ক্যানসার মোকাবিলার লক্ষ্যে বিজ্ঞানী ও গবেষেকরা অক্লান্ত কষ্ট করে চলেছেন৷ এবার এক মারাত্মক ব্যাক্টিরিয়াকে কাজে লাগিয়ে টিউমারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য পেয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
মানবজাতির কাছে ক্যানসার অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ৷ এই রোগ নিরাময়ের কোনো একক ওষুধের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ বরং এর বিপরীতটাই ঘটছে৷ প্রতি বছর ক্যানসারের ফলে আরও মানুষ মারা যাবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিচ্ছে৷ তাই ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন আইডিয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷
সালমোনেলা রোগের প্যাথোজেন হিসেবে কুখ্যাত৷ তবে কিছুকাল ধরে ক্যানসার গবেষকরা এই আগ্রাসী ব্যাক্টিরিয়াকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে চাইছেন, যাতে তারা তাদের ধ্বংসাত্মক শক্তি ক্যানসারের টিউমারের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে৷ আইডিয়াটা নতুন নয়, কিন্তু এই প্রথম সালমোনেলার আক্রমণাত্মক শক্তি বশে আনা সম্ভব হয়েছে৷ ইমিউনোলজিস্ট ড. সিগফ্রিড ভাইস বলেন, ‘‘ব্যাক্টিরিয়া কাজে লাগিয়ে ক্যানসার মোকাবিলার আইডিয়া বহু পুরানো৷ আমরা সালমোনেলা বেছে নিয়েছি, কারণ বহুদিন ধরে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি৷ এই ব্যাক্টিরিয়ার আগ্রাসী শক্তি যে টিউমারের মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷''
প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখার ৬ উপায়
সমীক্ষায় জানা যায়, বিভিন্ন দেশে নানা রকম ক্যানসারের মধ্যে পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসার হয় সবচেয়ে বেশি৷ অথচ কিছুটা সচেতন হলেই এই ক্যানসারকে দূরে রাখা সম্ভব৷ জেনে নিন কিভাবে৷
ছবি: picture alliance / dpa
ব্রকোলি ও অন্যান্য সবজি
টরন্টোর ‘জার্নাল অফ দ্য ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সটিটিউট’-এ প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ব্রকোলি, ফুলকপি ও সবুজ শাক-পাতা প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা ব্রকোলি, ফুলকপি ও শাক-পাতা খেয়েছেন প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি তাঁদের ক্ষেত্রে আসলেই বেশ কম৷
ছবি: Fotolia/Mariusz Blach
ওমেগা-৩
ওমেগা-৩ প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে সহায়তা করে৷ এ তথ্য জানা গেছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার ফলাফল থেকে৷ তাতে বলা হয়, যে সমস্ত পুরুষ প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার স্যামন মাছ খান, তাঁদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি শতকরা ৬৩ ভাগ কম, যাঁরা এ মাছ খাননি তাঁদের তুলনায়৷ তবে যাঁদের এই মাছ পছন্দ নয়, তাঁরা বিকল্প হিসেবে স্যামন মাছের তেল দিয়ে তৈরি ওমেগা-৩ ক্যাপসুল খেতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Printemps
আখরোট ও বেদানা
অন্যান্য অনেক অসুখের মতো খাবার-দাবারের সাথে প্রস্টেট ক্যানসারেরও সম্পর্ক রয়েছে৷ তাই বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে মাংস এবং দুধ কম খেয়ে বেশি করে বেদানা ও আখরোট খান৷ বেদানা ও আখরোটে যে উদ্ভিদ উপাদান রয়েছে, তা প্রস্টেট টিউমার বড় হতে বাঁধার সৃষ্টি করে থাকে৷
ছবি: Colourbox
পলিফেনলযুক্ত পানীয়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনলের মতো অরগ্যানিক উপাদান থাকা পানি বা জল প্রস্টেট ক্যানসারকে দূরে রাখতে সহায়তা করে৷ যেমন টমেটোর রস, গ্রিন টি বা সবুজ চা, ঔষুধি চা, আঙুরের রস এবং বীট-পালং ইত্যাদিতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে পলিফেনল৷
কোলেস্টোরল কমাতে হবে
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যে সব পুরুষের কোলেস্টোরলের মাত্রা ২২ মিলি গ্রামের নীচে, তাঁদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় ৬০ ভাগ কম৷ স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে কোলেস্টোরলের মাত্রা কমাতে পারলে প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/britta pedersen
প্রয়োজন ভিটামিন ডি
সূর্যের তাপের মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয় আর ভিটামিন ডি প্রস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসার একটি কার্যকর অংশ৷ ইউরোলজিস্টদের মতে, ‘পিএসএ’ নামের একটি রাসায়নিক উপাদানের ক্ষরণ বেড়ে গেলে প্রস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসার হয় সবচেয়ে বেশি৷ তারপর অ্যামেরিকা এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Müller
6 ছবি1 | 6
জার্মানির ব্রাউনশোয়াইগ শহরের হেল্মহলৎস সংক্রমণ গবেষণা ইনস্টিটিউট সালমোনেলা ব্যাক্টিরিয়াকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছে, যাতে সেটি প্রথমে টিউমারের উপর হামলা চালায়, তারপর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করে৷
কিন্তু সমস্যা হলো, এমন আগ্রাসী জীবাণু দিয়ে ক্যানসারাস টিউমার চিকিৎসার অনেক ঝুঁকি রয়েছে৷ এমনকি এর ফলে ক্যানসার রোগীর মৃত্যুও হতে পারে৷ তবে ইঁদুরের উপর কিছুটা দুর্বল সালমোনেলা প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে৷ ড. ভাইস বলেন, ‘‘আমরা যদি সেগুলিকে খুব বেশি দুর্বল করে দেই, তখন চিকিৎসার জন্য তারা আর সক্রিয় থাকবে না৷ এ ক্ষেত্রে সঠিক ভারসাম্য চাই৷ অর্থাৎ ব্যাক্টিরিয়াকে একদিকে অত্যন্ত আগ্রাসী থাকতে হবে৷ অন্যদিকে সেটিকে এতটা দুর্বল করতে হবে, যাতে সেটি আর বিপজ্জনক না থাকে৷''
গবেষকরা ব্যাক্টিরিয়ার মধ্যে এক ধরনের সুইচ তৈরি করছেন, দূর থেকে যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ সুইচ অন থাকলে সেটি আগ্রাসী হয়ে ওঠে৷ অফ করে দিলে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা সেটিকে ধ্বংস করতে পারবে৷
সালমোনেলা এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যাতে সেটি বিশেষ ধরনের এক শর্করার মধ্যে আগ্রাসী হত্যাকারী হিসেবে বেড়ে ওঠে৷ কিন্তু ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে দিলে এবং শর্করার অভাব দেখা দিলে সেটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক নিরীহ ব্যাক্টিরিয়ায় পরিণত হয়৷ বায়োলজিস্ট ডিনো কোচিয়ানচিচ বলেন, ‘‘ইঁদুরের শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ব্যাক্টিরিয়া ঢুকিয়ে দিলে এবং তারপর শর্করা যোগ করলে আরও মারাত্মক প্যাথোজেনিক স্ট্রেন দেখা যায়৷ শর্করা থেকে বেরিয়ে গেলে, বা তার অভাব দেখা গেলে তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ে, আর তেমন বিপজ্জনক থাকে না৷ থেরাপিতে আমরা সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করি৷''
ক্যানসারের দশ লক্ষণ
ক্যানসারের কিছু লক্ষণ আছে, যা মানুষ নিজের অজান্তেই এড়িয়ে যায়৷ অথচ রোগবালাই শুরুতে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়৷ তাই আজ জানাবো ক্যানসারের দশটি লক্ষণের কথা, যেগুলো সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ঘনঘন কাশি
মাঝে মাঝে কাশি হলে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷ কিন্তু ঘনঘন কাশি কিংবা কফের সঙ্গে রক্ত বের হলে, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো ব্যাপার বৈকি! বেশিরভাগ কাশি বিপদের না হলেও কিছুক্ষেত্রে তা ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
অন্ত্রের অভ্যাসে ঘনঘন পরিবর্তন
আপনার অন্ত্রের মধ্যে নড়াচড়া যদি সহজ না হয় এবং মল স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিংবা কোনোভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে তা মলাশয়ে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Jiri Hera
মূত্রথলির অভ্যাসে পরিবর্তন
যদি কারো মূত্র বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে তা মূত্রথলি বা কিডনির ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আবার মূত্রনালীতে সংক্রমণের কারণেও এটা হতে পারে৷ তাই সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়৷
ছবি: imago/eyevisto
ঘনঘন অপ্রত্যাশিত ব্যথা
অধিকাংশ ব্যথাই ক্যানসারের লক্ষণ নয়, তবে ঘনঘন ব্যথা হলে তা চিন্তার বিষয়৷ তবে ক্রমাগত মাথাব্যথা হলে আবার এটা ভাবার কারণ নেই যে, কারো বুঝি ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে৷ কিন্তু বুকে ক্রমাগত এবং নিয়মিত ব্যথা ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Adam Gregor
আঁচিল বা তিলের আকৃতিতে পরিবর্তন
সব আঁচিল বা তিলের সঙ্গে টিউমারের সম্পর্ক নেই৷ তবে কোনো আঁচিল বা তিলের আকৃতি ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভালো৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ক্ষতস্থান না শুকালে
আপনার শরীরে কোনো ক্ষত যদি তিন সপ্তাহেও না শুকায়, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকতে পারে৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Karl-Josef Hildenbrand
অপ্রত্যাশিত রক্তপাত
মাসিকের সময় ছাড়া অন্য সময়ে যোনি থেকে রক্তপাত সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আর মলদ্বার থেকে রক্তপাতও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/absolutimages
অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমা
অনেকেই ওজন কমানোর জন্য নানারকম চেষ্টা করেন৷ কিন্তু যদি কোনোরকম চেষ্টা ছাড়াই কারো ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে, তাহলে সেটা বিপদের লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/rico287
অপ্রত্যাশিত স্ফীতি
শরীরের কোথাও কোনো অপ্রত্যাশিত স্ফীতি বা কোনো ফোলা স্থানের আকার পরিবর্তন হতে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ মেয়েদের স্তনের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের উপস্থিতিও কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ৷
ছবি: picture alliance/CHROMORANGE
ঘনঘন গিলতে সমস্যা হলে
এটা দু’ধরনের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ ঘাড় এবং খাদ্যনালীর ক্যানসার৷ তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান৷ দ্রষ্টব্য: ছবিঘরটি তৈরিতে ‘‘ওম্যান’স হেল্থ’’ ম্যাগাজিন থেকে তথ্য সহায়তা নেয়া হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Dasha Petrenko
10 ছবি1 | 10
শরীর আগ্রাসী সালমোনেলার মোকাবিলা করে এবং একই সঙ্গে টিউমার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ সালমোনেলা ঠিক কী করে, গবেষক দলের প্রধান তা দেখিয়ে দিলেন৷ ড.ভাইস বলেন, ‘‘এখানে টিউমার সহ একটি ইঁদুর আছে৷ আমরা তার লেজের শিরায় সালমোনেলা ঢুকিয়ে দিচ্ছি৷ সেগুলি রক্তের স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে টিউমারে ঢুকে পড়ে৷ তখন সেই টিউমার ধ্বংস হয়ে যায়৷ একইসঙ্গে ব্যাক্টিরিয়া বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে৷ লিম্ফ নোড এবং কাছের লিম্ফ নোড-গুলিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ টিউমারের সেই কোষগুলি তখন টিউমারে ঢুকে পড়ে এবং তার মোকাবিলা করে সেটিকে ধ্বংস করে দেয়৷ ফলে ইঁদুর টিউমার-মুক্ত হয়ে পড়ে৷''
গবেষকরা নিশ্চিত, যে মানুষের উপর এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে আরও অনেক সময় লাগলেও সালমোনেলা ও আমাদের ইমিউন সিস্টেমের আদান-প্রদানের সম্ভাবনা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন পথ খুলে দিচ্ছে৷