিয়মিত স্যাকারিন খান, তাঁরা চিনির আসল স্বাদ প্রায় ভুলেই যান৷ আনে ফ্লেক জানান, সাধারণ একটা আপেল খেতে কত স্বাদ সেটাই তারা ভুলে যান নিয়মিত ‘স্যাকারিন’ খাওয়ার কারণে৷
ছবি: Fotolia/Monika Wisniewska
চর্বি খেলে কি সত্যিই চর্বি বাড়ে?
আসলে ঠিক তার উল্টো৷ সুস্থ থাকার জন্য প্রতিট মানুষের শরীরে প্রয়োজন উঁচুমানের তেল৷ বিশেষ করে স্যামন মাছের চর্বি বা তেল কার্ডিওভাসকুলারের ঝুঁকি কমায়, যা গবেষণায় প্রমাণিত৷ তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বাদামের তেল, যা শরীরে ভিটামিন ‘ই’-এর জোগান দেয়৷
ছবি: Colourbox
লাল মাংস কি সত্যিই অস্বাস্থ্যকর?
মাংসে রয়েছে উঁচুমানের প্রোটিন এবং ভিটামিন বি ১২, যা সকলেরই প্রয়োজন৷ এই প্রোটিন কোনো উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় না৷ যদিও শোনা যায়, মুরগির মাংস নাকি লাল মাংসের চেয়ে ভালো৷ এখানেও বলা যেতে পারে যে, বাছুরের মাংস খুব সহজে হজম হয় এবং ভেড়ার মাংসে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ৷
ছবি: Fotolia/hg_media
ফল খাওয়া কি সত্যিই জরুরি ?
না, যাঁরা ফল খেতে চান না বা ফলে অ্যালার্জি রয়েছে, তাঁদের ফল না খেলেও চলবে, যদি তাঁরা যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খান৷ ফলের মধ্যে যেসব খাদ্যগুণ রয়েছে, সেগুলো কিন্তু সবজিতেও আছে৷ তাই সমস্যা হলে বা খেতে ইচ্ছে না করলেও যে ফল খেতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই৷