সার্বিয়ার যে কার্পেট ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাচ্ছে
৩১ মার্চ ২০২৫
সারা বিশ্বে মাত্র পাঁচজন তাঁতী ‘কিলিম অফ পিরোট' নামের গালিচা বা কার্পেট বুনে থাকেন৷ সার্বিয়ার পিরোট শহরের এই কার্পেটের নাম শিগগিরই ইউনেস্কোর মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে৷ কিন্তু এই কার্পেটের বিশেষত্ব কী?
সার্বিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাড়িতে গেলে ‘কিলিম অফ পিরোট' নামের কার্পেটের দেখা পাওয়া যাবে৷
‘লেডিস হার্ট' সমবায়ের পরিচালক স্লাভিচা চিরিচ বলেন, ‘‘পিরোটে তৈরি কার্পেটের বিশেষত্ব হচ্ছে, এগুলি উল্লম্ব তাঁতে বোনা হয়, পিরোট অঞ্চলের ভেড়ার পশম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, কার্পেটের দুই দিক একইরকম হয়ে থাকে, প্রতিটি কার্পেট - যতই প্রশস্ত হোক না কেন - একক টুকরো হিসাবে বোনা হয় এবং প্রতি বর্গমিটারে নকশার ঘনত্ব বেশি থাকে৷''
বর্তমানে মাত্র পাঁচজন নারী এই কার্পেট তৈরি করতে পারেন৷ একমাত্র তারাই এই ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং তারা সবাই লেডিস হার্ট সমবায়ে কাজ করেন৷ সে কারণে এই হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখা এবং মানবজাতির অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷
চিরিচ জানান, ‘‘কার্পেট বোনার প্রাথমিক পদ্ধতি ও নকশা শিখতে, এবং এই ছোট ছোট কার্পেটগুলি তৈরি করতে, যা এখন স্মারক হিসেবেও বিক্রি হচ্ছে, এবং নিজেকে ‘তাঁতি' বলে পরিচয় দিতে চাইলে একজন নারীকে পাঁচ বছর ধরে প্রতিদিন এই শিল্পে কাজ করতে হয় এবং ১.৪ বাই ২ মিটার মাপের একটি বড় কার্পেট তৈরি করতে হয়৷ তিনি যদি তা করতে পারেন তাহলে তিনি নিজেকে ‘তাঁতি' বলতে পারবেন৷''
কিলিম কার্পেট তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম ও ধৈর্য লাগে৷ কার্পেটের সাধারণ নকশা এই অঞ্চলের সব জায়গায় দেখা যায়: সরকারি ভবনের দেয়ালে, এমনকি বিয়েতে দায়িত্ব পালনকারী সরকারি কর্মচারীদের পোশাকেও৷
এমন পোশাকের ধারনা এসেছে ফ্যাশন ডিজাইনার ও সাংবাদিক সিলভানা টোসিচের মাথা থেকে৷ তার নকশা করা পোশাক বেলগ্রেড, প্যারিস ও তুরিনের ক্যাটওয়াকে প্রদর্শিত হয়েছে৷ এগুলো তার জন্য গভীর অর্থ বহন করে৷
সিলভানা টোসিচ বলেন, ‘‘পিরোটের কার্পেটের একটা বিশাল আবেগগত মূল্য আছে৷ আর সম্প্রতি আমার কাছে এর একটি নির্দিষ্ট মার্কেটিং মূল্য আছে৷ আমার দাদি দুসাঙ্কা এই কার্পেট বুনতেন৷ আমি কার্পেট বোনা দেখে দেখে বড় হয়েছি, আর আমার মনে হয় কার্পেট বোনার হাতিয়ার ‘টুপিকা', তাঁত এবং পশমের বল ছিল আমার প্রথম খেলনা৷ আমার দাদি আমাকে যা দিয়েছিলেন তা হলো, একটি ঐতিহ্য- যা আমাকে পিরোটের কার্পেটের গল্প অন্যদের কাছে একটু ভিন্ন ও আরো আধুনিক উপায়ে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে৷''
একটি কার্পেটকে ‘কিলিম অফ পিরোট' খেতাব পেতে হলে কার্পেটটি পিরোটের স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে এবং কঠোর নিয়ম মেনে বোনা হতে হয়৷ পিরোট কিলিম তাঁতিদের সমবায় ১২০ বছরেরও বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ তবে শহরে কিলিম বয়নের ঐতিহ্য নবম শতাব্দী থেকে শুরু হয়েছিল৷ এছাড়া পিরোটই একমাত্র জায়গা যেখানে মানুষকে এই কার্পেট বুননের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে৷
২ বাই ৩ মিটার মাপের একটি কার্পেট বুনতে প্রায় আট মাস লাগে৷ এর প্যাকেজিংও খুবই গুরুত্বপূর্ণ - বিশেষ করে যখন সেটি কোনো প্রতিষ্ঠান বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তির কাছে উপস্থাপন করা হয়৷
পিরোটের পাঁচজন তাঁতি দিনের পর দিন কার্পেট বুনে চলেছেন৷ কারণ, কোনো হস্তশিল্পকে ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার একটি শর্ত হলো, সেটি নিয়মিত বোনা হতে হবে৷
জেলেনা জুকিচ-পেজিচ/জেডএইচ