পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, বায়োলজির পাঠ্যবইতে আমরা অনেক বিষয় ও প্রক্রিয়ার কথা পড়েছি, যা অনেকটাই এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়েই রয়েছে৷ ইউরোপে এক গবেষণা প্রকল্প সালোকসংশ্লেষণের মতো অনেক প্রক্রিয়া চোখে দেখার সুযোগ করে দিতে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
‘ফিউচার ইউরোপিয়ান রিসার্চ লেজার' বা এক্সএফইএল-এ ফ্ল্যাশ-এর উত্তরসূরির দেখা পাওয়া যায়৷ বিশাল চুম্বক পরীক্ষা করে তাতে লাগানো হচ্ছে৷ এগুলি বিশালাকার আলোর উৎসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ চুম্বকগুলিকে একেবারে নিখুঁতভাবে ক্যালিব্রেট করতে হবে, কারণ আলোর রশ্মির যথেষ্ট ঘনত্ব থাকতে হবে৷ এক মিটারের ১০ লক্ষের ভগ্নাংশ বা ন্যানোমিটার মাত্রায় একচুল বিচ্যুতি হলে চলবে না৷
পদার্থবিদ ড. ইয়ান গ্র্যুনার্ট বলেন, ‘‘যখনই কোনো ইলেকট্রন চক্রাকারে ঘোরে, তখন সে আলো বিকিরণ করে৷ অর্থাৎ আমরা যেহেতু সেটি বার বার ওয়েভড লাইনের উপর বেঁকিয়ে দিতে পারি, তাই ইলেকট্রন আগেই লেজার রশ্মিতে পরিণত হয়৷ লেজার রশ্মি হয়ে ওঠার কারণ হলো, ইলেকট্রনগুলি তাদের নিজস্ব আলোর মধ্যেই এগিয়ে চলে এবং শক্তির প্রভাব বেড়ে যায়৷''
ভবিষ্যতে এই সব অ্যাক্সিলারেটর টিউবের মধ্যে ইলেকট্রন শক্তির চার্জ ভরপূর থাকবে, যতক্ষণ না অত্যন্ত ছোট ও ঘন লেজার ফ্ল্যাশ সৃষ্টি না হয়৷ সাধারণ রশ্মির উৎসের তুলনায় কোটি কোটি গুণ ঘন হয় সেই ফ্ল্যাশ৷ এক্সএফইএল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা আলোর উৎস হতে চলেছে৷ আমাদের গ্রহের সবচেয়ে ক্ষুদ্র কাঠামো খতিয়ে দেখতে পারবে সেটি৷ জার্মানি, রাশিয়া ও ইউরোপের অন্য ১০টি দেশ ১০০ কোটি ইউরো মূল্যের এই প্রকল্পের অর্থায়ন করছে৷
সেবিটে প্রদর্শিত হচ্ছে যেসব বিস্ময়কর প্রযুক্তি
সেবিট প্রযুক্তি মেলায় কিছু কোম্পানি তাদের পণ্য এবং সেবা সম্পর্কে সবকিছু জানাচ্ছে, বাকিরা জানাচ্ছে একটু রাখঢাক রেখে৷ চলুন জেনে নেই, এবছর সাড়া জাগানো কিছু প্রযুক্তির কথা৷
ছবি: Copyright: DW/ A. Becker
পোশাক বানানোর প্রিন্টার
কারিগরি যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরিতে ইতোমধ্যে ব্যবহার শুরু হয়েছে থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার৷ আর এটা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভালোভাবেই সাহায্য করছে৷ তবে থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি পোশাকের প্রসার এখনো সেভাবে হয়নি, যদিও তা বেশ সাড়া জাগাচ্ছে, অন্তত সেবিটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
আপনার ক্ষুদ্র সংস্করণ
আপনার নিজের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি কথা ভেবেছেন কখনো? থ্রিডি স্ক্যানারের বদৌলতে এখন কিন্তু সেটা সহজেই সম্ভব৷ বিশ্বাস না হলে ছবিটাতেই দেখুন৷
ছবি: Copyright: DW/ A. Becker
বাস্তবের চেয়েও বাস্তব
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং সুইস প্রেসিডেন্ট ইয়োহান স্ন্যাইডার-আম্মান ‘রিয়েলিটি গ্লাস’ দেখছেন একটু সংশয়ের চোখে৷ এগুলো তৈরি হয়েছে চারপাশের বাস্তবতাকে আরো বাস্তব করে উপস্থাপন করতে, অর্থাৎ সঙ্গে ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য জুড়ে দিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
আস্তালা ভিস্তা, বেবি
রোবটটির নাম নক্স৷ শিল্প খাতে এটির কোনো ব্যবহার নেই৷ তবে বিনোদনের জন্য চমৎকার৷ সেবিটে আগতদের নানাভাবে চমক দিয়েছে নক্স৷ সে কিন্তু নাচতেও জানে৷
ছবি: Copyright: DW/ A. Becker
বড়দের বড় উপস্থিতি
সেবিট মেলায় ডয়চে টেলিকমের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ বড় করে তাদের প্যাভেলিয়ন সাজিয়েছে৷ সেখানে তাদের রয়েছে নিজস্ব রেস্তোরাঁ৷
ছবি: Copyright: DW/ A. Becker
বাকিদের বিনয়ী অবস্থান
সেবিটে অংশ নেয়া ৩৩০০ প্রদর্শকের অধিকাংশই কার্যত ছোট পরিসরে নিজেদের স্টল সাজিয়েছেন৷ বাংলাদেশ থেকেও এবার মেলায় হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ৷ একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও এসেছে সেদেশ থেকে৷
ছবি: Copyright: DW/ A. Becker
পুরুষের দুনিয়া!
প্রযুক্তি দুনিয়ায় নারীদের উপস্থিতি যে বাড়ানো প্রয়োজন, তা আবারো জানান দিল সেবিট৷ মেলা প্রাঙ্গনে পুরুষের তুলনায় নারীর উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷
ছবি: Copyright: DW/ A. Becker
7 ছবি1 | 7
এক্সএফইএল বিজ্ঞানের অনেক শাখাকে সমৃদ্ধ করবে৷ যেমন সেমিকন্ডাকটর পদার্থবিদ্যা, আণবিক জীববিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, রসায়ন, অ্যাসট্রোফিজিক্স ও ভূতত্ত্ব৷ অন্য অনেক বিষয় ছাড়াও বিজ্ঞানীরা নতুন ওষুধ অথবা গাড়ি ও বিমান নির্মাণের উপকরণের সন্ধান করবেন৷ এই প্রথমবার তাঁরা কোষের ভেতর থেকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবেন৷ সরাসরি দেখতে পাবেন, গাছপালা কীভাবে আলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করছে৷ ড. ইয়ান গ্র্যুনার্ট বলেন, ‘‘আমরা এমন সব বিষয় দৃশ্যমান করে তুলছি, যেগুলি শুধু মানুষ নয়, অন্য সব যন্ত্রের কাছেই অদৃশ্য রয়েছে৷ কিন্তু আমাদের জীবনযাত্রার উপর তার গভীর প্রভাব রয়েছে৷ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া একটি উদাহরণ৷ অর্থাৎ গাছপালা কীভাবে আলো গ্রহণ করে৷ গাছপালা কীভাবে লাইট কোয়ান্ট ধরে জমা রাখতে পারে, আমরা তা জানতে চাই৷''
সুড়ঙ্গটি ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ৷ প্রথম অ্যাক্সিলারেটরগুলি ভূপৃষ্ঠের ৪০ মিটার গভীরে বসানো হয়েছে৷ ২০১৭ সালে এক্সএফইএল চালু হলে ১০০টি এমন অ্যাক্সিলারেটর সক্রিয় থাকবে৷ তার যন্ত্রাংশগুলি মাইনাস ২৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঠান্ডা রাখা হয়, যাতে কোনো অপচয় ছাড়াই সেগুলি বিদ্যুৎ বহন করতে পারে৷
একই সঙ্গে একাধিক পরীক্ষার স্বার্থে রশ্মিগুলিকে ৫টি সুড়ঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ তামার থাম বাড়তি ইলেকট্রন শুষে নেয়, যাতে কিছুই বাইরে বেরোতে না পারে৷ ড. গ্র্যুনার্ট বলেন, ‘‘প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা পুরোপুরি বদলে যাবে, কারণ তখন আমরা অতি ক্ষুদ্র কাঠামোর ডাইনামিক্স-ও বুঝতে পারবো, যা এতকাল সম্ভব ছিল না৷ যেমন প্রোটিন কীভাবে প্রস্ফুটিত হয়৷ প্রকৃতিতে এই স্কেলে বিভিন্ন প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটে, তা বুঝতে গেলে এই ডাইনামিক্স অত্যন্ত জরুরি৷''
একটু আলোর জন্য
নরওয়ের একটি শহরের বাসিন্দারা বছরের ছয়মাস রোদের আলোর ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ছিলেন এতদিন৷ অভিনব এক উপায় বের করে সে সমস্যার সমাধান করেছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অন্ধকারে ছয়মাস
নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট শহর রুকন৷ মাত্র সাড়ে তিন হাজার মানুষের বাস সেখানে৷ চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা থাকায় শীতকালে সেখানে রোদ পৌঁছতে পারে না৷ ফলে বছরের অর্ধেকটা সময় (সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ) সেখানকার অধিবাসীরা রোদের দেখা পান না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শত বছর আগে
রুকনের বাসিন্দাদের জন্য আলোর ব্যবস্থা করতে প্রায় একশো বছর আগে স্যাম আয়ডে নামের এক ব্যবসায়ী একটি অভিনব পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন৷ কিন্তু প্রযুক্তির অভাবে সেটার বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না৷ তাই বিকল্প হিসেবে, বছরের ঐ সময়টা অধিবাসীরা যেন রোদ পান, তাই তাদের কেবল কার-এ করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷
ছবি: MEEK, TORE/AFP/Getty Images
বিশাল আয়না স্থাপন
স্থানীয় মার্টিন অ্যান্ডারসেন ২০০৫ সালে শত বছর আগের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন৷ এর আওতায় সমতল থেকে প্রায় সাড়ে চারশো মিটার উপরে পাহাড়ের গায়ে তিনটি বড় আয়না স্থাপন করা হয়৷ শীতকালে রোদ সেই আয়নাগুলোতে প্রতিফলিত হয়ে শহরের গায়ে ঢোলে পড়ে৷
ছবি: MEEK, TORE/AFP/Getty Images
কম্পিউটার চালিত
একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে আয়নাগুলো সূর্যের পথ বুঝে এদিক-সেদিক নড়াচড়া করে৷ এভাবে রুকন শহরের প্রায় ৬০০ বর্গমিটার এলাকায় রোদ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে৷ এজন্য খরচ হয়েছে ছয় লক্ষ ২০ হাজার ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ছয় কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা৷
ছবি: MEEK, TORE/AFP/Getty Images
ইটালিতেও একই ব্যবস্থা
রুকনের আগে আলপ্সের কাছে ইটালির একটি গ্রামে ২০০৬ সালে এই আয়নাটি বসানো হয়৷ এর ফলে ভিগানেলা গ্রামে শীতকালে রোদের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: Andreas Solaro/AFP/Getty Images
জার্মানির একটি পরিবার
জার্মানির দক্ষিণের ভিল্ডগুটাখের ছোট্ট এক গ্রামের একটি পরিবার এতদিন মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোদের দেখা পেত না৷ সে সমস্যার সমাধানে তাঁরা ২০১০ সালে ছোট্ট এই আয়নার ব্যবহার শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আশার আলো
নরওয়ের রুকনের মতো এত বেশি আলো না পেলেও জার্মানির পরিবারটি যে আলো পাচ্ছে তাতেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ছবিতে পরিবারের এই নারী সদস্যের মুখের হাসিই তার প্রমাণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ভাইরাস ও কোষের পরমাণু সম্পর্কে বিশদ তথ্যের রহস্য এখানে উন্মোচিত হবে৷ নক্ষত্রের মধ্যে কী ঘটে, তাও জানা যাবে৷ ইউরোপের এক্সএফইএল-এর চাহিদা যে তার পূর্বসূরি ফ্ল্যাশ-এর তুলনায় গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে অনেক বেড়ে যাবে, এখনই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷