সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে রহস্য
১৯ মে ২০১৫সালাহ উদ্দিন দাবি করেছেন, তাঁকে ঢাকায় ‘অপহরণের' পর দুমাস একটি ঘরে বন্দি রাখা হয়েছিল৷ তিনি নিজে শিলং যাননি, তাঁকে হাত-চোখ বেঁধে নিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে সেখানে৷
গত ১১ মে শিলং পুলিশ গলফ কোর্সের কাছ থেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করে৷ সেখানকার পুলিশের দাবি, তিনি উদ্রভান্তের মতো হাঁটছিলেন৷ তখন স্থানীয় লোকজন খবর দিলে তারা গিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁকে আটক করেন৷ পরে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়৷
কিন্তু সালাহ উদ্দিন আহমেদ সোমবার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ হাসপাতাল থেকে বাইরে নেয়ার সময় তিনি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন৷ সেসময় তিনি দাবি করেন, তিনি নিজেই পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন৷ একই সঙ্গে তিনি আরো কিছু তথ্য দিয়েছেন৷ সালাহ উদ্দিন বলেছেন, ‘‘আমাকে ঢাকায় অপহরণ করা হয়েছে৷ অপহরণের পর দুই মাস একটি ছোট কক্ষে আটক রাখা হয়৷ পরে অপহরণকারীরা তাঁর চোখ বেঁধে কয়েকদিন ধরে গাড়িতে করে ঘোরায় এবং সে সময় তারা বারবার গাড়ি বদলায়৷'' তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘আমি স্বেচ্ছায় ভারতে ঢুকিনি, আমার চোখ-হাত বেঁধে শিলংয়ে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়৷''
এদিকে সংবাদ মাধ্যমে ভারতে যাওয়া কয়েকজন বিএনপি নেতার বরাত দিয়ে সালাহ উদ্দিনের স্মৃতিভ্রম হয়েছে বলে খবর পরিবেশন করা হলেও সোমবার শিলং-এ তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন৷
আইনজীবী নিয়োগ
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এখন শিলং-এ রয়েছেন৷ তিনি মঙ্গলবার হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ আইনি লড়াই চালানোর জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেছেন তিনি৷ ভারতে পাসপোর্ট এবং ভিসা ছাড়া অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য সালাহ উদ্দিকে বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে৷
আগের কথা
গত ১০ মার্চ সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হন৷ তখন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের একটি দল রাত দশটার পর ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে তাঁর স্বামীকে উঠিয়ে নিয়ে যায়৷ উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে তাদের দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে সালাহ উদ্দিন অবস্থান করছিলেন৷ সেই বাসার দারোয়ানকে ডিবির পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে দোতলার দরজা ভেঙে তাঁর স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়৷''
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী তখন দাবি করেছিলেন, ‘‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে হাত ও চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ নেয়ার সময় সালাহ উদ্দিন তাঁকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু কথা বলার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়৷ তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় মোট ছয়টি গাড়িতে ২০/২৫ জন লোক এসেছিলেন৷''
কথার মিল
সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর তখনকার অভিযোগের সঙ্গে সালাহ উদ্দিনের এখনকার কথার মিল পাওয়া যায়৷ কিন্তু তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর থানা পুলিশ এনিয়ে কোনো তদন্ত করেনি৷ আর তিনি ভারতে আটক হওয়ার পর র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘সালাহ উদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে৷''
বিএনপি'র বক্তব্য
এসব প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতের উচিত সালাহ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য তদন্ত করে দেখা৷ কারা তাঁকে হাত-চোখ বেঁধে শিলং-এ ফেলে এসেছে৷ সালাহ উদ্দিনের আইনজীবীও আদালতে বিষয়টি তুলে ধরবেন৷'
তিনি জানান, ‘‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণের পর শিলং-এ জোর করে পাঠানো হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় যাননি- এই বিষয়টি ভারতীয় পুলিশের আমলে নেয়া উচিত৷ তাদের তদন্ত করে বের করা উচিত কারা সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে গেছে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত৷'' তিনি আশা করেন ফরেনার্স অ্যাক্টে যদি মামলাও হয় তাহলেও সালাহ উদ্দিন আহমেদ অব্যাহতি পাবেন৷
আযম খানের দাবি, ‘‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ তাঁকে অপহরণ, দু'মাস আটকে রাখাসহ যেসব অভিযোগ করেছেন তা তদন্তের জন্য বাংলাদেশে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক৷ তাহলেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে৷''
এদিকে ভারতে আটক সালাহ উদ্দিন আহমেদ তাঁর চিকিৎসার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন৷ এব্যাপারে ভারতের আদালতে অনুমতি চাওয়া হবে বলে জানা গেছে৷