সন্ত্রাস, হামলা, অপহরণ ইত্যাদি কারণে উন্নয়ন সাহায্যকর্মীদের পক্ষে বিভিন্ন দেশে কাজ করা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে৷ বিশেষ করে আফ্রিকার অনেক দেশে এই ধরনের সহিংসতা ঘটছে অহরহ৷
বিজ্ঞাপন
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে
সিরিয়াতেও কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ সিরিয়ার অনেক শহর এত বিধ্বস্ত হয়েছে যে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ ‘‘অনেক জায়গায় কেবল ধ্বংসাবশেষই দেখা যায়৷'' ২০১৩ সালের বাৎসরিক প্রতিবেদনে এই কথাই বলেন জার্মানির অন্যতম সাহায্য প্রতিষ্ঠান ‘ভেল্টহুঙারহিল্ফে'-র প্রেসিডেন্ট ব্যার্বেল ডিকমান৷ বিশ্বব্যাপী জরুরি সাহায্যে তৎপর প্রতিষ্ঠানটি৷
অনিশ্চয়তার মাঝে বেঁচে থাকা
জর্ডানের আজরাক শহরে ৩০শে এপ্রিল একটি নতুন শরণার্থী শিবির খোলা হয়েছে৷ নাম আজরাক শরণার্থী শিবির৷ এর অবস্থান আম্মান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে৷ সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন সিরিয়া থেকে আসা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী৷
আজরাক শরণার্থী শিবিরে মোটামুটি স্থায়ী একটি ভবন নির্মাণ করছেন এক শ্রমিক৷ গ্রামের আদলে গড়ে উঠছে শরণার্থী শিবিরটি৷ এটা জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ ১৫ বর্গ কিলোমটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠে এই শিবিরে আশ্রয় নিতে পারবেন ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ৷
ছবি: Hamza Eqab/Transterra Media
আশ্রয়
জর্ডানের আজরাক শরনার্থী শিবিরের নির্মাণ কাজ চলছে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের শেষ নাগাদ ৫,৩০০ ইউনিট নির্মাণ হয়েছে৷ ২৪ বর্গ মিটার আয়তনের এক-একটি আবাসের জন্য খরচ হচ্ছে ২,৬৮৩ মার্কিন ডলার৷
ছবি: Hamza Eqab/Transterra Media
সমস্যা
আজরাক শরণার্থী শিবিরের আগে আরো দুটি শরণার্থী শিবির গড়ে ওঠে জর্ডানে৷ প্রতিদিন দেশটিতে আসা ৬০০ শরণার্থী নিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে৷
ছবি: Hamza Eqab/Transterra Media
আশার কিরণ
সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা মানুষগুলো যাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি খুঁজে পান, তেমনভাবেই সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে শরনার্থী শিবিরে৷
ছবি: Hamza Eqab/Transterra Media
আজরাকের সুযোগ-সুবিধা
১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার এই আবাসস্থলটিকে চারটি গ্রামে ভাগ করা হয়েছে৷ এছাড়া রেড ক্রস দ্বারা পরিচালিত ৫০টি বিছানা বা বেড-সম্মিলিত একটি হাসপাতালও রয়েছে সেখানে৷ আর আছে দুই শিফটের কয়েকটি স্কুল৷
ছবি: Hamza Eqab/Transterra Media
স্বয়ংসম্পূর্ণ
শরণার্থী শিবিরটিতে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে৷ আছে থানা এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও৷
ছবি: Hamza Eqab/Transterra Media
খাদ্য সরবরাহ
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ বেশ কিছু সংস্থা এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করে চলেছে৷
ছবি: Hamza Eqab/Transterra Media
8 ছবি1 | 8
বিশ্বব্যাপী সমালোচিত সিরিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনও কোনো সুরাহা এনে দিতে পারবে না৷ সংকট সমাধানের কোনো লক্ষণ সেখানে দেখা যাচ্ছে না৷ ‘‘কেননা বিবদমান দলগুলি একেবারেই কাছাকাছি আসতে চাইছে না'', বলেন ডিকমান৷
গত বছর চরম মানবিক সংকটের মধ্যে কাটাতে হয়েছে সিরিয়ার মানুষকে৷ ‘ভেল্টহুঙারহিল্ফে' নামক এই জার্মান এনজিও-টির মোবাইল সাহায্য টিমকে প্রায় সবসময় সাহায্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে৷ ‘‘প্রায় প্রতিমাসেই সংকট লেগে ছিল৷'' জানান সাহায্য প্রতিষ্ঠানটির জেনারাল সেক্রেটারি ভল্ফগাং ইয়ামান৷
উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
এইসব সংকটের কারণে সংস্থাটির পক্ষে স্থায়ীভাবে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা করা সম্ভব হচ্ছে না৷ সাহায্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কর্মী পাওয়াও মুস্কিল হচ্ছে৷ অনেক এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ উন্নয়ন সাহায্য কর্মীরা অপহরণ ও হামলার শিকার হচ্ছেন৷ বিশেষ করে সাহারার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলিতে কাজ করা বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে৷ সারা অঞ্চলজুড়ে বিরাজ করছে যুদ্ধংদেহী অবস্থা৷ নানা ধরনের চরমপন্থার বিস্তৃতি ঘটছে৷ এভাবেই বলেন ইয়ামান৷
এছাড়া লেবাননের অনেক প্রাক্তন সেনা ও বেতনভোগী যোদ্ধা আল-কায়েদা ও অন্যান্য চরমপন্থি গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন৷ এই ধরনের পরিবেশে দুঃস্থ মানুষদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায় দক্ষিণ সুদানের কথা৷
সিরিয়ার নারী যোদ্ধাদের কথা
সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে শুরু করেছেন নারীরাও৷ আলেপ্পোর সালাউদ্দিন এলাকায় গড়ে উঠেছে নারী যোদ্ধা দল ‘‘আল-মোউমিনিনি আয়েশা’’৷ মূলত সরকারি বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া এই নারীদের নিয়েই আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Transterra
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত
ছবির এই নারী যোদ্ধার বয়স মাত্র ১৭ বছর৷ নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষায় আরো ১২ জনের সঙ্গে মিলে ‘‘উম আল-মোউমিনিনি আয়েশা’’ সেনাদল গড়ে তুলেছেন তিনি৷ আলেপ্পোর কাছে সালাউদ্দিন এলাকায় তাদের অবস্থান৷
ছবি: Transterra
স্থির লক্ষ্য
সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে প্রতিরোধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন এই নারী৷ লক্ষ্য একটাই, যে কোনো মূল্যে সেনাবাহিনীর আক্রমণ থেকে নিজের এলাকা রক্ষা করা৷
ছবি: Transterra
প্রস্তুতি
‘‘উম আল-মোউমিনিনি আয়েশা’’ সেনাদলের সকল সদস্যকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন আবু দিব৷ এসব অস্ত্র তারা সরকারি সেনাদের প্রতিরোধে ব্যবহার করবেন৷
ছবি: Transterra
যুদ্ধের প্রশিক্ষণ
নারী যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ছবি এটি৷ আলেপ্পোয় যুদ্ধ চলাকালে রাইফেল ব্যবহারের উপায় দেখানো হচ্ছে এতে৷ এক নারী সেনা তাঁর সহযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন৷
ছবি: Transterra
মুখোমুখি লড়াই
একেবারে মুখোমুখি লড়াইয়ের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন এই নারী সেনারা৷ কালাশনিকভ রাইফেলের সঙ্গে বেয়নেট জুড়ে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন তাঁরা৷
ছবি: Transterra
নিশানা চর্চা
নিশানাবাজ বন্দুকধারী হিসেবেও কাজ করার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ‘‘উম আল-মোউমিনিনি আয়েশা’’ দলের সদস্যরা৷ ছবিতে সেদলের প্রধান একটি স্নিপার রাইফেল থেকে গুলি করার চর্চা করছেন৷
ছবি: Transterra
যুদ্ধের সীমানা
নারী সেনারা সালাউদ্দিনে সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের দখলকৃত এলাকার মধ্যকার সীমানায় নির্ধারণ করছেন৷ এভাবে তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে হাজির থাকেন৷
ছবি: Transterra
মুখোশের আড়ালে
সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে অ্যাক্টিভিস্টে রূপ নেওয়া এই নারী সিরিয়ার সরকারি সেনাদলের হাত থেকে নিজেকে এবং তাঁর এলাকাকে রক্ষায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন৷
ছবি: Transterra
জানতে আগ্রহী
বিভিন্ন অস্ত্র এবং যুদ্ধ উপকরণ ব্যবহার কাছে থেকে দেখছেন তিন নারী যোদ্ধা৷ ফ্রি সিরিয়ান আর্মি তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷
ছবি: Transterra
নিশানা নির্ধারণ
ছবির নারী যোদ্ধা তাঁর নিশানা ঠিক করছেন৷ এ জন্য স্নাইপার রাইফেলের উপরে থাকা লেন্স ব্যবহার করে লক্ষ্য স্থির করছেন তিনি৷
ছবি: Transterra
10 ছবি1 | 10
বাড়িঘর ছাড়া হচ্ছেন বহু মানুষ
‘ভেল্টহুঙারহিল্ফে' জানিয়েছে, দেশটিতে ক্রমাগত সংঘর্ষের কারণে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন৷ কোনো কোনো অঞ্চলে আবার শুধু হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সাহায্য সামগ্রী নিক্ষেপ করতে হয়, জানান ডিকমান৷
পাকা রাস্তার অভাবে কাজ করতে আরো অসুবিধা হয় বর্ষাকালে৷ ডিকমান আশঙ্কা করেন, এইভাবে যুদ্ধ চলতে থাকলে চাষিরা কৃষিখেতে কাজ করতে পারবেন না৷ এরফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷ এ কারণে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আফ্রিকা ইউনিয়নের প্রতি সংঘর্ষ বন্ধ করার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানান৷ তাঁর মতে, এই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে সবারই আগ্রহ থাকা উচিত৷ এই ধরনের সহিংসতা গোটা অঞ্চলে তো বটেই অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ যেমন হঠাৎ করে হামলা ঘটলো কেনিয়ায়৷
জরুরি সাহায্য প্রকল্প
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিদেশ দপ্তরের মতো বিভিন্ন ইন্সটিটিউশন এবং ব্যক্তিগত চাঁদার অর্থে চলে ‘ভেল্টহুঙারহিল্ফে'-র কাজকর্ম৷ গত বছর সব মিলিয়ে ১৪০ মিলিয়ন ইউরো বিদেশের প্রকল্পগুলির কাজে ব্যয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ফিলিপাইন্সে৷